প্রশ্ন:—
আমি এক ব্যক্তিকে আযানের আগে বা পরে মাইকে জিকির করতে শুনেছি , কখনো কখনো আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ বলতেও শুনেছি । তার উদ্দেশ্য একদিকে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা অন্যদিকে এলাকা গোমরারমকরা। উল্লেখ্য উক্ত আমলটি মাঝে মাঝে করা হয় বলে আমি শুনেছি। উক্ত প্রসঙ্গে শরীয়তের হুকুম কি বা জায়েয নাজায়েযের বিধান কি ?
জবাব :— ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
আযানের আগে বা পরে জিকির করা আযানের অংশ মনে করে করা বেদআত। আক্বিদা ঠিক রেখে এমনিতে কখনো করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু একে অভ্যাসে পরিণত করা বৈধ নয়।
কারণ আযানের আগে বা পরে আল্লাহু আকবার বলে জিকির করার কথা কোন হাদিস বা সাহাবায়ে কিরাম এবং সালাফে সালেহীন কারো থেকে প্রমাণিত নয়। তাই একে অভ্যাসে পরিণত করে করাটা সুষ্পষ্ট বিদআত হবে।
সুতরাং তা পরিত্যাজ্য। মানুষকে সজাগ সচেতন করার ইচ্ছে হলে আজানইতো যথেষ্ট। কারণ আযানই হল ই’লান বা ঘোষণা যে, নামাযের সময় হয়েগেছে। সুতরাং এখানে নতুন করে কিছু বাড়ানোর তো কোন দরকার নেই। তদ্রুপ সালাত ও সালাম।
দলিল:
ﻓﻰ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ- ﻭﺃﺷﺎﺭ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻟﻤﻜﻲ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ- ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗﺒﻞ ﺍﻷﺫﺍﻥ ﻟﻴﺴﺖ ﺳﻨﺔ ﻓﻤﻦ ﺃﺗﻰ ﺫﻟﻚ ﻣﻌﺘﻘﺪﺍً ﺳﻨﻴﺘﻪ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻤﺤﻞ ﺍﻟﻤﺨﺼﻮﺹ ﻧﻬﻲ ﻋﻨﻪ ﻭﻣﻨﻊ ﻣﻨﻪ ﻷﻧﻪ ﺗﺸﺮﻳﻊ ﺑﻐﻴﺮ ﺩﻟﻴﻞ ﻭﻣﻦ ﺷﺮﻉ ﺑﻼ ﺩﻟﻴﻞ ﻳﺰﺟﺮ ﻋﻦ ﺫﻟﻚ ﻭﻳﻨﻬﻰ ﻋﻨﻪ (
ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ 1/131
অনুবাদ, আল-ফাতওয়াল কোবরা কিতাবে (১/১৩১) লেখা আছে, হযরত শায়খ ইবনে হাজার মাক্কী রহঃ [ মৃত ৯৭৪ হিজরী ] তিনি আজানের পূর্বে (মাইকে বা মাইক ব্যতীত) নবীপাক (সা.)-এর উপর সালাত ও সালাম প্রদর্শনের প্রতি ইংগিত করে বলেছেন, ইহা সুন্নাত নয়। অতএব যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ইহা সংঘটিত করে আর বিশ্বাস করে যে, ইহা এ নির্দিষ্ট স্থানটির জন্য বিধিবদ্ধ-তাকে (এ রকম সালাত ও সালাম প্রদর্শন করা হতে) নিষেধ করবে ও রুখে দেবে। কেননা ইহা বিনা দলিলে প্রবর্তন করা হয়েছে। যে ব্যক্তি (ইসলামের নামে) বিনা দলিলে (কোনো আমল) প্রবর্তন করে, তাকে তিরস্কার করতে হবে এবং তাকে তা হতে রুখে দিতে হবে।”
উপরিউক্ত ফাতওয়ার কিতাবে (১/১২৯) আরো লেখা আছে, و ما ذالك الا لقبح ما فعل ( হযরত শায়খ ইবনে হাজার মাক্কী রহঃ [ মৃত ৯৭৪ হিজরী ] তিনি লিখেছেন “ইহা অত্যন্ত মন্দ আমল”) ।
ইসলামের নামে নব উদ্ভাবিত যে কোনো আমল বা আকিদা বিদয়াত ও পরিত্যাজ্য। দলিল –
) ﻭﻓﻰ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻳﻌﻘﻮﺏ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ( ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ (
ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ- ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻠﺢ، ﺑﺎﺏ ﺇﺫﺍ ﺍﺻﻄﻠﺤﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺻﻠﺢ ﺟﻮﺭ ﻓﺎﻟﺼﻠﺢ ﻣﺮﺩﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ2550- )
প্রামান্যগ্রন্থাবলী:
১. আল ফাতওয়াল কুবরা আল ফিক্বহিয়্যাহ-১/১৩১
২. সহীহ বুখারী শরীফ, হাদিস নং-২৫৫০
৩. ফাতওয়ায়ে উসমানী-১/১১১
এবার বিস্তারিত –
দরূদ শরীফ পাঠ করা বহু নেকির কাজ, একথা অনস্বীকার্য। হাদীসেপাকে তার পযিলত বয়ান
করা হয়েছে এভাবে যে, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করবে সে দশটি রহমত পাবে।
(সূত্র সহীহ মুসলিম ২/৩২৭।)
