মডেল পরিচয়ে প্রবাসীর সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম। প্রবাসী দেশে ফিরলে ফাঁদে ফেলে বিয়ে। অতঃপর স্ত্রী অধিকারে প্রবাসী স্বামী থেকে বাগিয়ে নিলেন দামি গাড়ি, জুয়েলারি ও দামি মোবাইল ফোন। ফ্ল্যাট কেনা-বেচার ব্যবসা করার অজুহাতে প্রবাসী স্বামী থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন এক কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা!
অতঃপর স্বামী দেশে ফিরে জানেন, অনেক আগেই তাকে তালাক দিয়েছেন সেই মডেল।
এমন সব প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। এর আগে স্বর্ণার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা ঠুকেন কামরুল হাসান নামে এক সৌদি প্রবাসী।
তার মামলার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার সি ব্লকের একটি বাড়ি থেকে স্বর্ণাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। অভিযোগ উঠেছে, অভিনেত্রী স্বর্ণার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলই সর্বস্বান্ত হননি। এখন পর্যন্ত ২৮ জনের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে বিয়ে করে স্বর্ণা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
২৮ জনের বিষয়ে তথ্য না দিলেও কামরুল ইসলামের প্রতারিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, রোমানা স্বর্ণার বিরুদ্ধে আমরা এমন প্রতারণার অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অনেককে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে সর্বস্বান্ত করেছে রোমানা। টেলিফোনে প্রতারিতরা এসব অভিযোগ করছেন। আমরা তাদের থানায় আসতে বলেছি।
ডিসি হারুন অর রশীদ আরো বলেন, রোমান স্বর্ণা একাই নন তার মা, ভাই, ভাইয়ের বউ এমনকি তার ছেলেও এসব প্রতারণায় তাকে সহযোগিতা করে। তারা সবাই কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কামরুল দেশে আসার পর তাকে বাসায় নিয়ে উলঙ্গ করে তার ছবি তুলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে। তারা টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। স্বর্ণা ছাড়াও তার মা আশরাফুল ইসলাম শেইলি (৬০) ও ছেলে আন্নাফিসহ (২০) পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণা ও তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য এ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান ডিসি হারুন অর রশীদ।
ভুক্তোভোগী প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েল গণমাধ্যমকে বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের পর রোমানা স্বর্ণা আমার সঙ্গে প্রথমে ভালো সম্পর্ক গড়ে। এরপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা নেয়। আমি দেশে আসার পর আমাকে বাসায় ডাকে। আমি যাই। গেলে তারা আমাকে কিছুটা একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর আমার আপত্তিকর ছবি তুলে নেয়। তাদের কথামতো কাজ না করলে ছবিগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। স্বর্ণা আমার থেকে স্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে নেয়। এভাবেই সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। তার মোবাইল, ঘড়ি, গাড়ি আর সবই আমার কিনে দেওয়া। সে যে দামি গাড়িতে চড়ছে ওটা আমার। তার হাতে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ঘড়িও আমার দেওয়া। হাতে দুটো আইফোন প্রো মোবাইল ফোনও আমি কিনে দিয়েছি। সবমিলিয়ে আমার থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বর্ণা। একদিন শুনি মোহাম্মদপুর থানায় আমার নামে জিডি করে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু বিষয়টি মিথ্যা। সে ডিভোর্স দেয়নি। আমি এমন কোনো পেপার পাইনি। অবশেষে আমি আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
কামরুল ইসলাম জানান, স্বর্ণার বাসায় গেলে তাকে কিছুদিন আটকে রাখে তারা। স্বর্ণাকে বিয়ে করার কথা শোনার পর কামরুলের আগের স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, ২০১৫ সালে স্বর্ণা অভিনীত একটি সিনেমা মুক্তি পায়। এছাড়া একাধিক বিজ্ঞাপনের মডেলও ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে সৌদি প্রবাসী কামরুল হাসানের সঙ্গে ফেসবুকে স্বর্ণার পরিচয় হয়। ২০১৯ সালের মার্চে তারা বিয়ে করেন। এরপর কামরুল সৌদি আরব চলে যান। গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা এবং ব্যবসা করাসহ নানা অজুহাতে কামরুলের কাছ থেকে এক কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন স্বর্ণা। সম্প্রতি কামরুল দেশে ফিরলে স্বর্ণা জানায়, সে কামরুলকে অনেক আগেই তালাক দিয়েছেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর কামরুল মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সন্ধ্যায় লালমাটিয়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সাবেক স্বামীর মামলায় গ্রেফতার মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে শুক্রবার আদালতে তোলা হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে তাকে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির পাঁচদিনের রিমান্ড চান মোহাম্মদ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম খান।
বিনোদন ডেস্ক,১২ মার্চ ২০২১