চাঁদপুর

‘আমারে মাইরা ফেলুক, তবুও আমার বইনের হত্যাকারী গো ফাঁসি হোক’

ছোটবোন মারজানা যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী, তখন একই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো বড় ভাই মারুফ। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর শিশু মারজানাকে ধর্ষণ শেষে গলা টিপে হত্যা করে একই গ্রামের একদল বখাটে যুবক। হত্যা শেষে লাশ ফেলে রাখা হয় বিলের পাড়ে। এরপর এলাকার প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় মারজানাকে জ্বীনে মেরেছে বলে পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাফনও করা হয়।

১৮ দিন পরে এই ঘটনায় মারজানার বাবা মোকশেদ হাওলাদার মামলা করেন আদালতে। আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে পোস্টমর্টেমে ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া যায়।

এরপর শুরু হয় আসামী ধরার পক্রিয়া। অফিসার বদল হলেও আসামী আটক হয় না। ২০০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের এস আই রেজাউলকে। মাত্র এক মাসের মাথায় তিনি ঘটনায় সম্পৃক্ত এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদারকে আটক করেন। সে ধর্ষণ এবং হত্যার কথাও স্বীকার করে।

আরও পড়ুন…

হাইমচরের শিশু মারজানকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সেলিম আটক

৭ জুন চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আলোচিত এই মামলার ৩নং আসামী সেলিম বেপারী (২২) কে আটক করা হয়। হতভাগা মারজানার কিশোর ভাই মারুফের দোষ এখানেই। গত রাতে এশার নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার পথে আটক সেলিমের বাবা শফিউল্লাহ বেপরী, বড় ভাই জলিল দলবলসহ মারুফকে ধরে নিয়ে বেদম প্রহার করে। তার হাত ভেঙ্গে দেবার চেষ্টা করে। মারুফের গলা চেপে ধরে বলে ‘ তোর বইনের খুনের মামলায় আমাগো ছেলের যদি ফাঁসি অয়, তইলে তোরেও আমরা মাইরা ফালামু’। এক পর্যায়ে ছোট্ট মারুফ ওদের হাত থেকে কোনোরকম নিজেকে ছাড়িয়ে দৌঁড়ে বাড়িতে আসতে সক্ষম হয়।

বিষয়টি তাৎক্ষনাত চাঁদপরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে অবহিত করা হয়। এতে ইশানবালা ফাঁড়ির পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা নেয় পুলিশ প্রশাসন।

মারুফ এখন ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। বাবা-মা মেয়র খুনিদের ভয়ে ১বছর আগেই ছেলেকে দূরের গ্রামের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। সেখানে এক অাত্মীয়র বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে মারুফ। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় মারুফ বাড়িতেই থাকে। তাই বাবা মায়ের ভয় মেয়ের মতো তাদের ছেলেকেও না জানি হত্যা করে মানুষরুপি হায়নার দল।

তবে ছোট্ট মারুষ কান্নামাখা কণ্ঠে বলে ‘আমার ছোট্ট বইনেরে ওরা খারাপ কাজ কইরা খুন করছে। এহন দরকার হইলে আমারেও মাইরা ফেলুক, তবুও
আমার বইনের হত্যাকারী গো যেনো ফাঁসি হয়’।

প্রসঙ্গত, ঘটনার স্থান চাঁদপুরের হাইমচর ইশানবালার দুর্গম চর এলাকা।

প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,৮ জুন ২০২০

Share