মানুষ যখন চাইবে ইখলাসের সাথে নাম সুনামের উদ্দেশ্য ব্যতীরেকে দরূদ শরীফ পড়তে পারবে। কিন্তু আমাদের এ যুগে কোনো কোনো জায়গায়
যেভাবে আযানের আগে পরে উচ্চ আওয়াজে সালাত ও সালাম পড়ার প্রথা হয়ে গেছে এবং যে ভাবে একে ফরয ওয়াজিবের মত আবশ্যক
মনে করা হচ্ছে, এটা দরূদ পাঠ নয়; বরং দরূদ প্রদর্শনী। কুরআন হাদিস বা সাহাবা এবং তাবেয়ীদের মুবারক যুগে এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়না।
{দেখুন ফতোয়ায়ে উসমানী ১/১৩৬-১৩৮(ফতোয়া নং ২৯/৮৫৮খ)}।
যে আমলটি সাহেবে শরীয়ত তথা নবীজি আলাইহিস-সালাম থেকে কোনো ভাবে প্রমাণিত নয় কিংবা স্বীকৃত তিন সোনালি যুগ দ্বারা অনুমোদিত নয়, সেটি যতই সুন্দর হউক; ইসলামে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। এর অনেক দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামদের আসার (নীতি অাদর্শ) দ্বারা প্রমাণিত আছে। তেমনি একটি ঘটনা এখানে তুলে ধরার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ। তিরমিযি শরীফে (২/৯৮) উল্লেখ রয়েছে ان رجلا عطس الي جنب ابن عمر فقال الحمد لله والسلام علي رسول الله فقال ابن عمر وانا اقول الحمد لله والسلام علي رسول الله و ليس هكذا علمنا رسول الله صلي الله عليه وسلم علمنا ان اقول الحمد لله علي كل حال
( জনৈক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র পার্শে হাঁচি দিয়ে পড়ল الحمد لله والسلام علي رسول الله [ আলহামদুলিল্লাহ ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ]। হযরত ইবনে উমর বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ আমি নিজেও পড়ি, তবে এ ভাবে (এ জায়গায় পড়তে) রাসূলুল্লাহ আলাইহিসসালাম আমাদের শিখাননি; তিনি (যদিও) আমাদেরকে সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ পড়তে শিখিয়েছেন। ”
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ঘটনা হতে আমরা শিক্ষা পেলাম এ কথা যে, নিজের ইচ্ছামত কোনো মত ও পথকে ইসলামের নামে চালু করা যাবেনা, কাজটি যতই সুন্দর হোক না কেন; তার কোনো নমুনা বা স্বীকৃতি যে পর্যন্ত স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম হতে কিংবা সত্যের মাপকাঠি অনুসৃত সাহাবায়ে আজমাঈন হতে বা স্বীকৃত তিন সোনালি যুগ হতে প্রমাণিত হবেনা, সে পর্যন্ত তা ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় বিদয়াত হিসেবেই সাব্যস্ত হবে।
আযানের পূর্বে বা পরে সালাত ওয়া সালাম পড়ার প্রচলিত প্রথার সূচনাকাল :
আহলে বিদয়াত ভুয়া এশকের দাবিদার রেজভিরা আযানের পর সুন্নাত তরিকা বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া তরিকায় যেভাবে দরূদ পড়ার প্রচলন করেছেন।
অর্থাৎ সালাত ওয়া সালাম উচ্চস্বরে (বর্তমানে মাইকিং করে) পড়ার প্রথা চালু করেছেন তাকে দরূদ পড়া বলেনা, বরং তাকে দরূদ প্রদর্শন করা বলে। যা দলিল বিহীন প্রচলিত হওয়ায় বিদয়াত ও নিকৃষ্ট কাজ হিসেবে গণ্য হবে।
↓
আমরা প্রমাণ করব যে, রেজভী মতাবলম্বী কথিত সুন্নী দাবিদারদের মধ্যে প্রচলিত আজানের পূর্বে বা পরে (মাইকে বা মাইক ব্যতীত) নবীপাক (সা)-এর উপর সালাত ও সালাম প্রদর্শনের প্রথাটি কবে থেকে আরম্ভ হয়েছিল? হ্যাঁ, এ সম্পর্কে সে তথ্যটিও পেয়ে যাই।
তাফসীরে জালালাইন কিতাবের লেখক, সর্বজনগৃহীত প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা জালালুদ্দিন আসসুয়ূতী রহঃ তিনি খুব সুস্পষ্ট করে লিখেছেন যে, আল্লামা শামী রহঃ বলেছেন “আযানের পরে দরূদ শরীফ উচ্চস্বরে (বর্তমানে মাইকিং করে) পড়ার প্রচলিত প্রথা ৭৮১ হিজরীতে চালু হয়েছিল।”
{সূত্র, হুসনুল মুহাজারা, কৃত আল্লামা সুয়ূতী}।
এ তো গেল আযানের পরে পড়ার ইতিহাস। এরপর বাকি থাকল পূর্বে পড়ার ইতিহাস।
↓
