২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ের দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া। যার সৃত্রে ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যুর হয়েছে।
এছাড়া মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বাদী হয়ে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫ হাজার জনকে। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ১৩০ জন আসামী। এদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত কেউ জামিন পায়নি বলে জানাযায়।
হামলা মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত একাধিক টিম তদন্ত করতে দেখা যায়। বর্তমানে পুলিশের বাহিরে পিবিআই, ডিভি ও সিআইডির তদন্তে চলমান। আলোচিত এ ঘটনা এখন পর্যন্ত পুরো উপজেলায় আকঙ্ক বিরজমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত (১৩ অক্টোবর) রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। হাজীগঞ্জ বাজারে ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতার শান্তিপূর্ণ ব্যানারে কিছু সংর্ঘবদ্ধ লোক যোগদিয়ে মন্দিরে হামলা চালায়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় পুলিশ। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে তিন জন, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর একজন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনসহ মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তাছাড়া সংঘর্ষে ২১ জন পুলিশ, ২ জন সাংবাদিকসহ অধ্যশত জনতা আহত হয়। তখন এ ৫ মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন চট্রগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) পিপিএম (বার)।
নিহতরা হলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের আলআমিন (১৮), উপজেলার রান্ধুনীমুড়া সেকান্দার আলী বেপারী বাড়ির ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে ইয়াছিন হোসেন হৃদয় (১৫), চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকার বাবলু (২৮) ও পরের দিন বৃহস্পতিবার চিকিৎসারত অবস্থায় পৌরসভার রান্ধুনীমুড়া গ্রামের আব্বাস মিয়ার ছেলে শামীম হোসেন (১৮) মৃত্যুবরণ করেন। বি-বাড়িয়ার জেলার জনি (২২)।
সেই দিন ১৩ অক্টোবর বুধবার রাত ১২ টা পরবর্তী ৩ দিন পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনা আক্তার। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেট ।
সেই সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী মানিক হোসেন, জনি ও দেলোয়ার জানায়, ঘটনার রাত এশার নামাজের পর হাজীগঞ্জ বিশ্বরোড চৌরাস্তা এলাকা থেকে স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি হাজীগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়কে দু’বার প্রদক্ষিণ শেষে ৩য় বার বাজারের পূর্ব দিকে যাওয়ার পথে হঠাৎ মিছিল থেকে লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া (ত্রীনয়নী) পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়। পরে পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
বিক্ষোভকারীরা পরে প্রায় ৮ টি মন্দিরে হামলা চালায়। জিউর আখড়া, নবদূর্গা, ত্রিশুল, ত্রী নয়নী, জমিদার বাড়ি মন্দির এবং বলাখাল ও রামপুর এলাকার মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বর্তমান বিষয়ে বলেন, মন্দির হামলার ঘটনায় ১০ মামলা প্রায় ৫ হাজার আসামীর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩০ জনের মত আসামী আটক হয়েছে। পুলিশের বাহিরে পিবিআই, ডিভি, সিআইডির তদন্তে চলমান। এরই মধ্যে চার্জশীট তৈরি পক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১