চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ফরিদগঞ্জে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে পরকীয়া। আর সেই ঘটনার জের ধরে দিন দিন বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা। এ হার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পারিবারিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে। পিতা-মাতা থাকতেও এতিম হচ্ছে বিচ্ছেদ হওয়া পরিবারের সন্তানরা। অযত্নে আর অবহেলায় বেড়ে উঠছে তারা। বিচ্ছেদ হওয়া পিতা-মাতার সন্তানের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
গত দু’বছর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পরকীয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। পৌর এলাকায় গত ক’ বছর পূর্বে বছরে ১৫-২০টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা থাকলেও চলতি বছরের ৮ মাসে ৪২টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছেলে-মেয়ে উভয়ের সম্মতিতে খোলা তালাক হয়েছে ৩০টি এবং স্ত্রী কর্তৃক স্বামী তালাক হয়েছে ১২টি। এ হিসেব শুধু পৌর এলাকার। এছাড়া প্রতিনিয়ত উপজেলার বাকি ১৫টি ইউনিয়নে ঘটছে অসংখ্য বিবাহ বিচ্ছেদ।
প্রবাসী অধু্যষিত এ উপজেলায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোবাইলে পরকীয়া প্রেম, যৌতুক, প্রেমের বিয়ে ও বাল্য বিয়েই এর জন্য অন্যতম দায়ী।
বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে জরিমানার বিধান থাকলেও শাস্তির বিধান না থাকাতে অনেকে সামান্য কারণেও বউ তালাক দিতে কোনো কার্পণ্যবোধ করছেন না। এছাড়া স্ত্রীদের যে কোনো সময় স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার অবারিত সুযোগ থাকায় স্ত্রীরা পরকীয়া প্রেমের টানে যেকোনো সময় বিনা বাধায় স্বামী-সংসার ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া ধর্মীয় অনুশাসন না মানার কারণে তালাকের পরিমাণ ব্যাপকহারে বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিমত সচেতন মহলের।
সমপ্রতি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক তার স্ত্রীকে দুটি শিশু সন্তানসহ তালাক দিয়ে বিদায় করে দেয়।
জানা যায়, তাদের মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় ও বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের বিয়ে পরিবারের সদস্যরা মেনে না নেয়ায় পিতা-মাতার চাপে স্ত্রীকে তালাক দেয় ফারুক। শাহীবাজারে একটি তালাকের ঘটনা ঘটে পরকীয়াকে কেন্দ্র করে।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার বিবাহ রেজিস্ট্রার এমরান হোসাইন বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বিবাহ বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক বেশি। এটি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার প্রতিটি মসজিদের ইমামদের চিঠি প্রেরণ করা হচ্ছে। যেনো তালাকের প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে ইমামরা প্রতিটি খুতবায় বয়ান করেন।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মঞ্জিল হোসেন বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে জেল জরিমানার বিধান রেখে সরকারকে আইন তৈরি করতে হবে। অনেকে সামান্য বিষয় নিয়ে বউ তালাক দিচ্ছে। বর্তমানে তালাক জটিলতা আদালতে নিষ্পতি হয় কাবিননামার দুই-তৃতীয়াংশ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে। তাই আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে তালাক প্রদানকারীর বিরুদ্ধে জেল ও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হলে বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে সহায়ক হবে। এ ছাড়া মানুষের নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা জরুরি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে বাল্য বিয়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তিনি এ ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন।