খেলাধুলা

আর্জেন্টিনার আরেক ফাইনাল

আইসল্যান্ড প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই রূপকথার জন্ম দিল। আর্জেন্টিনাকে রুখে দিল ১-১ গোলে। এই ড্র তাদের কাছে জয়ের চেয়েও বেশি কিছু। আর আর্জেন্টিনার কাছে ছিল চরম পরাজয়। বিশেষ করে লিওনেল মেসির কাছে। পেনাল্টি মিসের যন্ত্রণায় এখনো নিশ্চয়ই কাতর তিনি! বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে এই ভুল যে ক্ষমার অযোগ্য। তবে আর্জেন্টাইনরা এতটা নির্দয় নয়। তারা মেসিকে ক্ষমা করে দিয়েছে। শেষটায় মেসির কাছেই যে তাদের ধরনা দিতে হয়। এই মেসি তো জাতীয় দলটাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর্জেন্টাইনরা বহু দেনদরবার করে তাকে ফিরিয়ে এনেছে। সেই মেসি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ভক্তদের হতাশ করেছেন।

আজ আবার মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা। এবার কী! প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। মেসির সতীর্থ আইভান রাকিটিচের দল। লুকা মডরিচের দল। প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে এগিয়ে আছে ক্রোটরা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় না হলেও একটা পয়েন্ট পেলেই চলবে। নকআউট পর্ব অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে ক্রোয়েশিয়ার। তাহলে মেসিদের কী হবে! নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার জন্য জয়ের বিকল্প নেই মেসিদের। ক্রোটদের হারিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর্জেন্টিনার কাছে ম্যাচটা অনেকটা ফাইনালের মতোই। হারলেই বিদায়ঘণ্টা প্রায় বেজে যাবে। মেসি ভক্তদের প্রশ্ন একটাই— পারবে কি আর্জেন্টিনা। সেন্ট পিটার্সবার্গেও আর্জেন্টিনার ম্যাচ আছে। ২৬ জুন, নাইজেরিয়া। সম্ভবত এ কারণেই নিঝনি নভগরদ বাদ দিয়ে অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক এখন সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে এসেছেন। এই শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তারা। গতকাল পিটার দি গ্রেটের রাজপ্রাসাদ ‘পিটার হফ’ দেখতে এসেছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের বিশাল একটা দল। তারা প্রাসাদের পাশের পার্কে উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছিল। ‘ভামোস, আর্জেন্টিনা’ কোরাস গেয়ে উঠছিল। ওদের কাছাকাছি যেতেই কোরাসের সুর বাড়িয়ে দিল। গলায় কার্ড ঝুলানো কয়েকজনকে দেখে যেন তাদের উন্মাদনা বেড়ে গেল। লিওনেল মেসিরা ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করবে, এই বিশ্বাস আর্জেন্টাইনদের। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে যে ভুল করেছিলেন মেসি তা শোধরে নেবেন আজ।

আর্জেন্টাইনদের এমন বিশ্বাস কি ভাঙতে পারেন মেসি! তিনি তাই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবেন নিঝনি নভগরদে। তবে ভিন্ন প্রসঙ্গও আছে। বিশ্বকাপের আগে যে কয়টা দলকে ফেবারিট ভাবা হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম আর্জেন্টিনা। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই হতাশ করেছে তারা। সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপার ছাড়াও আলবেসিলেস্তদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষায় আছে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারলে যে গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিতে হতে পারে! মেসির দলের জন্য এটা তো ভয়ঙ্কর অপমান। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্তের সঙ্গে চরম বেইমানি। মেসিদের তাই আজ কেবল গ্রুপ পর্বের সাধারণ একটা ম্যাচ নয়, ফাইনাল ম্যাচ। জিতলেই নকআউট পর্ব। মেসিরা নকআউট পর্ব নিশ্চিত করবে এই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সেন্ট পিটার্সবার্গও। কেবল আর্জেন্টিনা নয়, ব্রাজিলেরও একই অবস্থা। আগামীকালই সেন্ট পিটার্সবার্গে খেলতে নামবে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ কোস্টারিকা। প্রথম ম্যাচে সুইসদের সঙ্গে ড্র করে বিপদে আছেন নেইমাররাও। আর্জেন্টিনার মতো ব্রাজিল ভক্তরাও চাইছেন কোস্টারিকা ম্যাচ জিতে নকআউট পর্বটা আগে নিশ্চিত করুক সিলেকাওরা। আর্জেন্টিনার ম্যাচ সেন্ট পিটার্সবার্গে দিনকয়েক পর। ব্রাজিলের ম্যাচ ঘিরেই এখন উন্মাদনা এখানে।

মেসিকে ঘিরেই ছক এঁকেছেন কোচ : পেনাল্টি থেকে লিওনেল মেসি গোল করতে পারলে আর্জেন্টিনা জিতেই মাঠ ছাড়তে পারত। কিন্তু তা আর হয়নি, দুর্বল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তাতে কি, মেসির ওপর আস্থা কি কমে গেছে! না মেসি মেসিই, ওর সঙ্গে দলের কারও তুলনা চলে না। আজ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। নকআউট পর্বে যেতে হলে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে। হারলেতো প্রায় বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে। ড্র করলেও পথ কঠিন হয়ে যাবে। কোচ হোর্হে সাম্পাওলি ভালোমতো জানেন বিশ্বকাপ জিততে এসে দল যদি গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় তাহলে তার কপালে কেমন তিরস্কার জুটতে পারে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নতুন ছক এঁকেছেন তিনি মেসিকে ঘিরেই। প্রতিটি বিষয় ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন মেসির সঙ্গে। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেদিকে সতর্ক কোচ। মেসি কখন কোন পজিশনে থাকবে বা তাকে সতীর্থরা কিভাবে সহযোগিতা করবে তার ছক এঁকেই শিষ্যদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন সাম্পাওলি। বয়সের কারণে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা সেভাবে খেলতে পারছেন না। প্রতিপক্ষের কাউন্টার অ্যাটাক ঠেকানোর কৌশলও ঠিক করে রেখেছেন কোচ। সেরা একাদশে কারা থাকবেন এটাও মেসির সঙ্গে আলাপ করেই দল সাজানো হচ্ছে। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে কোনোভাবে ম্যাচ যেন হাত ছাড়া না হয়ে যায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা।

Share