ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়র মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে অনাস্থা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্সিলরদের দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন মেয়র মাহফুজুল হক। বুধবার (২৫ এপ্রিল) ফরিদগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অনাস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মেয়র মাহফুজুল হক বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার, পৌর সচিব মো. খোরশেদ আলম, কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান পরান, জাকির হোসেন গাজী, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর খতেজা বেগম আলেয়া, সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. নজুরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন রতন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বাবলু প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে মেয়র মাহফুজুল হক সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী সাবেক মেয়র মঞ্জিল ও সাবেক পৌর বিএনপি’র আহবায়ক কর্তৃক হামলার শিকার হই।
২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের মেয়র প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্যে তিনি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন। কিন্তু আমার বিজয়ের পর থেকেই আমাদের নিজ দলীয় প্রভাবশালী নেতাসহ বিএনপি-জামায়াতের সহযোগীরা আমাকে অপসারনের জন্যে আজ অবধি নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন। সর্বশেষ সম্মানিত কাউন্সিলরদের ভয় ভীতি ও অর্থ লোভ দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদানের জন্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে আসছেন।’
তার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের আনিত অভিযোগ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘আমি নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ৯টি ওয়ার্ডেই সমভাবে ব্যাপক উন্নয়ন করে আসছি। আমার উন্নয়নের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতীকারি জননেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকা প্রতিকের বিরোধীতা করে আসছেন।’
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) ৭ জন সাধারন কাউন্সিলর ও ২ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র, সচিব ও পৌর ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, মাসিক সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই পৌর মেয়র একক ক্ষমতা বলে অনিয়ম করে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ না করে বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন এবং ইঞ্জিনিয়ারকে ভয় ভীতি দেখিয়ে বিলে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন।
এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার মেয়রের রোষানলের ভয়ে ছুটি কাটান। মেয়র কাউন্সিলরদের কিছু না জানিয়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিএফ কার্ড সহ টিআরকাবিটা প্রকল্প ও পৌর কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া একক ক্ষমতা বলে করেন।
তার বিরুদ্ধে আনিত এ সমস্ত অভিযোগগুলো সর্ম্পূন মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক দাবি করে মেয়র মাহফুজুল হক উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘উল্লেখিত সকল কাজ পৌরসভার মাসিক সভায় উপস্থিত কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সম্পন্ন হয়ে থাকে। যা পৌরসভার কার্যবিবরনীতে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষরই প্রমাণ করে।’
এ সময় মেয়র মাহফুজুল হক আরো বলেন, ‘কাউন্সিলরদের দাবি অনুযায়ী মেয়রের রোষানল থেকে সমাজের অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী তার অবৈধ কাজে বাধার প্রেক্ষাপটে মেয়র ও তার লোকজন তাদেরকে হুমকি-ধমকি ও লাঞ্চিত করেন। তাদের এ বক্তব্যও বাস্তবতা বিবর্জিত। সর্বোপরি প্রায় শূণ্য হাতে পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করে সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া প্রায় ৮০ লাখ টাকা দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে আমাদের হিমসিম খেতে হয়েছে। ফলে সম্মানিত কাউন্সিলরদের সম্মানি ভাতা পরিশোধ করতে বিলম্ব হচ্ছে ‘
ভবিষ্যতে রাজস্বফান্ড প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদেরকে বকেয়া সম্মানি ভাতা দেওয়া হবে বলে তিনি আস্বস্ত করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ২ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের অনাস্থা প্রস্তাব এনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন হিসেবে মেয়র মো. মাহফুজুল হক এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
মেয়র মাহফুজুল হকের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জিল হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মানহানিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ফরিদগঞ্জের জনগণ জানে আমি কেমন প্রকৃতির লোক। এছাড়া আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পৌরসভার কোন ঋণ ছিলো না।’
এদিকে মেয়র মাহফুজুল হকের বক্তব্য সর্ম্পকে অনাস্থা প্রদানকারী কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ মো. খলিলুরর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এখানে কারো সাথে আতাত করার সুযোগ নেই। কারো প্রোরোচনায় নয়, জনগনের স্বার্থেই অনাস্থা দিয়েছি।’
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট