বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খান বরাবরই সযত্নে গণমাধ্যমের কাছ থেকে আড়ালে রাখেন তার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো। বর্তমান স্ত্রী কিরান রাওয়ের সঙ্গে যখন তার প্রেম চলছে তখনও সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি তিনি।
ব্রিটিশ সাংবাদিক জেসিকা হাইনের সঙ্গে প্রেম নিয়েও নীরব থেকেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে ‘গুলাম’ ছবির শুটিং যখন চলছে সে সময় জেসিকা হাইনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আমির। তারা একসঙ্গে বসবাসও করছিলেন। পরে আমিরের সন্তান ধারণ করেন জেসিকা। তিনি এতে খুশি হলেও আমির ছিলেন গররাজি। এর রেশ ধরেই তাদের সম্পর্কটি ভেঙে যায়। তাদের সন্তানের নাম জান। সন্তানকে একাই বড় করছেন জেসিকা। এসব বিষয় নিয়ে ফিল্মি পত্রিকাগুলো যথেষ্ট জল ঘোলা করলেও আমির মুখ বন্ধই রেখেছিলেন। এই সম্পকর্ের জের ধরেই সম্ভবত তার প্রথম বিয়েটি ভেঙে যায়।
আমির খানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১৪ মার্চ। তার মা জিনাত হুসেন ছিলেন অত্যন্ত স্নেহময় ও বিবেচক নারী। আমির খানের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা তার মা। শৈশব থেকেই সব বিষয়ে মায়ের উপর নির্ভর করতেন আমির। পরবর্তীতে তিনি বলেন তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারী হলেন মা জিনাত যার ছবি তিনি এখনও মানিব্যাগে বহন করেন।
রিনা দত্ত ছিলেন আমিরের জীবনের প্রথম প্রেম। রিনা ছিলেন আমিরের প্রতিবেশি। পাশের বাড়ির মেয়ে রিনা একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন। রিনা আমিরের চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় ছিলেন। সদ্য তরুণ আমির রিনাকে ভালোবাসার কথা যখন প্রথম জানান তখন তার বয়স একুশ বছর। রিনা হিন্দু আর আমির মুসলমান। দুই পরিবারেই তাই তাদের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ওঠে। কিন্তু তারা পরিবারের এসব বাধার কাছে নতি স্বীকার করেননি। ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে করেন এই জুটি।
১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় আমির খান অভিনীত ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’। এই ছবিতে ছোট একটি দৃশ্যে অভিনয় করেন রিনাও। সেটি ছিল ‘পাপা ক্যাহতে হ্যায়’ গানে।
এর আগে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘ইয়াদো কি বারাত’ ছবিতে এবং বড় হয়ে ‘হোলি’ ছবিতে পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করলেও নায়ক হিসেবে এটি ছিল তার অভিষেকের সিনেমা। ছবিটির দুর্দান্ত সাফল্য আমিরকে বলিউডের আকাশে নতুন তারকা বানিয়ে দেয় রাতারাতি। তরুণীদের হার্টথ্রব হয়ে ওঠেন তিনি। নিজের বিয়ে সম্পর্কে গোপনীয়তা অবলম্বন করেছিলেন আমির। রিনাও কখনো জনসমক্ষে আসার কথা ভাবেননি। তিনি বলিউডের পাটির্গুলোতে কখনো যেতেন না। এমনকি পরে যখন তাদের বিয়ের কথা মোটামুটিভাবে সকলের জানা তখনও তিনি ফিল্মি পার্টিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। স্বামীর বিপুল খ্যাতি ও অর্থ সত্তেও রিনা আগের মতোই বাসে চড়ে ট্র্যাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতে যেতেন। রিনা-আমিরের বিবাহিত জীবন স্থায়ী হয় ষোল বছর। তাদের দুই সন্তান। ছেলে জুনায়েদ এবং মেয়ে ইরা।
বিয়েতে দুই পরিবারের অপত্তি থাকলেও পরে দুই পরিবারের বন্ধুত্ব আবার গড়ে ওঠে। আমিরের পরিবারের সঙ্গে সুখে দুঃখে নিজেকে জড়িয়ে নেন রিনা। আমিরের বোনের সঙ্গে রিনার ভাইয়ের বিয়ে হয়। তারা নিউ জার্সিতে থাকেন। আমিরের জীবনে বিশেষ করে তাদের পরিবারে রিনা হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ‘লাগান’ ছবির প্রযোজনাও করেন রিনা। এ ছবিতেই সহকারী পরিচালক ছিলেন কিরান রাও।
তবে আমির যখন তারকা থেকে মহা তারকার হওয়ার দিকে এগুচ্ছেন, তখন রিনার সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। সাদামাটা মেয়ে রিনা মহাতারকা আমিরের জীবনের সঙ্গে ধীরে ধীরে বেমানান হয়ে উঠতে থাকেন। দুজনেই বুঝতে পারছিলেন যে, তারা আর একসঙ্গে চলতে পারছেন না।
গুজব রয়েছে যে, জেসিকা হাইন এবং অভিনয়শিল্পী পূজা ভাটকে নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। আবার কয়েকটি ফিল্মি পত্রিকার সূত্রমতে ‘লাগান’ ছবি নির্মাণের সময় সহকারী পরিচালক কিরানের সঙ্গে আমিরের অতিরিক্ত ঘনিষ্টতা ভাঙন ধরায় রিনার সংসারে।
২০০২ সালে তারা বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। এটি ছিল তাদের দুজনের জন্যই ভীষণ কঠিন একটি সময়। তারা প্রথমে সন্তানদের কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। পরে পৃথক বসবাস এবং আরো পরে বিচ্ছেদ চূড়ান্ত করেন।
২০০৫ সালে কিরান রাওকে বিয়ে করেন আমির খান। তবে নতুনভাবে সংসার শুরু করলেও এবং বর্তমানে বিবাহিত জীবনে যথেষ্ট সুখী হলেও প্রথম প্রেম রিনাকে এখনও নিজের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারী বলে স্বীকার করেন আমির। তার পরিবারের সঙ্গে রিনার এখনো সুসম্পর্ক রয়েছে। পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা যায় রিনাকে। ছেলেমেয়েরা রয়েছে তারই কাছে। তাদের সঙ্গে বাবা-মা দুজনেরই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
আমির খান সব সময়ই বলেন, রিনার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব রয়েছে এবং তার জীবন থেকে রিনার প্রতি ভালোবাসা ও অনুভূতি মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
এক টিভি সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, তার জীবনে তিনজন নারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধেয়। প্রথমজন হলেন তার মা জিনাত , দ্বিতীয় জন রিনা এবং তৃতীয় হলেন তার বর্তমান স্ত্রী কিরান।