মারইয়াম মাসুদ। অষ্টম গ্রেডে পড়াশোনা করছেন। আমেরিকার ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠলেও পুরো কুরআন মুখস্থ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। মাত্র ৯ বছর বয়সের সময়ই তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ করেন।
মারইয়াম মাসুদের বাবা ও মা দুই জনই বাংলাদেশি। বাবা মাসুদুর রহমান ও মা শাকিলা ইমরোজ সঙ্গে তাদের ৩ বোনের বেড়ে ওঠা। মারইয়াম ৯ বছর বয়সের সময়ই পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেন। পুরো কুরআন মুখস্থ করতে তার সময় লেগেছে মাত্র ২ বছর।
মারইয়ামের জন্মের আগে আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে মা শালিকা ইমরোজ জানতে পারেন, তার গর্ভের সন্তান মারাত্মক ব্যাধি ‘ডাউন সিনড্রোম’ নিয়ে জন্মাবে। আল্লাহর অশেষ রহমতে মারইয়ামের জন্মের পর ডাক্তারদের সে আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়। আর এ মারইয়ামই হয়ে উঠলেন পবিত্র কুরআনের এক ক্ষুদে হাফেজ।
মা শাকিলা ইমরোজ নিয়ত করেছিলেন মারইয়ামকে তিনি পবিত্র কুরআনের হাফেজ বানাবেন। আল্লাহ তাআলা তার সে নিয়তকে পূর্ণতা দান করেছেন। জন্মের পর তাকে দান করেছেন পরিপূর্ণ সুস্থতা।
এই মারইয়াম এখন মুসলিম উম্মাহর জন্য একজন আইকন। সে আকেরিকায় গাইড ইউএস টিভিতে ‘কুরআন উইথ মারইয়াম’ শীর্ষক শিশুদের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে। মারইয়ামের ভেরিফায়েড ফেসবুক ও ইউটিউব মিলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি। অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মারইয়াম প্রথম স্থান অর্জনসহ পুরস্কার লাভ করেন।
মারিয়ামের বাবা মাসুদুর রহমান পেশায় একজন সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট। ব্যারাইজন ওয়ারলেস টেকনিক্যাল টিমের সদস্য তিনি। তিনিই মেয়ের ইউটিউব ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দেন।
মারইয়াম ‘ইন্টারফেইথ হিউম্যানেটারিয়ান’ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সে। কিছুদিন আগে ইন্টারফেইথ ইভেন্টে অতিথি বক্তা হিসেবে অংশ নেয় মারইয়াম। সেখানে সিনেটর বব মেনেনডেজ ও কংগ্রেসম্যান ফ্রাঙ্ক পেলোনসহ বহু প্রভাবশালী ও বিখ্যাত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া শিশু মারইয়াম অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ানফোরকিডস এবং মালয়েশিয়ান চ্যানেলে ‘ওমর’ ও ‘হানা শো’তে কাজ করে। বিশ্বজুড়ে পিতৃমাতৃহীন শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইসলামিক রিলিফ ইউএসএর সম্মানিত দূতও সে।
সম্প্রতি সিরিয়া ও ইয়েমেনের এতিম শিশুদের জন্য ২৫ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছে মারইয়াম। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২১ লাখ।
কুরআনে এ ক্ষুধে হাফেজ বিশ্বকে দ্বীন ও দুনিয়ার মধ্যে সমন্বয় রেখে সামনে এগিয়ে চলার প্রত্যাশী। শুধু সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াতই নয় ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের প্রতি আগ্রহী সে। সে মতেই বিশ্বকে উন্নত কিছু দেয়ার স্বপ্ন দেখে মারইয়াম।
ভবিষ্যতে ইসলামিক স্কলার হতে চায় মারইয়াম। যাতে আগামী প্রজন্মকে পবিত্র কুরআন পড়তে ও তার বাণীর সৌন্দর্য অনুধাবন করাতে পারে নে। বাংলাদেশে কিংবা আমেরিকায় যারা বাঙালি আছেন, তাদের মধ্যে মেয়েদের কুরআনে হাফেজ হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। মারইয়াম মাসুদ প্রবাসীদের জন্য অনুপ্রেরণা।
বার্তা কক্ষ,১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০