টানা পাঁচ দিন অবস্থানের পর শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকরা ২০ মার্চ থেকে অবস্থান করছিলেন। আন্দোলনের দিনগুলোতে অন্তত ১৫ জন শিক্ষক ঠাণ্ডা, পানিশূন্যতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন।
রোববার শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পর এক মাসের আলটিমেটাম দিয়ে ওই আন্দোলন স্থগিত করা হল। আজ শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও সচিবের বৈঠক আছে। শিক্ষকরা জানান, দাবির বিষয়ে ২২ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের কথা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী প্রেস ক্লাব মোড়ে অবস্থিত কদম ফোয়ারার কাছে শিক্ষকদের অবস্থানস্থলে আসেন। এ সময় সিনিয়র সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাদের কষ্টের বিষয়টা জানি। এমপিওভুক্তি ছাড়া আপনারা কিভাবে জীবনযাপন করেন, সে খবরও আমার কাছে আছে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে আবেদন গ্রহণ কার্যক্রম শেষ করেছি। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম অর্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, তাই এটি বাস্তবায়নে নানা প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এ কারণে কিছুটা সময় লাগছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার আছে। আমি ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য নতুন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। তাই আপনারা বাড়ি ফিরে যান। খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে আর কষ্ট করবেন না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব, যাতে আপনাদের কষ্ট দূর সম্ভব হয়।
এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, আপনারা শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি সম্মান রেখে কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন বলে আমরা আশা করছি। আপনাদের দাবিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পর এই আন্দোলন ডাকা সংগঠন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তাদের বলেছেন আগামী বাজেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে দু-এক মাস সময় লাগবে।
তিনি রাজপথ ছেড়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান। এ কারণে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষক নেতাদের মতো দিয়েছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনে নামা হবে।
ডলার আরও জানান, এ ব্যাপারে আগামীকাল (আজ) সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিও’র দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে ২০ মার্চ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা। পরদিন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু পুলিশ কদম ফোয়ারার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। তখন শিক্ষক-কর্মচারীরা সেখানে অবস্থান নেন। সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী আন্দোলনে অংশ নেন।
বার্তাকক্ষ
২৫ মার্চ ২০১৯