ভাবুন আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন, এমন সময়ে আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো হঠাৎ করে। কটু খেয়াল করে দেখা গেলো আপনার পরিবারের কোনো সদস্যই ঘুমের ঘোরে কথা বলে যাচ্ছেন, এমনকি আপনার নিজেরও ঘুমের মাঝে কথা বলার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে! ঘুমের ঘোরে কথা বলার ব্যাপারটা বেশ সাধারণ। কিন্তু এর কারণ কি? আর এর বৈশিষ্ট্যই বা কি?
ভাবুন আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন, এমন সময়ে আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো হঠাৎ করে। কি কারণে ঘুম ভেঙ্গেছে তা চিন্তা করতে করতেই আপনি শুনতে পেলেন কেউ কথা বলছে। এই রাত বিরাতে কথা বলছে কে? একটু খেয়াল করে দেখা গেলো আপনার পরিবারের কোনো সদস্যই ঘুমের ঘোরে কথা বলে যাচ্ছেন! এমনটা হয়তো আমাদের সবার জীবনেই হয়েছে, অথবা অন্য কারও থেকে এমন ঘটনার কথা শুনেছেন আপনি। এমনকি আপনার নিজেরও ঘুমের মাঝে কথা বলার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে! ঘুমের ঘোরে কথা বলার ব্যাপারটা বেশ সাধারণ। কিন্তু এর কারণ কি? আর এর বৈশিষ্ট্যই বা কি?
স্লিপ টকিং
ঘুমের ঘোরে কথা বলা, স্লিপ টকিং বা “সোমনিলোকি” (somniloquy) আসলে ঘুমের এক ধরণের বিভ্রাট, যার ফলে মানুষ ঘুমিয়ে থাকলেও নিজের অজান্তেই কথা বলতে থাকে। কখন মানুষ ঘুমের ঘোরে কথা বলে? অনেকে স্বপ্ন দেখতে দেখতে নিজে থেকেই কথা বলে। আবার অনেক সময়ে দেখা যায়, ঘুমন্ত মানুষটির সাথে জাগ্রত কেউ কথা বললে তিনি তার উত্তর দিচ্ছেন ঘুমের মাঝেই। এই কথা হতে পারে একেবারেই দুর্বোধ্য আজেবাজে শব্দ, বিভ্রান্তিকর কথা এবং নালিশ, আপত্তি, কখনো আবার এই কথা হতে পারে সম্পূর্ণভাবে বোধগম্য এবং গোছানো।
কারা ঘুমের ঘোরে কথা বলেন?
ঘুমের ঘোরে কথা বলার ঘটনা যে কারোই হতে পারে। তবে বংশগতির সাথে এর কিছুটা সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায় এবং নারীদের চাইতে পুরুষ এবং বাচ্চাদের মাঝে বেশি দেখা যায়। তবে এটা বেশি হতে দেখা যায় তখনই যখন ব্যক্তিটি ভুগতে থাকেন ঘুমের অভাবে। অ্যালকোহল এবং ড্রাগ গ্রহণ, জ্বর, বিষণ্ণতা এসব কারণেও দেখা যায় স্লিপ টকিং। এছাড়া স্লিপ ওয়াকিং, স্লিপ অ্যাপনিয়া ইত্যাদি সমস্যার সাথেও এর সংযোগ থাকতে দেখা যায়।
স্লিপ টকিং কখন হয়?
রাত্রের যে কোনও সময়ে এবং ঘুমের যে কোনও পর্যায়ে স্লিপ টকিং হতে দেখা যায়। রাত্রির প্রথম পর্যায়ে মানুষ থাকে গভীর ঘুমে এবং তাদের মস্তিষ্ক তখন “অফ” থাকে, সারাদিনের ক্ষতি মেরামত করতে থাকে। এই সময়ে স্লিপ টকিং সাধারণত অর্থহীন কথাবার্তা হয়ে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঘুম হালকা হয়ে আসে, আর ঘুমন্ত মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে ভীষণ সক্রিয়। সে তখন বিভিন্ন আবেগ, অনুভূতি এবং স্মৃতি নাড়াচাড়া করতে থাকে। এমন সময়ে কেউ ঘুমের ঘোরে কথা বললে তা হয়ে থাকে অর্থপূর্ণ। এমনকি এ সময়ে তার সাথে কথোপকথন করাও সম্ভব হয়।
ঘুমের ঘোরে কথা বলার কোনও ক্ষতি আছে কি?
শারীরিকভাবে কোনো ক্ষতি না হলেও ঘুমের ঘোরে কথা বলার ব্যাপারটা নিয়ে বেশ লজ্জায় পড়তে পারেন মানুষজন। কারণ ঘুমের ঘোরে তারা অনেক সময়েই গোপন কথা বলে ফেলেন। আর তার কথা বলার কারণে তার শয্যাসঙ্গী বা রুমমেটের হতে পারে বিরক্তি এমনকি অনিদ্রার সমস্যা। এ কারণে অনেক সময়ে দেখা যায়, যাদের ঘুমের মাঝে কথা বলার অভ্যাস আছে তারা অন্যদের সামনে ঘুমাতে সংকোচ বোধ করেন।
ঘুমের ঘোরে বলা কথার কোনো তাৎপর্য আছে কি?
মানুষ অনেক সময়েই ঘুমের মাঝে বলা কথার অর্থ উদ্ধার করতে চেষ্টা করে। কিন্তু আসলে এই কথা হতে পারে একেবারেই আজেবাজে অর্থহীন, অথবা অতীত বা বর্তমানের কোনো অভিজ্ঞতার সাথে এর সংযোগ থাকে।
এর কোনো চিকিৎসা আছে?
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ঘুমের ঘোরে কথা বলা একটা ক্ষণস্থায়ী অবস্থা, এটা কিছুদিনের মাঝে ঠিক হয়ে যায় এবং কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। কিন্তু এটা যদি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার হতে দেখা যায়, শয্যাসঙ্গীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, অন্যদের সামনে ঘুমাতে সেই ব্যক্তির সমস্যা হয়- তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই উত্তম। বয়স ২৫ বছর হবার পড়ে যদি বারবার স্লিপ টকিং হতে দেখা যায় তবে তা হতে পারে কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার লক্ষণ।
যা করলে এড়াতে পারেন স্লিপ টকিং
ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন। ঠিক সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন, রাতে ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন, সন্ধ্যার পর চা বা কফি জাতীয় পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। ঠিকমতো ঘুম হলে, দুশ্চিন্তা কম থাকলে স্লিপ টকিং কমে আসে। আর সমস্যা বেশি প্রকট আকার ধারণ করলে সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। অনেক সময়ে সঙ্গী ঘুমে কথা বলেন দেখে তার শয্যাসঙ্গী কানে ইয়ার প্লাগ পরে ঘুমান অথবা জোরে ফ্যান ছেড়ে দেন যাতে কথা শোনা না যায়। এসব ক্ষেত্রে স্লিপ টকিং এর সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আলাদা ঘোরে ঘুমানোই ভালো, এতে সম্পর্কে কোনও ঝামেলা সৃষ্টির সম্ভাবনা কম থাকে।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur