‘স্যার, আপনাকে আমি চিনে ফেলেছি। জীবনে প্রথম ধরা পড়েছি আপনার হাতে। এর আগে আমি জেলখানা চিনতাম না। আপনিই আমাকে জেলখানা চিনিয়েছেন। অনেক কষ্ট করে পাঁচ বছর পর বের হয়েছিলাম স্যার। জীবনে কখনও আপনাকে ভুলব না স্যার। ’
চাঞ্চল্যকর একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতারের পর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনকে একথা বলেছেন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মো.পারভেজ প্রকাশ বিপ্লব (৩৫)।
২০০৮ সালে প্রথম রমজানের দিন ভাড়াটে খুনী হিসেবে একজনকে খুন করার প্রস্তুতি নেয়ার সময় প্রথম বিপ্লবকে গ্রেফতার করেছিলেন কোতয়ালী থানার তৎকালীন এস আই মহসিন। খুনের হাত থেকে একজনকে বাঁচানোর কৃতিত্বের জন্য ২০১০ সালের প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পেয়েছিলেন মহসিন। নয় বছর পর রমজানের মধ্যেই মহসিনের হাতে আবারও ধরা পড়লেন বিপ্লব।
মহসিন বাংলানিউজকে জানান, নগরীর চকবাজারের কসতুরিকা হোটেলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ তসবিহ জাহাঙ্গীরের সেঙ্গে তার চাচাতো ভাই ব্যবসায়ী গুন্নু মিয়ার টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধ ছিল। জাহাঙ্গীর গুন্নুকে খুন করার জন্য তার হোটেলের কর্মচারি বিপ্লবকে নির্দেশ দেয়। বিনিময়ে তাকে পাঁচ লাখ টাকা এবং বিদেশে পাঠিয়ে দেবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর।
‘আমাদের কাছে খবর এসেছিল, ডবলমুরিং এলাকায় প্রথম রমজানের দিন ইফতারির পর নামাজ পড়তে যাবার পথে গুন্নু মিয়াকে খুন করা হবে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর দেরি করিনি। ডবলমুরিং আমার এলাকা না হওয়ার পরও টিম নিয়ে কর্ণফুলী মার্কেটের সামনে অবস্থান নিই। তিন ভাড়াটে বিপ্লব, আলাউদ্দিন ও মিজান নামে তিনজনকে গ্রেফতার করি। গুন্নু মিয়ার প্রাণ রক্ষা করি। ’ বলেন মহসিন
এসময় খুন করতে যাওয়া তিন ভাড়াটের কাছ থেকে ৩টি ককটেল, ২টি ছোরা ও ১টি রিভলবার এবং ২১ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের কথা জানান মহসিন।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানিয়েছিল, তাদের তসবিহ জাহাঙ্গীর নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার দিয়ে খুন করতে পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। জাহাঙ্গীর বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ওসি মহসিন।
বিপ্লবদের গ্রেফতার করে গুন্নু মিয়ার প্রাণ রক্ষার এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সিএমপির কোতয়ালী জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার বাবুল আক্তার। এই সাহসী অভিযানের জন্য তিনিও ২০১০ সালে পিপিএম পেয়েছিলেন।
সেইবার গ্রেফতারের পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের মার্চে জামিনে বেরিয়ে আসে বিপ্লব। এরপর চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসা স্বর্ণের বার বহন, চুরি, পরিবহনে ডাকাতি এবং সর্বশেষ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত হন বিপ্লব। নগরীতে এক পোশাক কর্মকর্তার কাছ থেকে কারখানার এক লাখ ৯৯ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় বিপ্লবকে শনিবার (১০ জুন) রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিজের এই পরিণতির জন্য শৈশবে মা হারানোই অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার সিংহরিয়া সর্দারপাড়ার আলহাজ্ব নূরুল ইসলামের ছেলে বিপ্লব।
পুলিশের কাছে বিপ্লবের দাবি, মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাবা বিদেশে থাকায় সৎ মা নির্যাতন করত। এজন্য তাকে হাটহাজারীর চারিয়ায় নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু নানী মারা যাবার পর বড় মামির অত্যাচারের মধ্যে পড়ে। এজন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। বার্নিশের কাজ শিখে বিপ্লব।
২০০২ সালে বিপ্লবকে তার বাবা সৌদিআরবের জেদ্দা নিয়ে যায়। সেখানে বাগানে কাজ করতে গিয়ে একদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়। এরপর ২০০৪ সালের ৯ অক্টোবর সে দেশে ফিরে আসে। এরপর তার বাবার চাচাতো ভাই তসবিহ জাহাঙ্গীরের কসতুরিকা হোটেলে কাজ নেয়।
‘জাহাঙ্গীর চাচাই আমাকে এই অপরাধ জগতে নিয়ে এসেছে। আমার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। আমাকে খুন করতে পাঠিয়েছে। এর আগে আমি কোনদিন এসব কাজ করিনি। ’
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বাংলানিউজকে বলেন, শৈশব থেকেই ডানপিটে টাইপের ছিল বিপ্লব। সে যা বলছে তা পুরোপুরি সত্যি নয়। তার সঙ্গে অপরাধ জগতের অনেকের জানাশোনা আছে।
থানায় বসে ওসি মহসিনের কাছে তাকে ছেড়ে দেবার আকুতিও জানান বিপ্লব।
‘স্যার আমাকে ছেড়ে দেন। এবার যদি আমি ছাড়া পায়, আর কোনদিন কোন অপরাধ করব না। এটা স্যার এক হাজারে এক হাজার ভাগ সত্যি বলছি। দৈনিক আপনার থানায় হাজিরা দেব।’ বলেন বিপ্লব (বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ৯: ০০ পিএম, ১১ জুন ২০১৭, রোববার
ডিএইচ