মোঃ ইকরাম হোসেন চৌধুরী। সবাই চেনে ইকরাম চৌধুরী নামে। চমৎকার নামের বাহার। বলা চলে রাজকীয় নাম। চাঁদপুর শহর উপ-শহরের মানুষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বুকে লালন করে এ নামটি।
জেলা শহরের রাজনীতি, সমাজনীতি, সাংস্কৃতি, সাংবাদিকতায় যে ক’টি নাম আছে তার মধ্যে এ নামটি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে সাংবাদিকতায় চাঁদপুরের ব্র্যান্ড নাম ‘ইকরাম চৌধুরী’। পথিকৃত। যদি সারাদেশের অজোপাড়া গাঁয়ে সাংবাদিকতায় সফল ব্যক্তির নামের তালিকা করা হয়। সে তালিকায় ইকরাম চৌধুরী নামটি নিশ্চিত শোভাবর্ধন করবে।
মফস্বল তথা রাজধানীর বাইরে সাংবাদিকতা খুবই সহজ। আবার খুবই দুরূহ! বিশেষ করে শূন্য থেকে যে সাংবাদিকতা শুরু করে তার জন্যে সাংবাদিকতা খুবই কঠিন জগৎ। অনেক চরাই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। খুব কঠিন কাজে যে মানুষ সফল হয়; আমার দৃষ্টিতে তিনিই হচ্ছেন পৃথিবীর সফল ব্যক্তিদের একজন। তাদের মধ্যে ইকরাম চৌধুরী অন্যতম। আজকাল অবশ্য বড়ভাই, ছোটভাই, মামা, খালু থাকলে খুব সহজে সাংবাদিক হওয়া যায়। তবে প্রাজ্ঞ বা বোদ্ধা হতে পারেন কতোজন? কথা সে দিকে না বাড়ানো শ্রেয়।
তিনদশক সাংবাদিকতায় ইকরাম চৌধুরী কাজ করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। দৈনিক যুগান্তরে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এখনো কাজ করছেন দেশের শীর্ষ স্যাটেলাইন টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’ অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘জাগোনিউজ২৪ ডট কম এ।
প্রায় দুই দশক ধরে স্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। চাঁদপুর জেলা ও উপজেলার অন্তত তিন ডজন সাংবাদিক তৈরি করেছেন তিনি।
যারা বর্তমানে স্বনামে পরিচিতি পেয়েছেন। ভালো ভালো গণমাধ্যমে কাজ করছেন। সাংবাদিক নেতা বনে গেছেন অনেকেই। বলতে দ্বিধা নেই; ইকরাম চৌধুরী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। চাঁদপুর প্রেসক্লাব একটা ভদ্রচক্রের কাছে কুক্ষিগত ছিলো। তিনিই ওই চক্র থেকে প্রেসক্লাবকে মুক্ত করেছেন। নিজের হাতে আধুনিক প্রেসক্লাব বিনির্মাণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। চাঁদপুর প্রেসক্লাব আজ সারাদেশে উদাহরণতুল্য।
অবশ্য এ প্রেসক্লাব তৈরিতে আরো কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। সে বিষয়ে সুযোগ পেলে অবশ্যই লিখবো।
চাঁদপুরে অনেক সাংবাদিকের অন্যতম গুরুজন ইকরাম চৌধুরী বেশ কিছু দিন অসুস্থ্য। দুইটি বøক ধরা পড়েছে। গত শুক্রবার ওপেন হার্ট র্সাজারি করা হয়েছে। সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে ফিরবেন নিশ্চয়। কিন্তু ডাক্তার যখন বুকের মাঝখানে ছুরি চালিয়েছেন। তিনি বুঝেছেন কিনা জানি না; কতটা সহনশীল মানুষ ইকরাম চৌধুরী। অবশ্য এনেসথিসিয়া ইঞ্জেকশান নিশ্চয় বুঝেছে; কতটা সহজ ও সরল মানুষ অবস করেছে সে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি। জীবন যুদ্ধ জয়ি; দুঃখজয়ি এ মানুষটি তখন নিরবে ছুরির পোচ সহ্য করেছেন। সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে ফিরবেন বলে।
২০১১ সালের দিকে একজন দুষ্ট সাংবাদিকের দৌরাত্মে একটি স্থানীয় পত্রিকায় ছাড়তে বাধ্য হই। আমি তখন শুধুমাত্র রেডিও টুডে এফএম ৮৯.৬ এ কাজ করি। ভূঁইফোঁড় একটা জাতিয় পত্রিকায় কাজ করি। উল্টো টাকা দিয়ে পত্রিকায় চাঁদপুর আনতে হয়।
