‘আমি ভেন্যুর দ্বিতীয় তলায় ছিলাম। আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমি একেবারে কনসার্টের মধ্যিখানে গান শুনছিলাম আর ভালো সময় কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের কানে আসে গুলির শব্দ।’ লে বাটক্লঁ কনসার্ট হলের ঠিক দোতলায় দাড়িয়ে মার্কিন ব্যান্ড ‘ঈগলস অব ডেথ মেটাল’র গান শুনছিল জেনি ওয়াটসন। ওই ব্যান্ডের গান চলাকালীন সময়েই তিনজন বন্দুকধারী অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে হলে প্রবেশ করে।
ফ্রান্সের স্থানীয় পত্রিকা ফ্রান্স২৪কে দেয়া সাক্ষাতকারে জেনি ওয়াটসন আরও জানান, ‘তারা খুব জোরে বাজাচ্ছিল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ব্যান্ডের পক্ষ থেকে এটা বুঝি কোনো মজা। তারা আমাদের সবার সঙ্গে মজা করছে ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারিনি। বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়েই যাচ্ছিল এবং মানুষ হামাগুড়ি ও চিৎকার করতে শুরু করে। আপনি জানেন তারা চেয়ারের পেছনে সিটের পেছনে লুকাচ্ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না নিজেদের নিরাপদ মনে করছিল।’
শুক্রবারের ওই হামলার ঘটনায় কমপক্ষে দেড়শ মানুষ নিহত হয়েছে। পূর্ব প্যারিসে এই ঘটনা যখন ঘটছিল এবং তিনজন বন্দুকধারী কনসার্ট হলের মধ্যে প্রবেশ করে গুলি চালাচ্ছিল তখন অনেকে নিহত হলেও মিস ওয়াটসন এবং আরও অনেকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জেনি ওয়াটসনের ভাষায়, ‘আমরা সিড়িতে আটকে যাই এবং তারা দরজা খুলে দিলে আমরা সবাই পুরো ঘটনা মধ্য থেকে দৌড়ে রাস্তায় চলে যাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। আমি কিছু মানুষকে মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেখি, একজনকে দেখেছিলাম যিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু আমি কাউকেই ঠিকভাবে দেখতে পারিনি কারণ পুরো ঘটনাটি ছিল বেশ ভয়ংকর। সত্যি বলতে আমি এখন কিছু কিছু উপলব্ধি করতে পারছি।’
পুলিশ যখন পুরো দালানটি ঘিরে ফেলে ততক্ষনে বন্দুকধারীরা ভেতরে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। পুলিশের গুলিতে পরবর্তীতে ওই বন্দুকধারীরা নিহত হলেও ততক্ষনে অনেকেই মারা গেছেন। যদিও ঘটনাস্থলেই ওই বন্দুকধারীদের হত্যা করতে পারেনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরত্বে অন্য দুই বন্দুকধারীর সঙ্গে তাদেরও হত্যা করা হয়।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী মার্ক কুউপ্রিস। তার দৃষ্টিতে ঘটনার আরও কিছু মর্মান্তিক দিক জানতে পারা যায়। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘আমি একটা হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্র। চারপাশেই কেবল রক্ত আর রক্ত, আর মৃতদের নিথর দেহতো ছিলই। যখন গুলি শুরু হয় তখন আমি হলের অপর প্রান্তে ছিলাম। আমার জায়গা থেকে দুজন বন্দুকধারীকে দেখতে পাচ্ছিলাম। তারা ব্যালকনি থেকে কনসার্টে আসার মানুষদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ছিল। আর আমি ভাবছিলাম আজ বুঝি আমার দিন শেষ। প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিলাম তখন আমি। আমরা প্রত্যেকেই তাই ভাবছিলাম। যখন কিছু সশস্ত্র পুলিশ ভেতরে ঢুকতে শুরু করলো তখন আমরা চারপাশে তাকানো সুযোগ পাই। চারপাশে রক্তের মাঝে পুলিশ আমাদের দৌড়ে পালিয়ে যেতে বলে।’
অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী জুলিয়ান পিয়েরের ভাষ্য মতে কনসার্ট হলে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে গুলি চালায় বন্দুকধারীরা। ‘দুই অথবা তিনজন মুখোশ পরিহিত বন্দুকধারী কালাশনিকভ জাতীয় অস্ত্র দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে গুলি করতে শুরু করে। প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট ধরে এই অবস্থা চলে। আর ওটা ছিল প্রচন্ড ভয়ংকর। মানুষ মূল মঞ্চের দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিল এবং পদদলিত হচ্ছিল। বন্দুকধারীদের সবাইকে বয়সে বেশ তরুণ মনে হচ্ছিল। ওটা ছিল স্রেফ রক্তস্নান। রক্তের মাঝে চারপাশে মানুষ কাতরাচ্ছিল ও চেচাচ্ছিল। টানা দশমিনিট, হলের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের শরীর দিয়ে নিজের মাথা বাঁচাতে চাচ্ছিল। হামলাকারীরা কোনো চিৎকারও করেনি। তারা মেঝেতে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করছিল।’
নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৫:০০ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৫, শনিবার
এমআরআর