এদিকে সরকারের ২ বছর পূর্তিতে আগামী ৫ জানুয়ারিকে টার্গেট করে বিএনপি যখন সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কাজ শুরু করেছে- তখনই দুই বিদেশি হত্যার সঙ্গে দলটির সম্পৃক্ততার অভিযোগ, শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা দলটিকে নতুন সংকটে ফেলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে প্রেরণ এবং শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা সচল হওয়ায় ফের মামলা আতঙ্কে রয়েছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দলটি মামলায় বিপর্যস্ত। তার ওপর একের পর এক অশুভ বার্তা যেন দিনের পর দিন বিপর্যস্ত বিএনপিকে আরো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। বিএনপি সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।
দলটির নেতাকর্মীরা জানায়, সরকারের বিরুদ্ধে যখনই বিএনপি কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে চাইছে তখনই তাদেরকে নানা রকম চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। মির্জা ফখরুল চিকিৎসা শেষে দলকে সুসংগঠিত করতে যখন কাজ শুরু করেছেন, তখনই তাকে কারাগারে পাঠানোর পাশাপাশি দলটির ৩৫ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরায়ানা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতা তরিকুল ইসলাম, খন্দকার মোশারফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, রুহুল কবির রিজভী ও অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ এখনো হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অনেকে আবার এখনো কারাগারেই দিনাতিপাত করছেন।
এদিকে সরকারের ২ বছর পূর্তিতে আগামী ৫ জানুয়ারিকে টার্গেট করে বিএনপি যখন সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কাজ শুরু করেছে- তখনই দুই বিদেশি হত্যার সঙ্গে দলটির সম্পৃক্ততার অভিযোগ, শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা দলটিকে নতুন সংকটে ফেলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির প্রায় সব নেতাদের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে এখনো দলের বেশিরভাগ নেতাই রয়েছেন পলাতক। এছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানার পর দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন বলে খোদ দল থেকেই অভিযোগ ওঠেছে। ফলে অভিযুক্ত সেসব নেতা হয়তো গ্রেফতার এড়াতে পারছেন কিন্তু দলের সর্বনাশ করছেন বলেও মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই মামলার খড়গ নেমে আসে বিএনপির ওপর। এই প্রবণতা আরো বেড়ে যায় গত ৫ জানুয়ারি রাজপথে চূড়ান্ত কর্মসূচি তথা টানা ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ হরতাল কর্মসূচি পালনের পর।
মূলত গত ৫ জানুয়ারির পর আত্মগোপনে যাওয়া দলটির বেশিরভাগ নেতা কেবলমাত্র মামলার কারণেই গ্রেফতার এড়াতে এখনো প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। আবার মামলায় জর্জরিত অনেক নেতাকর্মীই পারিবারিক চাপে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন মনে করেন, মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রাখার কারণে রাজপথে জোরালো আন্দালেন করতে পারেনি বিএনপি। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী ভূমিকাতো ছিলই। বিরোধ ভুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী ফের রাজপথে নামলে সফলতার মুখ দেখা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। জনগণ বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। জনগণই সরকারতে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকার বিরোধী দলকে ধ্বংসের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না দাবি করে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জনগণের জয় হবেই। হামলা-মামলা করে বিএনপির আন্দালেনকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
সাবেক সেনা প্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে তো গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। এভাবে তো একটা দেশ সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে বিএনপির আন্দালেনকে দমিয়ে রাখতে চাইছে বলেও মনে করেন তিনি। তবে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়াবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাবেক এই সেনা প্রধান।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০১:১০ পিএম, ০৪ নভেম্বর ২০১৫, বুধবার
এমআরআর