Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলব উত্তরে তালিয়ে গেছে ৬০৪ হেক্টর আমন ও সবজি ক্ষেত
আমন

মতলব উত্তরে তালিয়ে গেছে ৬০৪ হেক্টর আমন ও সবজি ক্ষেত

নির্মাণের তিন দশক পেরিয়ে গেলেও খনন করা হয়নি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ছোট বড় প্রায় ৫৬১ কিলোমিটার খাল। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমি ১৪.১ হেক্টর।

গত শনিবার ও রোববার এই দুই দিনের অতি বৃষ্টির কারণে সেচ প্রকল্পের কৃষকের ৬শ’৪ হেক্টর আমন ও সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা বলছেন পানি সরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে চলতি ম্যেসুমে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা। গত মাসের বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কেটে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারও এ জলাবদ্ধতা কৃষকের মাথায় হাত। সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা যেন কৃষকের জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।

মঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেরিবাঁধের ভিতরে গত আগস্ট মাসের মাঝারি থেকে রোপা আমনের অঅবাদ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়। এছাড়া বেরিবাঁধের ভেতরে চলতি মৌসুমে ২৪০ হেক্টর জমিতে লাউ,শাক,কুমড়া,করলা,বেগুনসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ করা হয়েছে। আমন ও শাকসবজি এ মৌসুম আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে।

গত শনিবার ও রোববার মতলব উত্তর উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত হয়। ময়লা-আবর্জনায় ও জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সরাতে না পারার কারণে সেচ প্রকল্পে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়। ফলে বেরিবাঁধের ভেতরের ৫০৪ হেক্টও রোপা আমন, এবং ১০০ হেক্টর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া সবজির দেড় হেক্টর বীজতলাও পানিতে পানিতে তলিয়ে গেছে।

যত্রতত্র বাড়ি-ঘর নির্মাণ, এমনকি ছোট-ছোট খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করায় বৃষ্টি হলেই সেচ প্রকল্প জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এজন্য আশপাশের নালা-খালগুলো পরিষ্কার করে ফেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করবে।

২০ সেপ্টেম্বর সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে সেচ প্রকল্পের ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশন খাল দীর্ঘদিন থেকে খনন না করার কারণে পুরো বিলে জলবদ্ধতা সৃষ্টিসহ তালতলী, ঝিনাইয়া, ঠাকুরচর, ঘনিয়ারপাড়, ওটারচর, পাঁচআনী, মাথাভাঙা, হানিরপাড়, লতুরদি, নাউরী, আমিয়াপুর, সাদুল্লাপুর, দুর্গাপুর, জীবগাঁও, কালিপুর, মিঠুরকান্দি, ব্রাহ্মণচক, সুজাতপুর, কৃষ্ণপুর, নয়াকান্দি কমপক্ষে ৪০টি বিল ডুবে যায়।

সেখানকবার আমন ও সবজি ক্ষেত টানা ববর্ষণে পানিতে তলিয়ে আছে। ক্ষেত থেকে পানি সরানোর উদ্যোগ নেই।

উপজেলার ঠাকুরচর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তিনি ১০০ শতাংশ জমিতে আমনের আবাদ করেন, ৪০ শতাংশ জতিতে আবাদ করেন, করলা ও সবজিখেত। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে ৫০ শতাংশ আমন ও ২০ শতাংশ সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই পানি সরানো উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। পাউবোর লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ক্ষেতর পানি দ্রুত সরানো না হলে আমার আমন ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হবে। আমাকে রড় লোকসানে পড়তে হবে।’

আমন

উপজেলার কেশাইরকান্দি গ্রােেমর কৃষক শহিদ উল্লাহ প্রধান বলেন, ‘আমাদের এলাকায়ও ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশন খাল দীর্ঘদিন থেকে খনন না করার কারণে আমার দুইডা আমন ক্ষেত এহন পানির নিচে।

আগে ক্ষেত ক্ষেত জলাবদ্ধতা ছিলো। টানা বৃষ্টির পানি যোগ হইয়া পানির উচ্চতা রবাইরা গেছে। এই পানি না হরালে আমার আমন ক্ষেত নষ্ট সহইবা সাইব। ধারদেনা কইরা জমিতে আমন লাগাইছিলাম। আমন ফসল নষ্ট অইলে সংসার চলামু কেমনে? কর্যের টেওয়াও শোধ দিতে পারুম না। আমার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল।’

মেঘনা ধনাগোদা পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার আলাউদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘গত দুদিনের ভারী বর্ষণে সেচ প্রকল্প এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা হওয়ায় পাম্প হাউজগুলো চালানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে। প্রকৃতপক্ষে অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর নির্মাণ এবং কিছু লোক সরকারি খাল ও ক্যানেল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে বৃষ্টি আসলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকের ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘গত মাসে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ’ কৃষক আবার নতুন করে আবাদ করেছে। গত দুদিন ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু সংখ্যক ফসল ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এভাবে জলাবদ্ধতা চলতে থাকলে কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরিফুল হাসান চাঁদপুর টাইমসকে, ‘শনিবার ও রোববারের ভারী বর্ষণে সেচ প্রকল্পের ভিতরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আমি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। কৃষকের কাছ থেকে পাউবোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও ক্ষোপের কথা আমি শুনেছি। পাউবোর নিস্কাশন খাল গুলো সংস্কার করাই জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। আমি এ বিষয়ে পাউবোর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।’

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) রুহুল আমিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘জলাবদ্ধা নিরসনে ১০টি পাম্প হাউজ করছে। তবে গত শনিবার রাতে ও রোববার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছু সময়ের জন্য কয়েকটি পাম্প বন্ধ ছিল। পরে সেগুলো সচল করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে খেতের পানি সরানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’

নিজস্ব প্রতিবেদক