সারাদেশ

আহলে হাদিসদের মাদ্রাসা ভেঙে দিলো কওমি সমর্থকরা

ফরিদপুরে কওমি সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি আহলে হাদিস মাদ্রাসায় ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। ১৮ নভেম্বর বুধবার সকাল ১০ টার দিকে সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে ।

তবে কওমী মাদ্রাসার সমর্থকরা এ হামলার সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে সালথা-নগরকান্দা সড়কের পাশে ভাওয়াল ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামে আহলে হাদীসের ওই মাদ্রাসটি স্থাপিত হয়। দুটি টিনের বড় আকৃতির ঘরে এ মাদ্রাসাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ মাদ্রাসায় পুরুষ ও নারীরা আবাসিক ভাবে বসবাস করে পড়াশোনা করে।

এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ মাদ্রাসাটি ভেঙ্গে জ্বালিয়ে দেয়া হবে বলে স্থানীয় কওমী মাদ্রাসার পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার এলাকায় মাইকিং করা হয়। এতে আহলে হাদীস সমর্থকরা আতংকিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে মঙ্গলবার বিষযটি জানান।

ইউএনও তাদের ও কওমী মাদ্রাসার নেতাদের তার কার্যালয়ে ডেকে নেন মঙ্গলবার বিকেলে। ইউএনও বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা করে বিরোধের সমাধান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। ওই সময় পর্যন্ত ইউএনও দুই পক্ষকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার পরামর্শ দেন। রাতে আহলে হাদীস মাদ্রাসায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

আহলে হাদীস মাদ্রাসার পরিচালক ইলিয়াস হোসেন জানান, বুধবার সকালে দুই/তিনশ লোক আহলে হাদীস মাদ্রাসায় হামলা চালায়। ওই সময় মাদ্রাসায় ৩৫জন নিবাসী ও চারজন শিক্ষক ছিলেন। হামলাকারীদের ভয়ে তারা মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর হামলাকারিরা মাদ্রসার দুটি ঘর ভাংচুর করে। হামলাকারীরা ১৪টি সিলিং ফ্যান, একটি সৌর বিদ্যুতের সোলারসহ নিবাসীদের যাবতীয় মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়। এতে তাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

ইলিয়াস হোসেন আরও বলেন, পুলিশের সামনেই মাদ্রাসায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের তুলনায় পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় পুলিশ চেষ্টা করেও হামলাকারীদের প্রতিহত করতে পারেনি। পরে পুলিশের সামনেই এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

সালথা হেফাজতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জিন্নাত বলেন, ইউএনওর প্রতিশ্রæতি মতো ১৮ নভেম্বর বুধবার ভোরেই তিনি উপজেলা হেফাজতের সভাপতি নিজামউদ্দীনসহ কওমী মাদ্রাসার নেতারা উপজেলায় চলে যান। পরে জানতে পারেন কওমী মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলামকে আহলে অহাদীদের সমর্থকরা বেদম মারপিট করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়ে আহলে হাদীস মাদ্রাসায় এ হামলা চালিয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় কওমীপন্থীদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কওমিপন্থী শিক্ষক ও আহলে হাদীস শিক্ষকের নিয়ে এলাকায় বিরোধ চলছিল। এ বিরোধ নিরসনে বুধবার সকাল ১০টায় দুই পক্ষকে নিয়ে উপজেলা পরিষদে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু কওমীপন্থী একটি অংশ উপজেলায় এলেও অপর অংশ ওই মাদ্রসায় হামলা চালিয়ে এ ভাঙচুর করে। তিনি বলেন, কারা এ হামলার সাথে জড়িত তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, হামলার ঘটনা শোনার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ওই মাদ্রাসায় যে ৩৫জন নিবাসী ছিল তাদের সকলকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারা এ হামলার সাথে জড়িত ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ১৮ নভেম্বর ২০২০

Share