মাঠ পর্যায়ে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমাধানের জন্য পরামর্শ, ইজিপির অগ্রগতি ও সফলতা অবহিতকরণ বিষয়ে চাঁদপুরে সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, ২০১১ সালের ২ জুন ইজিপি পদ্ধতি চালু হয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। শুরু হলেও এটি বাস্তবায়ন হয়ে পুরো সফলতা পেতে সময় লাগবে। আজকের আলোচনা বুঝলাম এই পদ্ধতিতে অনেক ত্রুটি ও সমস্যা আছে। এগুলো সমাধানের জন্য আমরা কাজ করবো। আমাদের জনবল কম ছিলো। সবকিছুরই এখন অগ্রগতি হবে।
তিনি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে বলেন-যেসব প্রতিষ্ঠান ইজিপির মাধ্যমে ঠিকাদারী কাজ করেন। তারা যেন বছরে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা কিংবা টাকার অংকের বাহিরে গিয়ে আর কাজ করতে না পারেন। আমরা এটি বাস্তবায়ন কিভাবে করা যায় সেবিষয়ে কাজ করছি। ইজিপির কাজে অনেক সময় সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি জড়িত থাকে। এই সিন্ডিকেট থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
সচিব বলেন-ইজিপি পদ্ধতি হওয়ার আগে আমরা দেখেছি অনেক সময় টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় মারামারি এবং মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যে কারণে তখন টেন্ডার করার সময় পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। সেটি এখন আর নেই। পুলিশ এখন অন্য কাজে সময় দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্প সংখ্যা ১হাজার ৪শ’। এগুলো মনিটরিং করা খুবই চ্যালেঞ্জের বিষয়। যে কারণে আমাদেরকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তথ্য নিতে হয়। এরপরেও আমাদের লোকজন মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ করে।
তিনি ঠিকাদারদের উদ্দশ্যে বলেন-আপনাদের সাথে কথা বলার মূল উদ্দেশে হচ্ছে সমস্যাগুলো কোথায় তা চিহ্নিত করা। ঢাকায় বসে আর সমস্যা নির্ধারণ করা যাবে না। আজকের এই কর্মশালায় অনেক সমস্যার কথা উঠে এসেছে।
সবশেষে সচিব বলেন-আমাদের সবার উদ্দেশ্যে হচ্ছে দেশের কল্যাণ করা। দেশের প্রত্যেক নাগরিক উন্নয়নের অংশীদার। সাংবাদিকরাও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তুলে ধরতে পারেন। আমাদের সকলের যোগ্যতায় দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগি প্রয়োজন।
বিপিপিএম এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শোহেলের রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন-চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
বিপিপিএম এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শোহেলের রহমান চৌধুরী উন্মুক্ত প্রশ্ন পর্ব পরিচালনা করেন। তিনি বলেন-দেশের বিভিন্ন বিভাগ এগিয়ে যেতে না পারলেও ইজিপিতে আমরা অনেক এগিয়েছি। যে কারণে বিশ্বের অনেক দেশ আমাদেরকে মূল্যায়ন করে। ইজিপি থেকে সরকার প্রতিবছর ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করে। এর মাধ্যমে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ইজিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের ৬৫ভাগ ক্রয় কার্যক্রম এর মাধ্যমে হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার লোক ইজিপি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক বক্তব্যে বলেন, আজকের কর্মশালা অনেকটা মতবিনিময় হয়েছে। আমরা সবাই কোন না কোনভাবে ইজিপির সাথে সংযুক্ত। ২০১১ সালে শুরু হওয়া ইজিপি পদ্ধতি সরকারি ৯০ ভাগ দপ্তরে কার্যকর হয়েছে। আজকে সেব কথাগুলো এখানে উত্থাপন হয়েছে এবং নোট হয়েছে, সেগুলো আশা করি বাস্তবায়ন হবে।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, আজকের এই কর্মশালায় এসে অনেক অজানা তথ্য জানার সুযোগ হয়েছে এবং অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। কারণ এই কাজে আমরাও জড়িত। ইজিপি কারণে সবচাইতে বেশী উপকৃত হয়েছে পুলিশ বিভাগ। কারণ আগে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। অনেক দপ্তর পুলিশ দেয়ার জন্য বলতেন। টেন্ডার বক্স ছিনতাই হওয়ার মত অনেক ঘটনাই ঘটেছে। আমার মতে এখন ইজিপিতে যেন কোন সিন্ডিকেট না থাকে। সিন্ডিকেট ভাঙা দরকার। এক আইডি ব্যবহার করে যেন একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেন্ডারে অংশগ্রহন করতে না পারে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে যারা জড়িত তারা অনেকেই রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। যে কারণে এই পদ্ধতি করতে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। এসব সমস্যাগুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
ইজিপি সংক্রান্ত কার্যক্রমের উপস্থাপনা পেজেন্টেশন আকারে তুলে ধরেণ ইজিপি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জিনাত সুলতানা। কর্মশালায় ইজিপি কি এবং এর অগ্রগতি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত দুটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করা হয়। এতে করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করেন।
কর্মশালায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলী, অফিস প্রধান, সাংবাদিক, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রধানরা উপস্থিত থেকে ই-জিপি পদ্ধতির সুবিধা, সফলতা ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ সময় চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোস্তাফিজুর রহমান, (সার্বিক) বশির আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ এস এম মোসা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমরান শাহরীয়ার, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরান শোভনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ২ নভেম্বর ২০২৩