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও জরাহ তা’দিলের বিদগ্ধ মুহাক্কিক ইমাম সাখাবি (রহ) আরো চমৎকার একটি তথ্য দেন। তিনি “আল-ক্বাওলুল বাদী” (ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﺒﺪﻳﻊ) কিতাবে লিখেছেন : “সর্বপ্রথম ৭৯১ হিজরীতে সুলতান নাসির আলা-উদ্দিনের শাসনামলে তারই নির্দেশে আযানের পর সালাত ওয়া সালাম উচ্চৈঃ স্বরে (বর্তমানে মাইকিং করে) পড়ার প্রথা চালু করা হয়েছিল। যার কোনো ভিত্তি ইতিপূর্বে ছিল না।”
↓
যাইহোক, উপরুল্লিখিত তথ্য দ্বারা আমাদের জানা হয়ে গেল যে, আযানের পূর্বে বা পরে সালাত ওয়া সালাম পড়ার প্রচলিত প্রথা নবীজির যুগে ছিল না, সাহাবিদের যুগে ছিলনা; তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন এবং আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন উনাদের কারো যুগে ছিল না।
বরং হিজরী সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে এসব নতুন রূপে ইসলামের নামে উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাও আবার কোনো গ্রহণযোগ্য মুজতাহিদের ইজতিহাদের ভিত্তিতে নয়, বরং সমসাময়িককালের কতিপয় রাজা-বাদশাহদের নির্দেশে দরবারী মৌলভীদের মাধ্যমে এসবের গোড়াপত্তন হয়। কাজেই এ পদ্ধতি বিদয়াত ও নিন্দিত। তাই এসব থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
↓
আহলে বিদয়াত রেজভিদের বক্তব্য :
“দরূদ শরীফ পাঠকরার হুকুম পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব (৩৩:৫৬)-এ রয়েছে। সেখানে শর্তমুক্ত ভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেহেতু আজানের পূর্বে বা পরে মাইকিং করে নবীপাক (সা)-এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করতে অসুবিধে কিসের?”
আমাদের জবাব, (১) পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব (৩৩:৫৬)-এ দরূদ শরীফ পাঠকরার হুকুম থাকলেও মাইকিং করে দরূদ শরীফ প্রদর্শন করার হুকুম কি আছে?
আপনারা আযানের শব্দগুলো সবার কানে পৌছে দিতে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মাইক যেমন ব্যবহার করেন, তেমনি মাইকিং করে দরুদের শব্দগুলোও সবার কানে পৌছে দিয়ে থাকেন, যার ফলে এটি আর আর দরূদ শরীফ পাঠকরার হুকুমে থাকে না, বরং দরূদ শরীফ প্রদর্শন করার হুকুমে চলে যায়। যা নসের নীতি বিরুদ্ধ কাজ।
♣ আযানের পর দরূদ পাঠ করার কথা থাকলেও মাইকিং করে দরূদ প্রদর্শনকরার কথা নেই। যেমন হাদিসের ভাষ্য হল-
ﺍﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻢ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺛﻢ ﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻲ ﻓﺎﻧﻪ ﻣﻦ ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺓ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ﺛﻢ ﺳﻠﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻲ ﺍﻟﻮﺳﻴﻠﺔ ﺍﻟﺦ
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলেপাক সাঃ কে বলতে শুনেছেন “তোমরা যখন মুয়াজ্জিনের আযান শ্রবণ করবে, তখন সে যা বলে তোমরাও অনুরূপ তাই বলবে। অতপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে…।”
{মুসলিম শরীফ ২/৩২৭}
হাদীস থেকে শিক্ষা ও ইংগিতঃ
হাদীসটির প্রথমে দুটি কথা সম্পূর্ণ স্পষ্ট। তন্মধ্যে একটি হল “মুয়াজ্জিন যা বলে অনুরূপ তোমরাও তাই বলবে”। অপরটি হল “অতপর তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠকরা”।
লক্ষণীয় ব্যাপারটি হল, হাদীসটিতে ﻣﺜﻞ “মিসলুন” শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যার অর্থ “অনরূপ বা অবিকল”। তার মানে হাদীসটিতে বহুবচন শব্দ উল্লেখ করে বুঝানো হয়েছে যে, মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বলবে।
এবার বুঝে থাকলে বলুন, আপনি মুয়াজ্জিন
থেকে আযানের বাক্যগুলো শুনেশুনে সেগুলোর জবাব জোরে দিয়েছেন, নাকি নিঃশব্দে দিয়েছেন?
