বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সুপার সাইক্লোন আম্পান যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে সেটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা সুন্দরবনের ওপর দিয়ে যাবে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ধারণা করছে, ভূমিতে আসার পর কলকাতার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঝড়টি ভূমিতে আসতে শুরু করবে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
সাইক্লোনটি বর্তমানে কোথায় রয়েছে?
বর্তমানে সাইক্লোনটি রয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৯০ কিলোমিটার দূরে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দূরে। ঝড়টি আগে ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার গতিতে এগোতে থাকলেও, এখন তা কমে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
কোথায় আঘাত করবে?
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলছেন, ”ঘূর্ণিঝড়টি যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে সেটি গতিপথ পরিবর্তন না করলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা সুন্দরবনের ওপর দিয়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি। বাংলাদেশ সময় বুধবার সন্ধ্যার পর ঝড়টি অতিক্রম করতে শুরু করবে।”
এই গতিবেগে একটি ঝড় ভূমিতে এসে পড়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর দুর্বল হতে শুরু করে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গর দীঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝিতে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করবে। ভূমিতে আসার পর সেটি কলকাতার কাছাকাছি দিয়ে চলে যেতে পারে।
এই সময় ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে উভয় দেশের আবহাওয়া বিভাগ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে
ঝড়টির গতি কতো?
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
”যতক্ষণ ঝড় সাগরে থাকে, ততক্ষণ তার গতিপথ ও বৈশিষ্ট্য ক্ষণে ক্ষণে বদলাতে থাকে। তবে এখন সাইক্লোনটি যতটা দূরে রয়েছে, তাতে এটি গতিপথ সামান্য পাল্টালেও খুব বেশি পরিবর্তন হবে না।” তিনি বলছেন। বর্তমানে ঝড়টি ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ”আমরা পূর্বাভাস দিয়েছি, উপকূলীয় জেলাগুলোয় ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।”
এই সময় ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হবে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে।
কতোটা শক্তিশালী সুপার সাইক্লোন আম্পান
এর মধ্যেই এই ঘূর্ণিঝড়টিকে এই শতকের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে সুপার সাইক্লোন।
তবে শুরুর তুলনায় সুপার সাইক্লোনটির শক্তি সামান্য কমেছে। কিন্তু এখনো এটি যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ক্ষমতা রয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, এ ধরণের একটি সুপার সাইক্লোনের পুরো বিস্তৃতি হতে পারে ৮০০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার। ফলে কেন্দ্রে তো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকেই, এই পুরো বিস্তৃতি (ডায়ামিটার) জুড়েই ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
কোন কোন জেলায় আঘাত করতে পারে
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ।
দশ নম্বর সংকেত থাকবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে। এছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর এবং চাঁদপুর জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা যাচ্ছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমুহ ৯ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। (বিবিসি)
বার্তা কক্ষ, ২০ মে ২০২০