নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আ’লীগ, বিএনপি কী ভাবছে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলীয় নেতা কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷ বিষয়টিকে বিএনপি কীভাবে দেখছে?
প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য কোনো জনসভায় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেননি৷ বলেছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে৷ বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার৷ সেখান থেকে বের হয়ে নেতাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর ওই পরামর্শের কথা সংবাদমাধ্যমকে জনিয়েছেন৷-ডয়চে ভেলে।
জানা গেছে, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এমপিদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের আর মাত্র দু’বছর তিন মাস বাকি আছে৷ তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে৷” এ জন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি৷
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সজাগ ও সতর্ক থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এ সব কমিটিকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে৷ সর্বত্র এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷”
প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় এটা স্পষ্ট যে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি৷ তিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষের নির্বাচনের কথাই বলেছেন৷ তবে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন হবে পাঁচ বছরের মেয়াদের শেষ তিনমাসের মধ্যে৷
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৷ তখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়৷ ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে তারা ৩০টি আসন পেয়ে ক্ষমতা হারায়৷ আর ২৩০টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে৷
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হলে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি৷ ওই নির্বাচনে ২৩৪ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফা সরকার গঠন করে৷ আর জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন পেয়ে বিরোধী দলে পরিণত হয়৷ বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়৷ নির্বাচন বর্জন করায় সংসদের বিরোধী দলের অবস্থানও হারায় তারা৷
তবে তারপর বিএনপি স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে৷ সেসব নির্বাচনেও তারা প্রাধান্য অর্জন করতে পারেনি৷ আওয়ামী লীগই প্রাধান্য বজায় রেখেছে৷
২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর সরকারের ওপর মধ্যতর্বী নির্বাচনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে বিএনপি৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব দলের অংশগ্রহণে নতুন একটি নির্বাচনের কথা বলতে থাকে৷ কিন্তু এরইমধ্যে এই সরকারের প্রায় আড়াই বছর, অর্থাৎ অর্ধেক মেয়াদ পার হয়ে গেছে৷ মেয়াদ শেষে যদি নির্বাচন হয়, তা হবে ২০১৯ সালে৷
তবে বিএনপির নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এখন তাদের দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে৷ তারা আন্দোলনে নেই৷ যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং সর্বশেষ গুলশান হামলার পর বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তনের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে৷
বিএনপির একটি অংশ চাইছে জামায়াতকে জোটের বাইরে রেখে সুবিধা নিতে৷ আর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ডিত হওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে দলটি৷ তারেক রহমান দেশে ফিরে আপিল না করলে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না৷ বিএনপির সর্বশেষ কার্যকরী পরিষদ গঠন করার পর তা নিয়ে দলে আছে নানা অসন্তোষ৷
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু আড়াই বছর হয়ে গেলেও সেই নির্বাচন হয়নি৷ আমরা মনে করি, দ্রুত নির্বাচন দেয়া উচিত, কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ কিন্তু সেটা মেয়াদ শেষের নির্বাচন৷ আমরা চাই এখনই নির্বাচন হোক এবং তার জন্য বিএনপি প্রস্তুত আছে৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন যখনই হোক তা হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে৷ কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না৷”
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন৷ তারা মনে করেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ইতিমধ্যে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো জনগণের ভেতরে আস্থা-বিশ্বাস
সৃষ্টি করেছে৷ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে আওয়ামী লীগ৷ এর ভেতর দিয়ে একটি ম্যাসেজ পেয়েছে আওয়ামী লীগ, তা হলো, সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেকগুন৷ এই মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ ৬০-৭০ ভাগ আসনে জয়ী হবে বলে মনে করে ক্ষমতাসীনরা৷ তাই নির্বাচনের জন্যে জোরালো কোনো দাবি উত্থাপন করা হলে এই হিসাবে নির্বাচনের পথে পা বাড়াতেও পারে দলটি৷
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, জঙ্গি ইস্যু যেভাবে সরকার মোকাবেলা করেছে তাতে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন ঊর্ধমুখী৷ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এগিয়েছে৷ এই ধারাবহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনের ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে৷ আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী সকল নেতা-কর্মীকে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে বলেছেন৷
গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন শেখা হাসিনা৷ সেই সভায় উপস্থিত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ শেষের নির্বাচনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ আগাম বা মধ্যবর্তী কোনো নির্বাচনের কথা তিনি বলেননি৷ দেশে এমন কোনো সংকট হয়নি যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন হবে৷ আর মেয়াদ শেষে সেই নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী৷ সংবিধানের বাইরে কোনো ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হবে না৷ আমরা চাই এবং আশা করি সব দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে৷”
আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতা আরো বলেন, ‘‘দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন হবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে৷ আমরা আগে বলেছি, এখনো বলছি৷ বিএনপি আগের নির্বাচনি ট্রেন মিস করেছে৷ এবার আশা করি মিস করবে না৷ আমরা চাইলে সবাই মিলে নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে পারি৷ সবাই মিলে আরো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারি৷ কিন্তু পুরনো চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷”(প্রাইমনিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:০৫ পি,এম ২৩ আগস্ট ২০১৬,মঙ্গলবার
ইব্রাহীম জুয়েল