অবশ্যই নিঃশব্দে দিয়েছেন। যেহেতু নিঃশব্দে জবাব দেওয়াই পূর্ব থেকে প্রচলন হয়ে আসছে। তার পরেই এসেছে দরূদ পাঠকরার হুকুম। কাজেই আযানের পর দরূদ শরিফ নিঃশব্দেই পাঠ করা বাঞ্চনীয়।
কিন্তু যারা আযানের বাক্যগুলোর জবাব নিঃশব্দে দেয়া সত্তেও মাইকিং করে আযানের মত দরূদের ধ্বনি আওড়ায়; মূলত তারা কি দরূদ পাঠ করল, নাকি দরূদপ্রদর্শন করল? কী বলবেন?
(২) পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব (৩৩:৫৬)-এ দরূদ শরীফ পাঠকরার হুকুম শর্তমুক্ত ভাবে থাকলেও পবিত্র হাদীসে সেটি সময় এবং নিয়ম ভেদে শর্তযুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
ফতুয়ায়ে শামীর ভাষ্য মতে সাত স্থানে দরূদ পড়া মাকরূহ আর তিন স্থানে হারাম। কিতাবের ভাষ্য-
ﺗﻜﺮﻩ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻴﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺳﺒﻌﺔ ﻣﻮﺍﺿﻊ ﺍﻟﺠﻤﺎﻉ ﻭ ﺣﺎﺟﺔ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﻭ ﺷﻬﺮﺓ ﺍﻟﻤﺒﻴﻊ ﻭ ﺍﻟﻌﺸﺮﺓ ﻭ ﺍﻟﺘﻌﺠﺐ ﻭ ﺍﻟﺬﺑﺢ ﻭﺍﻟﻌﻄﺎﺱ. ﻓﺘﻮﻱ ﺷﺎﻣﻲ
٢/ ٢٠٤
১-
স্ত্রী সহবাস কালে
২-
মূলমুত্র ত্যাগ করার সময়।
৩-
ব্যবসা সামগ্রীর প্রচারের সময়।
৪-
পা পিচলে গেলে।
৫-
কোনো বিষয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলে।
৬-
জবেহ করার সময়।
৭-
হাঁছি দেয়ার সময়।{বিস্তারিত শামী ২/২০৪}
পরিশেষে কথা হল, আযানের আগে এবং পরে দরূদ শরীফ যদি পড়তে হয় তাহলে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এবং তাবে তাবেয়ীনগণ কি রকম দরূদ শরীফ পড়েছিলেন এবং তা কী পদ্ধতিতে পড়েছিলেন সে সব কিছু অনুকরণ আর অনুসরণ করেই পড়তে হবে।
কারণ, সাহাবায়ে কেরাম হলেন কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল উম্মতের জন্য অনুসৃত ব্যক্তিবর্গ।
আমাদের সকল আমলের মানদণ্ড হলেন তাঁদেরই আমল সমূহ। এমন কোনো নেক কাজ তাঁরা ছেড়ে যাননি যা করলে সাওয়াবের গ্যারান্টি ছিল। কাজেই মৌলিক ক্ষেত্রে তাঁদের অনুকরণ আবশ্যক।
অন্যথা কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না।
হাদীসে এসেছে … ﻛﻠﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺍﻻ
ﻣﻠﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻣﻦ ﻫﻲ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﺎ ﺍﻧﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺍﺻﺤﺎﺑﻲ
অর্থাৎ যে বা যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণের পথ ও পন্থায় রয়েছে (তারাই একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত দল)।
{তিরমিযি ২/৮৯, মেশকাত ১/৩০}।
এতে বুঝা গেল, সাহাবাগণের কথা এবং কাজ বা আমল আমাদের দিক নির্দেশনার জন্য সত্যের কষ্টিপাথর। বর্তমান যুগে কোনো কোনো বিদয়াতী মুয়াজ্জিনকে মাইকিং করে যেভাবে দরূদপ্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে তাদের এরূপ কর্মকাণ্ডের কোনো দৃষ্টান্ত ঐতিহাসিক তিন স্বর্ণযুগ দ্বারা প্রমাণিত নয়। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
নিউজ ডেস্ক : আপডটে, বাংলাদশে সময় ৮:০০ পএিম, ৩০ সপ্টেম্বের ২০১৬, শুক্রবার
এইউ