একমাস আনার পর দ্বিতীয় মাসে আর টাকা দিতে পারলাম না। পত্রিকাও আসলো না। ভাবলাম কি করা যায়? বন্ধুবর এ কে এম শাহেদ তখন দৈনিক চাঁদপুর দর্পণের বিশেষ একটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আমাকে নিয়ে গেলেন ইকরাম চৌধুরীর কাছে।
এই প্রথম চেয়ারে বসে সামনা সামনি কথা বলছি। খুব আদার আর ভালোবাসা মাখা কণ্ঠে আমাকে বললেন; চিন্তা করো না। শাহেদ আমাকে সব বলেছে। তুমি কাজ শুরু করো। প্রতিত্তুরে আমি বললাম কি হিসেবে? তিনি বললেন; সহকারী বার্তা সম্পাদক। আমি রাজি হয়ে গেলাম। কাজ শুরু করলাম।
একদিন হঠাৎ করে ইকরাম ভাই বললেন; শুনো পলাশ। আমার পত্রিকায় এক সাংবাদিক কাজ করতো। নাম বললাম না। সে প্রতিদিন একটা খুব ভালো নিউজ বাসা থেকে নিয়ে আসতো। একদিন দুইদিন তিনদিন। এভাবে বেশ কিছুদিন পর আমার মনে খটকা বাঁধলো।
সেদিন হঠাৎ করে আমি তাকে কিছু তথ্য দিয়ে বলি নিউজটা লিখো। ছেলেটা অনেক সময় কাটালো। কলম কামড়াতে কামড়াতে চামড়া তুলে ফেললো। ছটপট করতে লাগলো। কিন্তু নিউজ লিখতে পারলো না। তারপর থেকে সে আর আমার পত্রিকা অফিসে আসেনি। আজো নয়।
ইকরাম ভাই কথাগুলো আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছেন। কারণ; আমি বাসায় নিউজ লিখে অফিসে জমা দিতাম। ইকরাম ভাইয়ের কথা শুনে বুঝলাম তিনি আমায় সন্দেহ করছেন। আমি খুবই অবাক হলাম ও কষ্ট পেলাম। তার মানে আমাকেও এভাবে ভাবছেন? পরদিন থেকে আমি নাজিরপাড়াস্থ দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ অফিসে বসে নিউজ লিখতে শুরু করি।
টানা কয়েকদিন খুব মোটা মোটা হেডলাইনে আমার নিউজ চাঁদপুর দর্পণ পত্রিকায় শোভা পায়। অফিসে নিউজ লেখা চালিয়ে যাই শুধু ভাইকে বুঝানো জন্যে; আমি কপি করি না। আমি নিউজ লিখতে পারি। অবশ্য মাত্র ছয়মাস কাজ করার পর স্থানীয় দৈনিক আলোকিত চাঁদপুর পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। তাই ইকরাম ভাইয়ের সাথে কাজ করার সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। তবে যতদিন ছিলাম; ভাইয়ের কাছে অনেক শিখেছি। কত ভালো ভালো নিউজ হতে পারে সে ধারণা পেয়েছি।
দৈনিক আলোকিত চাঁদপুর পত্রিকাটি প্রথম যেদিন প্রকাশ করবো তার আগের দিন ইকরাম ভাইকে সালাম করে বলি আমার জন্যে দোয়া করবেন। তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন; অনেক বড় হবে তুমি। তোমার নিউজসেন্স খুব ভালো। লেগে থাকো; অর্থ না হোক সুনামের মালিক হবে।
তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। টেলিভিশনে কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ইকরাম ভাইয়ের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। দেখা হয়েছে; কথা হয়েছে।
চলতে চলতে দেখে হলে মুখ ভর্তি চওড়া হাসি দিয়ে বলতেন; পলাশ টিভিতে তোমার নিউজ দেখেছি। অনেক ভালো নিউজ। খুব সুন্দর হয়েছে। ভাই; আপনার মুখে ‘সুন্দর’ শব্দটি শুনতে আমি উদগ্রীব হয়ে আছি। আপনাকে দেখে দেখে হতাশায় আত্মবিশ্বাসী হতে চাই। আপনার মতো সাহসি মানুষকে সাহস দেয়ার মতো সাহস আমার নেই। তবে বলতে পারি; আপনার কিচ্ছু হবেনা ভাই। আপনি ভালো হয়ে যাবেন। সুস্থ্য হয়ে ফিরবেন আমাদের মাঝে। আপনাকে দেখে দেখে আমরা আরো শিখতে চাই। আপনার হাসি ল্যাপ্টে থাকা মুখ চির অমলিন থাকুক। এটা আশা নয় বিশ্বাস।
লেখক- কাদের পলাশ,
সাংবাদিক; একাত্তর টিভি।