ফরিদগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণে অনিয়ম

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজের ইচ্ছেমতো নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গ অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণের জন্য ১৪ কোটি ৩০ হাজার ৯৪৬ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। যার প্রতিটি ঘরের নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৮ টাকা। দরপত্র আহ্বান করা হলে উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৯টি ঘরের ঠিকাদার নির্বাচিত হন ফরিদগঞ্জ উপজেলার মেসার্স রতন পাটওয়ারী এন্টার প্রাইজ। যার প্রোপাইটার রতন পাটওয়ারী নিজেই।

জানা যায়, কার্যাদেশ পেয়ে ১ আগষ্ট ২০২২ তারিখ থেকে ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন ওই ঠিকাদার। কিন্তু ঠিকাদার নির্মাণ কাজের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও কাদামিশ্রিত বালু ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়াও নির্মাণ কাজে পরিমাণ মতো সিমেন্টও ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে জানান উপকারভোগীরা। এসব নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করলে সাহেবগঞ্জ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত দুলা মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে ঠিকাদারের চরম বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয় এবং মিজানুর রহমান নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।

এ বিষয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা দুলা মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমা জানান,ঘর নির্মানের পুর্বে নিন্মমানের সামগ্রী আমার বাড়িতে পাঠানোর পরে আমি ঠিকাদারকে বলেছি এই নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে বাড়ির কাজ করা যাবে না। ঠিকাদার আমার কথায় কর্নপাত না করে ঘর নির্মান কাজ শুরু করে।

তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্মান কাজ পরিদর্শন করে নিন্মমানের সামগ্রী দেখেও তিনি ঠিকাদারকে কোন কিছুই না বলে চলে যায় এবং তারপরেও ঠিকাদার বারবার পচাঁ ইট, বালি ও কংক্রিট আমার বাড়িতে পাঠাতে থাকে, আমি তখন কাজ বন্ধ করে দেই।

উপকারভোগী প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাছের স্ত্রী আম্মাতের নেছা ও ছেলে মো.মাছুম বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি। কিন্তু ঘর নির্মাণের শুরু থেকেই ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছেন। তারা আমাদের কোন কথাই শুনছেন না। নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করছেন। ’

তারা আরো বলেন,‘ঘরের ইট ভালো না, আর বালু দিয়েছে কাদা কাদা, লাল বালু দেয় নাই। আর রডতো দিয়েছে নামে মাত্র। সিমেন্টও ঠিকমতো দেয় না। আমরা নিষেধ করলেও তারা শুনছেন না। তাদের মনমতো কাজ করে। ’

এ ব্যাপারে ঠিকাদার রতন পাটওয়ারী বলেন,‘সিডিউল মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। তবে ভাল ইটের সাথে কিছু খারাপ ইট যেতে পারে। সেগুলো রাজ মিস্ত্রিকে ঘরে লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি এহেন বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করতে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ’

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কুমিল্লা অঞ্চলের বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশ্রাফুল আলম বলেন,‘নিন্মমানের কোনো সামগ্রী যদি ওই ঠিকাদার ব্যবহার করে থাকে,তাহলে তা ভেঙ্গে পুনরায় কাজ করতে হবে।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদের সাবেক কমান্ডার সহিদ উল্ল্যাহ তপাদার বলেন,‘সরকার এ উপজেলায় অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৯৭ টি ঘর বরাদ্ধ দিয়েছে। ঘর নির্মাণে সর্বোচ্চ বরাদ্ধ দেয়ার পরেও ঠিকাদাররা যদি অনিয়ম করে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আসা করি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সু-নজরে আসবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিল্টন দস্তিদারকে একাধিকবার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছাকে অফিসে গিয়ে না পেয়ে, তার মোবাইলে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণে অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হবে।

শিমুল হাছান,
২৪ আগস্ট ২০২২
এজি

Share