আমেরিকা থেকে পাঠানো ডাক বিভাগের রেজিস্ট্রি করা চিঠি গত ১৫ দিনেও গ্রাহকের হাতে না পৌঁছালেও চিঠির ভেতরে থাকা ৫ লাখ টাকার চেক ক্যাশ করে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। এ নিয়ে ফরিদগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ফরিদগঞ্জ শাখার নামে পাঠানো চেকটি গত ১২ জুলাই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কৃষি ব্যাংক বন্দর শাখা থেকে চেকের টাকা তোলা হয়েছে।
চেকটির প্রকৃত মালিক ফরিদগঞ্জ উপজেলার মাহবুবুর রহমান মিলন নামে এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় তিনি কৃষি ব্যাংক চাঁদপুর মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক বরাবর প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করার পর সোমবার ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ফরিদগঞ্জ কৃষি ব্যাংক শাখায় এসে তদন্ত শুরু করেছে।
মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, তার বাবাসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন আমেরিকা প্রবাসী। সম্প্রতি বাড়ির নির্মাণ কাজের জন্য টাকার প্রয়োজন হলে তার ভাই মাসুদুর রহমানের নামে আমেরিকা থেকে গত ১ জুলাই একটি রেজিস্ট্রি করা চিঠির সঙ্গে ৫ লাখ টাকার চেক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ফরিদগঞ্জ শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নং- ১৪৮০৭, চেক নং- ৪৭৩৪৬৬৫) পাঠান।
চেকটির প্রকৃত মালিক ফরিদগঞ্জ উপজেলার মাহবুবুর রহমান মিলন জানায়, ইমেইল ও ফোন করে চেকের বিষয় আমাকে জানিয়েছে। খামের উপরে আমার মোবাইল নাম্বরটিও দেয়া হয়। এই টাকা পাঠানোর খবর আমার বড় ভাই মাসুদুর রহমান ২ জুলাই কৃষি ব্যাংক ফরিদগঞ্জ শাখার সহকারী ম্যানেজার আলমগীর হোসেনকে জানিয়ে দেয়।
ওই দিন সকাল ১১ টার দিকে মাহবুবুর রহমান ব্যাংকে গেলে ম্যানেজার বিদেশ থেকে ফোন আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এরই মধ্যে মাহবুব ৩/৪দিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিন পোস্ট অফিসে চেকের খোঁজ নেন। কিন্তু পোস্ট অফিসের দায়িত্বরত লোকজন চিঠি পৌঁছেনি বলে জানায়।
গত ১২ জুলাই বুধবার বিকাল ৪ টার সময় মাহবুব ব্যাংকের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় ব্যাংকের গার্ড মো. ইউনুছ তাকে ডেকে চা পানের আমন্ত্রণ জানান। চা পানের সুবাদে তিনি ব্যাংকে ঢুকতেই ২য় কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘বিদেশ থেকে আসা ৫ লাখ টাকা বন্দর শাখা, নারায়নগঞ্জ থেকে পেমেন্ট হয়ে গেছে।’
আলমগীর এতে হতবম্ভ হয়ে পড়েন এবং বলেন, চেক তো আমার হাতে আসেনি, তাহলে সেখান থেকে পেমেন্ট হলো কিভাবে।?
এ সময় ব্যাংকের কম্পিউটার অপারেটর চেকটির বিষয়ে একটি মেইল আসার কথা জানান এবং মেইলটি প্রিন্ট করে মাহবুবের হাতে দেয়। যাতে বলা হয়েছে চেকটি বন্দর শাখা হইতে পেমেন্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে মেইলের প্রিন্ট কপিটি অপারেটর তার হাত থেকে নিয়ে যান।
মাহবুবুর রহমানের দাবি, ‘ওই সময় অত্র ফরিদগঞ্জ শাখার ম্যানেজারের সাথে আলাপ করেও কোন ফল পাই না। আমি এই ব্যাপারে ১৩ জুলাই কৃষি ব্যাংক নারায়নগঞ্জ বন্দর শাখার ম্যানেজার সাথে ফোনেও আলাপ করি, তিনি বলেন ভুয়া গ্রাহককে খোঁজার চেষ্টা করতেছি।’
এ ব্যাপারে ১৩ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, চাঁদপুর শাখা আর. এম অফিসেও ম্যানেজারকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়।
এ ঘটনায় তিনি রোববার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চাঁদপুর মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুরে ব্যাংকের মুখ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. আলী আজগরের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল তদন্ত শুরু করেছেন।
তদন্ত দলটি ফরিদগঞ্জ কৃষি ব্যাংক শাখা ও স্থানীয় পোস্ট অফিসে গিয়ে তদন্ত করেন। তিনি জানান, তারা তদন্ত শুরু করেছেন। তবে চেকটি (ঘঙঘ গওঈজ) সাধারণ চেক হওয়ায় ফরিদগঞ্জ শাখা ছাড়া অন্য কোনো শাখা থেকে নগদায়ন হওয়ার কথা নয়। কীভাবে তা সম্ভব হলো বা এর সঙ্গে কারা জড়িত তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
এ সর্ম্পকে নারায়নগঞ্জ বন্দর থানার থানার ম্যানেজার জাহিদ হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন ব্যাংক আইন মেনে ওই গ্রাহককে টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্রাহককে টাকা দেওয়ার পূর্বে কি তথ্য উপাত্ত রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনের বাইরেও টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি প্যাকটিস করা হয় এ গ্রাহককে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটি অনুসরণ করা হয়নি।
এবিষয়ে কৃষি ব্যাংক ফরিদগঞ্জ শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ঘটনায় বন্দর শাখা অফিসকে দায়ী করছেন।
এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিস সূত্র জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত ওই রেজিস্ট্রি চিঠিটি তাদের অফিসে আসেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বন্দর শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি ব্যাংকের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথার বলার জন্য বলেন।
আতাউর রহমন সোহাগ, ফরিদগঞ্জ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০ : ৪৬ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৭, সোমবার
এইউ