“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক,ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’য়াতা, লাকা ওয়াল মুল্ক,লা-শারীকা লাক্”।
মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ.) এর আহবানে সাড়া দিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ব্যালটি এবং নন-ব্যালটি ব্যবস্থাপনায় হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর মেহমানগণ মক্কায় যাচ্ছেন।
ইসলামে বিত্তবানদের জন্য হজ্জ নামক অতীব চমৎকার এক ইবাদতের বিধান রয়েছে। বিত্তবানদের হাতে বছরের পর বছর হজ্জ সফরের ব্যয়-ভার বহনের মত অর্থ সম্পদ থাকলেও আল্লাহ তা’য়ালা সারা জীবনে একবার হজ্জ ফরজ করেছেন।
পৃথিবীর সকল দেশের মানুষ যখন হজ্জের জন্য যিলহজ্জ মাসে মক্কাতে সমবেত হয়, তখন মনে হয় হজ্জ পৃথিবীর মুসলিমদের এক মহাসম্মেলন। হজ্জ পৃথিবীর অগণিত ভাষাভাষী মানুষের ভাষার বাঁধ ভেঙ্গে ফেলে। সাদা,কালো,কিংবা বাদামী রঙ্গের মানুষের দেহে জুড়ে দেয় পবিত্রতার প্রতীক শুভ্র পোষাক। বিচিত্র দৈহিক রঙ চাপিয়ে শুভ্র রঙের বাহারি বিকাশে এক অনুপম শোভা সৃষ্টি করে।
এশিয়া, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ও আমেরিকা থেকে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কন্ঠে উচ্চারিত হয় একটি ধ্বনি “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”। লাখো কণ্ঠে উচ্চরিত এ বুলন্ধ আওয়াজ বাতাসে ঢেউ তুলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।
কাবাকে ঘিরে মানুষের শ্র্রোত খরশ্রোতা নদীর অপ্রতিরোধ্যতাকেও হার মানায়। ক্ষমা করে দাও, কাছে টেনে নাও, সকলের মনের এ আকুতি তুলনাহীন। মিনায় তাবু জীবন, আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থান, মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করে আবার মিনাতে প্রত্যাবর্তন,জামরাতে কংকর নিক্ষেপ, মিনাতে পশু কুরবানী পুনরায় কাবার তাওয়াফ ইত্যাদি কর্মকান্ড নির্দিষ্ট ক’টি দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করা কোনো চৌকস সেনাবাহিনীর সামরিক মহড়ার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বড় রকমের আর্থিক কুরবাণী,দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি,রকমারি বিড়ম্বনা, রোদের প্রখরতা, পিপাসার প্রচন্ডতা আল্লাহ প্রেমে বিভোর মানুষগুলোর কাছে সব কিছুই তুচ্ছ বিবেচিত হয়। আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা.) এর শিখানো ভাষায় আল্লাহর সাথে অবিরাম কথা বলে।
মক্কা থেকে উত্তরে অবস্থিত মদীনা-মুনাওয়ারা। এটি ছিল নবিজী (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী। তিনি মসজিদে নববীতে বসে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতেন।
হজ্জে আগত মেহমানগণ মদিনাতে এসে মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার অপূর্ব সুযোগ গ্রহণ করেন। তদুপরি এ মসজিদের গা ঘেঁষে অবস্থিত নবিজী (সা.) এর কবর। মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করে রাসুল (সা.) এর কবরের সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে সালাত ও সালাম পেশ করেন।
খেলাফায়ে রাশেদ্বীনের শাসনকালে হজ্জের সময়ে ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে নিযুক্ত গর্ভণরগণ হজ্জ শেষে মদীনায় এসে আমিরুল মুমিনীনের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। শাষিত অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে অবহিত করতেন এবং তাঁর নির্দেশনা নিয়ে স্ব -স্ব কর্মস্থলে ফিরে যেতেন।
যদিও আজ মুসলিমগণ একটি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং একটি শাসন ব্যবস্থার অধীনে নয় তথাপিও আজকের দিনেও মুসলিম দেশগুলোর সরকার প্রধানগণ হজ্জ উপলেক্ষ মক্কায় ও মদিনায় একত্রিত হয়ে মতবিনিময় করতে পারেন এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেরা ফায়দা হাছিল করতে পারেন।
এ নিরিখে বিচার করলে হজ্জ পৃথিবীর মুসলিম দেশ গুলোর সরকার প্রধানদের বাৎসরিক সম্মেলনের এক মহা সুযোগ এনে দেয়। হজ্জের বহু মাত্রিক কল্যাণের মধ্যে এটি একটি,যার প্রভাব অনিবার্য সূদুরপ্রসারী। হজ্জ যেন মুমিনদের ঈমানের নবায়ন অপূর্ব এক উদ্দীপনায় উজ্জীবিত করে তোলে।
পৃথিবীর সব কিছু থেকে নি:সম্পর্ক হয়ে শুধু আল্লাহমুখী হওয়ার এক অনুপম প্রক্রিয়া হচ্ছে হজ্জ। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হয়ে একজন মু’মিন সদ্যজাত শিশুর মত পবিত্র হয়ে ঘরে ফিরেন। এ জন্যই মহানবী (সা.) হজ্জ পালনের জন্য মু’মিনদেরকে উৎসাহিত করেছেন। আসুন, আমরা হজ্জের শিক্ষাকে বাস্তবরূপ দিয়ে মুসলিম ঐক্যকে আরো সূদৃঢ় করি-আমিন।
লেখক- মাও. শামছুদ্দিন
।।আপডটে, বাংলাদশে সময় ০১:৫৬ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