শনিবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত ফেসবুকে ব্যক্তিগত, পেশাগত, জঙ্গি সংক্রান্ত নিউজ নিয়ে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে বাবুল ভাইয়ের (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার) সাথে। আজকেই পুলিশ সদর দপ্তরে এসপি হিসেবে তার যোগ দেয়ার কথা ছিল।
সে জন্য মিতু ভাবি (বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু) ও দুই ছেলেকে রেখে গত বৃহস্পতিবারই ঢাকা চলে যান তিনি। বলেছিলেন চট্টগ্রাম থেকে বিদায় নেয়ায় মন খারাপের পাশাপাশি শরীরটাও দুর্বল হয়ে গেছে। এর আগের দিনও একই কথা বলেছিলেন।
সর্বশেষ তিনি যখন শুভরাত্রি বলে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন তখনও কি বাবুল ভাই জানতেন তার জীবনে এমন একটা বেদনাদায়ক সংবাদ অপেক্ষা করছে? রোববার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে যখন ওসি মহসীন ভাইয়ের (বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন) ফোনে খবরটি পেলাম, তখন বিছানা থেকে উঠে বসার পর ফের শুয়ে পড়তে হয়েছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মাথায় পানি, তেল দিয়ে, গোসল সেরে গরম গরম চা খেয়ে সকাল ৯টার পর বাসা থেকে বের হলাম জিইসির উদ্দেশে।
এর মাঝে অর্ধাশতাধিক ফোন রিসিভ করতে হয়েছে। অনেকে বিষয়টির সত্যতা জানার পাশাপাশি আমাকেও সহানুভূতি জানিয়েছে! আমি নাকি বাবুল ভাইয়ের স্নেহধন্য! তবে কিছুদিন আগেও বাসায় ভাবির হাতে করা জুস পান করলাম, তাও আবার দুই গ্লাস! সেই ভাবিকে হারিয়ে আমার বাবুল ভাইকে কি বলে সান্ত্বনা দিব আমরা?
এদিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসার পর বাবুল ভাই শত শত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সামনে বিলাপ করতে করতে আমার হাত ধরে বলতে থাকেন, ‘দিদার তোর ভাবি কই? তোর ভাবিরে আইনা দে! তোর সাথেই কাল গভীর রাত পর্যন্ত কথা বলেছিলাম। আজকে আমার কী হলো?’
এসময় আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরেছে আর উচ্চস্বরে কান্না ছাড়া কোনো জবাব দিতে পারিনি। এমনকি শিশুর মতো তার অনেক সহকর্মীকেও অঝোরে কাঁদতে দেখেছি।
বিলাপ করতে করতে চট্টগ্রাম র্যাবের সিইও লেপ্টেনেন্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদকেও বাবুল আক্তার বলেন, ‘স্যার আমার বউরে আইনা দেন, আমার বউ কই? আমার বউ গেলো কই, আমার বউরে আইনা দেন। ও কি বেঁচে আছে না মরে গেছে, আমাকে একটু দেখতে দেন।’
উল্লেখ্য, রোববার সকাল ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। অতি সম্প্রতি বাবুল আক্তারের পদোন্নতির পর ঢাকায় অবস্থান করলেও তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।(বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৫:৫৮ পিএম, ০৫ জুন ২০১৬, রোববার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur