‘আয়কর কর্মকর্তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী আয়কর নির্ধারণ করতে পারবেন না এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত সূত্র অনুযায়ী আয়কর নির্ধারণ করা হবে’ । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।
মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে আয়কর আইন-২০২৩-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এ আইনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আয়কর কর্মকর্তার কর নির্ধারণের ক্ষমতাকে রোধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
খসড়ার মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আয়কর কর্মকর্তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী আয়কর নির্ধারণ করতে পারবেন না এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত সূত্র অনুযায়ী আয়কর নির্ধারণ করা হবে।”
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম ছিল সামরিক শাসনের সকল আইন এবং ইংরেজিতে যেসব আইন আছে সেগুলো পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করা। সে কারণেই অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ আইনের খসড়া তৈরি করেছে বলে জানান মাহবুব।
প্রকৃতপক্ষে, ইংরেজিতে বিদ্যমান আইনটিকে বাংলায় রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং কিছু সংযোজনসহ সরলীকৃত করা হয়েছে। এছাড়া কিছু জটিল ও অস্পষ্ট ভাষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আইনে আয়কর কর্মকর্তার বিবেচনার ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এ আইনে ৩৪৮টি ধারা রয়েছে এবং ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।”
করদাতাদের তাদের কর নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য এ আইনে একটি গাণিতিক সূত্র চালু করা হয়েছে। এর ফলে করদাতারা সহজে তাদের কর পরিশোধ করতে পারবেন। এ আইন করদাতাদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সাহায্য করবে।
এছাড়া এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) আইন-২০২২ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মাহবুব বলেন, “আইন অনুসারে, তথ্য প্রযুক্তি খাতে সরকারের উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য একটি সংস্থা গঠন করা হবে। এটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং এর বাস্তবায়নে কর্মসূচি গ্রহণে সহায়তা করবে। সংস্থাটি ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে গঠিত হবে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন, যা স্বায়ত্তশাসিত হবে।”
তিনি বলেন, “এছাড়াও, সংস্থাটি একটি নীতিমালা তৈরি করবে এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।”
মাহবুব আরও বলেন, “২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার গৃহীত প্রায় ৬৭.৭৮% সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই সময়ে মন্ত্রিসভার ছয়টি বৈঠকে ৯০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ৬১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং বাকি ২৯টি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চলছে।”
এ সময়ের মধ্যে মন্ত্রিসভা দুটি নীতি এবং ১১টি চুক্তি বা প্রোটোকল অনুমোদন করেছে। বর্তমানে এ খাতে সরাসরি জড়িত আছেন ২২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ, যা এক দশক আগে ছিল মাত্র ৯৪ হাজার
“জাতীয় শিল্প নীতি ২০২২”-এ সেবা খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শিল্পকে। ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার রেস্টুরেন্ট মালিক তাদের ব্যবসা দ্বিগুণ করার আশা করছেন।
২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ শিল্প নীতি-২০২২-এর গ্যাজেটে সেবা খাতের পঞ্চম অবস্থানে রাখা হয়েছে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শিল্পকে। ১১ আগস্ট মন্ত্রিসভা এ নীতির অনুমোদন দেয়।
জানা গেছে, দেশের রেস্টুরেন্টগুলো বর্তমানের ৮৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা থেকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির আশা করছে। এজন্য শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রেস্টুরেন্ট বিক্রি বাড়ানোর জন্য এবং মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য সময়ের নীতি এবং নিয়ম প্রত্যাশা করছেন।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, “বৈশ্বিক মান বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের ব্যবসা দ্বিগুণ হবে এবং এক দশকের মধ্যে তিনগুণ হবে বলে আমরা আশা করছি। আমাদের পরিষেবার মান বাড়ানোর জন্য সরকারের ঘোষণার উপর ভিত্তি করে নতুন নীতি ও নিয়ম দরকার।”
রেস্টুরেন্ট খাতকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ায় খুশি মালিকরা। কারণ এখন থেকে তারা অন্যান্য শিল্পের মতো গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ পাবেন।
ইমরান হাসান আরও বলেন, “এটির আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে, আমরা যুক্তিসঙ্গত সুদে ব্যাংক থেকে লোন পাবো, যা পণ্যের দাম কমাতে এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করতে আরও সাহায্য করবে।”
তিনি বলেন, “ ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহরগুলো ছাড়াও অনেক শহরতলী ও পর্যটন স্পটে উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেক চেইন রেস্টুরেন্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হোটেল ও রেস্টুরেন্ট সমীক্ষা-২০২১ থেকে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজারে। যা ২০১০ অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার।
এছাড়াও বর্তমানে এ খাতে সরাসরি জড়িত আছেন ২২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ, যা এক দশক আগে ছিল মাত্র ৯৪ হাজার। ২০১০ সালে এ খাত থেকে কর আদায় হয়েছিল ১১ হাজার ৯ শ কোটি টাকা। যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
২৭ জানুয়ারি ২০২৩
এজি