Home / সারাদেশ / অবশেষে কুমিল্লা নৌপথ দিয়ে ভারতে আমদানি-রপ্তানি শুরু
আমদানি-রপ্তানি

অবশেষে কুমিল্লা নৌপথ দিয়ে ভারতে আমদানি-রপ্তানি শুরু

অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারত-বাংলাদেশ নৌপথে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে । কুমিল্লার গোমতী নদী দিয়ে ত্রিপুরার সোনামুড়া নদী বন্দরে যাচ্ছে বাংলাদেশী একটি নৌযান।

পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচশ’  মেট্রিকটন সিমেন্ট নিয়ে বৃহষ্পতিবার মুন্সিগঞ্জ থেকে যাত্রা করেছে নৌযানটি। এটি আজ কুমিল্লার দাউদকান্দি, তিতাস, মুরাদনগর, দেবীদ্বার হয়ে কুমিল্লার পথে রয়েছে।

বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি অনুমতি পত্রে বলা হয়েছে, দুই দেশের নৌ প্রটোকলের চুক্তি মোতাবেক ট্রায়াল রানটি শুরু হচ্ছে। নৌযানটি আগস্টেই যাবার কথা থাকলেও বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের স্মরণে দেশে মাস ব্যাপী শোক চলায় আগস্টে যাত্রা স্থগিত করা হয়। শোকের মাস শেষ হতেই ৩ সেপ্টম্বর বৃহষ্পতিবার সোনামুড়ার উদ্দেশ্যে সিমেন্ট নিয়ে রওয়ানা হয় ভেসেলটি।

এদিকে এই নৌযানে বহন করা সিমেন্ট এর সত্তাধিকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সিমেন্ট লি: এর কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় নৌযানটি শনিবার কুমিল্লা বিবির বাজার বন্দর এলাকা অতিক্রম করার কথা রয়েছে। কিন্তু পথে ধীরগতির কারনে যথা সময়ে যানটি সীমান্তে পৌঁছাননো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ভেসেলটি ৪ সেপ্টেম্বর সীমান্তে পৌঁছাবার কথা থাকলেও গোমতী নদীর নব্যতা সংকটের ফলে নৌযানটি যথা সময়ে সীমান্তে পৌঁছাতে পারছে না।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট লি: এর রপ্তানি বিভাগের ব্যবস্থাপক ড. সালাহ উদ্দিন জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় দাউদকান্দির গৌরীপুর সেতু অতিক্রম কওে নৌযানটি। কোনো প্রকার যাত্রা বিরতি ছাড়াই শুক্রবার দিনভর চালিয়ে এটি বিকেল নাগাদ কুমিল্লার দেবীদ্বার-বুড়িচং উপজেলা এলাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট লি: এর সিএফও সফিকুল ইমলাম তালুকদার বলেন, এই নৌযাত্রা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি নতুন দিগন্ত উন্তোচিত হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে যুক্ত হতে পেরে নিজেদেও সৌভাগ্যবান বলে মনে করছেন প্রিমিয়ার সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, এটি একটি নতুন পথ, তার উপর বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা নিরীক্ষ করেই যানটি এগুতে হচ্ছে এতে কিছুটা সময় বিলম্বিত হচ্ছে। ভেসেলটি ৪ সেপ্টেম্বর সীমান্তে পৌঁছাবার কথা থাকলেও গোমতী নদীর নব্যতা সংকটের ফলে এবং কোথাও কোথাও তীব্র ¯্রােতের ফলে নৌযানটি যথা সময়ে সীমান্তে পৌঁছাতে পারছে না। তবে, ৫ সেপ্টেম্বর সেটি বিবির বাজার সীমান্তে অবস্থান করতে সক্ষম হবে।

একে স্বাগত জানিয়েছেন ভারত বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (ত্রিপুরা চ্যাপ্টার) এবং ত্রিপুরা মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাগন। তারা বলছেন, আশা, নিরাশার মধ্যেই ফের সোনামুড়ায় জাহাজ আসার বার্তা পেলো রাজ্যে বাসী।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট নিয়ে যাওয়া ভেসেলটিকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকতে পারেন রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রী সহ আরও অনেকেই। সেই লক্ষ্যে চলছে ব্যপক প্রস্তুতি। সংস্কার করা হচ্ছে শ্রীমন্তপুর আন্তর্জাতিক সড়ক।

স্থানীয় সাংবাদিক আবদুস সাত্তার জানান, আগেই সত্তর লক্ষ টাকায় নির্মাণ করা হয় ভাসমান জেটি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নৌ যানটিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সোনামুড়া নদী বন্দর। টুইট বার্তায় নৌযান আসার বিষয়টি ঐতিহাসিক মুহূির্ত বলে আখ্যা দেন মুখ্য মন্ত্রী। তার পর থেকে গোটা রাজ্যে যেন বইতে শুরু হয় খুশীর হাওয়া।

সোনামুড়া নদী বন্দর পরিদর্শনে আসেন ল্যান্ড পোর্ট অথরীটি অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর অজিত কুমার সিং, রাজ্য পূর্ত দপ্তরের চীফ ইঞ্জিনিয়ার এবং এসিঃ চিফ ইঞ্জিনিয়ার। এটি বাণিজ্য বাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অজিত কুমার সিং। তিনি বলেন, শুধু আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নয়, পর্যটনের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে এই নদী পথ।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর জানান, এই প্রথম ভারতের সাথে নৌ যোগাযোগ শুরু হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে দু দেশই উপকৃত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  এরইমধ্যে বিবির বাজার স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে বাণিজ্য হচ্ছে। তবে, নৌ-রুট চালু হলে দু দেশের বাণিজ্যক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, বারত থেকে পাথর আমদানির ক্ষেত্রে এই নৌ-রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, নৌ-পথটি স্বচল রাখতে হলে গোমতী নদীর পানি প্রবাহ বাড়াতে হবে। এতে কুমিল্লা শহরের পানির স্তর যে নীচে নেমে গেছে তাও স্বাভাবক হবে। শনিবার বিআইডব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান নৌযানটিকে বিবির বাজার স্থলবন্দরে বিদায় জানাবার কথা রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

চলতি বছরের মে মাসে ইন্দো-বাংলা প্রোটোকল (আইবিপি) রুটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ সোনামুড়া-দাউদকান্দি রুটটি। এর আগে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মেসার্স রুকনুর ন্যাভিগেশন লিমিটেড এর এম ভি প্রিমিয়ার নামে একটি চার্টার্ড ভেসেকে ট্রায়াল রানের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই অনুমতি পত্রে নৌ যানটি সোনামুড়া নদী বন্দরে যাওয়ার জন্য ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা ব্যুরো: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০