রোববার (২৩ জানুয়ারি) মধ্যদুপুরে তখন মাথার উপর তপ্ত রোদ। চাঁদপুর শিশু পরিবারের ১নং ভবনের নিচে ধুলোয় ধূসর ঘাসের উপর বসা প্রায় ৫০জন এতিম শিশু।
তাদের মাঝে বসে থাকা কোট-প্যান্ট পরিহিত লোকটাকে কোনো একশিশু ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেই তিনি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘আমি স্যার না, আমি তোমাদের বাবা আর তোমরা সবাই আমার সন্তান।
অদূরে দাড়িয়ে বিষয়টি অবলোকন করা সিনিয় সাংবাদিকদের সাথে আমরা ক’জন নবীন সংবাদকর্মীও যেনো মূহূর্তেই থ’ বনে গেলাম। কোট-প্যান্ট পরিহিত এই মানুষটা চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রথম প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমনা গণি পাটওয়ারী।
শিশুদের মাথার-পিঠে হাত বুলিয়ে তিনি বলতে লাগলেন, ‘তোমরা সাবাই আমাকে বাবা বলে ডাকবে, তোমাদের কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে। আজকে আমি তোমাদের জন্য কিছু উপহার আনছি, তোমাদের জন্য নারকেল তেল, ¯েœা, দাঁত মাঁজনের ব্রাস-পেস্ট আর গায়ে মাখার সাবান আনছি। তবে মা, আমি তো একটা জিনিস আনতে ভুলে গোছি। কাপর ধোয়ার সাবান আনতে আমার মনে ছিলো না, কালকে সাবান পাঠিয়ে দিবো। এখন থেকে তোমারা প্রতিদিন দু’বেলা পেস্ট দিয়ে দাঁত মাঁজবে, সাবান দিয়ে গোসল করবে, হাত-মুখ ধুবে। এগুলো শেষ হলে একমাস পরে আবার কিনে দিবো’।
হাস্যউজ্জল এক শিশুকে কাছে টেনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওচমান গণি পাটওয়ারী আরো বললেন ক’দিন পরে তোমাদের সবাইকে নতুন জামা কিনে দিবো’। এরপর একে একে সকল শিশুদের হাতে প্রসাধনীর খাকি প্যাকেট আর সাথে নিজের ভিজিডিং কার্ড তুলে দিয়ে বললেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় নেই, কোনো সমস্য হলে, কেউ তোমাদের আঘাত করলে আমাকে ফোন করে জানাবে। আমি এ-ও জানি তোমরা ভয়ে আমাকে ফোন দিবে না, সত্য কথা বলবে না। তবে আমি কিন্তু সবই জানি। এখন থেকে তোমরা সাবাই আমার সন্তান। আমার সন্তানদের কেউ যদি কষ্ট দেয়, তাদের হক যদি কেউ নষ্ট করে, আমি তাদের ছাড় দিবো না। তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেনো, যতবড় মন্ত্রনালয়ে লোক তারা হোক না কেনো। কারন আমি যননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি, জননেত্র শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কখনোই অন্যায়কে প্রশ্চয় দেননি।
এর পর তিনি শিশু পরিবারের দু’জন কেয়ারটেকারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনাদের ছেলে মেয়েকে আপনারা নিশ্চই নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসেন?, আমিও আমার দু’সন্তানকে কলিজার টুকরো মনে করে ভালোবাসি। এই যে এতিম শিশুগুলো আপনাদের দায়িত্বে রয়েছে তারাও মহান আল্লাহর সৃষ্টি। এদের বাবা-মা নেই বলে আজকে আপনাদের কাছে থাকছে। আপনাদের কাছে আমি বিনিতভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে এই শিশুগুলোকে নিজের সন্তানের মতো আদর করবেন। খাবার যা-ই দেন না কোনো, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে কথা বলবেন।’
‘আমি এ নিয়ে দু’বার শিশু পরিবারে এলাম কিন্তু আপনাদের দু’জন ছাড়া আর কোনো কর্মকর্তাকে দেখিনাই। তবে তৃতীয়বার যখন এখানে আসবো তখন, আমার রূপ হবো ভিন্ন। সরকার শিশু পরিবার করে দিয়েছে অনাথ শিশুদের জন্য। কেউ যদি এই অনাথ শিশুদের হক মেরে খেতে চায় তবে আমি তাদের ছাড় দিবো না। খুব শিগ্রই শিশু পরিবারের খাবার পানি, বিদ্যুৎসহ সকল সমস্যগুলো সমাধান করা হবে। চাঁদপুর শিশু পরিবারকে আমি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখবো।’
একজন রাজনীতিক ও সমাজসেবকের এই বিরল দৃষ্টান্ত দেখে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ উপস্থিত সাংবাদিকরা ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১: ২০ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