শেষ পর্যন্ত বৃটিশ বাংলাদেশী বিজনেন্স ফোরাম (বিবিবিএফ) এর দেয়া শর্ত মেনে এজেন্ট, রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের কিংফিসার বিক্রেতার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে কিংফিসার বিয়ারের ‘‘আল্লা খচিত’‘ গ্লাস।
আন্তর্জাতিক বিয়ার কোম্পানী কিংফিসার বৃটিশ বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট গুলোর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ব্যান্ডের কিংফিসার বিয়ার বিক্রি করে থাকে। বিয়ারের সাথে প্রতিটি রেষ্টুরেন্টে কাষ্টমারদের সার্ব করার জন্যে সর্বরাহ করা হয় ফ্রি গ্লাস।
যদিও কিংফিসার কোম্পেনীর গ্লাসের লগোতে ‘‘আল্লা খচিত লিখা রয়েছে’‘ তা এতোদিন কারো নজরে না পড়লেও আজ থেকে ছয় সপ্তাহ পূর্বে কিংফিসারের লগোর ভেতর ‘‘ আল্লা-খচিত লিখা’’ ধরা পড়ে।
সর্বপ্রথম বিষয়টি নজরে আসে বিবিবিএফ‘র ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক উদ্দিনের। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিবিবিএফ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন। বৃটিশ বাংলাদেশী বিজনেন্স ফোরামের চেয়ারম্যান এস আই খান, সেক্রেটারী অলি খান ও মালিক উদ্দিন সংগঠনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেন কিংফিসার কোম্পেনীর সাথে।
এনিয়ে বিবিবিএফ নেতৃবৃন্দ কয়েক দফা জরুরী বৈঠকে বসেন। কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কিংফিসার কোম্পেনীকে প্রত্যেক বিক্রেতার কাছে লিখিত ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, রেষ্টুরেন্ট সমূহ থেকে সকল গ্লাস তুলে নিতে হবে সেই সাথে নতুন গ্লাস সর্বরাহ করতে হবে, ও লগো পরিবর্তন করতে হবে।
বিবিবিএফ এর এক্সিকিউটিভ কমিটির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে কিংফিসার কোম্পেনীর কাছে লিখলে তারা বিবিবিএফ এর দেয়া সকল শর্ত পূরণ করতে রাজি হন। সাথে সাথে কিংফিসারের পক্ষ থেকে বিবিবিএফ এর চেয়ারম্যান , সেক্রেটারী ,ভাইস চেয়ার ও এক্সিকিউটিভ কমিটির সকলের কাছে ইমেল বার্তায় দু:খ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ওই দিনই ইমেল ও ফোনে বিবিবিএফ নেতৃবৃন্দকে জানানো হয় বৈঠকে কিংফিসার ডেলিগেট উপস্থি হয়ে বিবিবিএফ নেতৃৃবৃন্দের সাথে আলোচনা ক্রমে সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন। গত ৮ অক্টোবর দুপুর এক ঘটিকায় লুটনের আনন্দ মহল রেষ্টুরেন্টে বিবিবিএফ এর এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠক বসে ।
বৈঠকে উপস্থিত হন কিংফিসার বিয়ারের ইউরোপের সি-ই-ও ডেমন সোরব্রিক। এস আই খানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী অলি খানের সঞ্চালনায় বৈঠকে বিস্তারিত তুলে ধরেন ভাইস চেয়ারম্যান মালিক উদ্দিন। তিনি বলেন বিয়ারের গ্লাসে “ আল্লা’’ লিখা জঘন্য অপরাধ, যা মুসলমানেরা মেনে নিতে পারেনা।
এর মাধ্যমে মুসলিমদের অবমাননা করা হয়েছে। বিবিবিএফ চেয়ারম্যান কিংফিসারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। বৃটিশ বাংলাদেশী বিজনেন্স ফোরামের সেক্রেটারী অলি খান বলেন যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর যাতে এর সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হয় এনিয়ে আমরা খুব সতর্কতার সাথে কাজ করেছি।
কিংফিসার কোম্পেনীর সি-ই-ও ডিমন সোয়ারব্রিক ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিজনেন্স ফোরামের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিজনেন্স ফোরামের বেঁধে দেয়া সকল শর্ত মেনে কোম্পানীর পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ও দুঃখজনক। আমাদের অজান্তেই এমনটি ঘটেছে, জিজাইনার বা গ্লাস প্রস্তুতকারক কোম্পানীর কোনও ছলছাতুরী আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখার আশ্বাস প্রদান করেন কিংফিসারের সিইও।
তিনি বলেন, আমরা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কাউকে হেও প্রতিপন্ন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। যদি আমাদের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্যে কেউ দুঃখ পেয়ে থাকেন, আমরা এর জন্যে ক্ষমা প্রার্থী। শর্ত মাফিক আটচল্লিশ ঘণ্টার ভেতর হার্ডফোর্ডশায়ার এবং বেডফোর্ড শায়ার এলাকা থেকে সব গ্লাস উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ছয় মাসের ভেতর সমগ্র ইউরোপ থেকে এই গ্লাস তোলে নেবার অঙ্গীকার করেন কিংফিসার কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বিবিবিএফ এর এসিসটেন্ট সেক্রেটারী খলিলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ, ভাইস চেয়ার ছুরুক মিয়া, অর্গেনাইজিং সেক্রেটারী ফিরুজুল হক, আব্দুর রশিদ বাবুল সককারী অর্গেনাইজিং সেক্রেটারী, সদস্য এম এ মজনু, টেজারার শামসসুল আলম মাখন, ভাইস চেয়ার ্এলাইছ মিয়া মতিন, আব্দূল বাসিত, আব্দুল হাই পারভেজ ও মোহাম্মদ আলী।
এই বৈঠকে সংগঠনের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন আসুক আহমদ এমবিই, সৈয়দ জাকির হোসাইন, আলী আখলাকুল, ইফতেখার আলম,মারুফ আহমেদ, বদর উদ্দিন চৌধুরী, নূরুল হক, আনোয়ার হোসেন , নজরুল ইসলাম, সেলিম আহমদ, আনোয়ার হোসেন জুবা, মনোহর খান ও ফারুক আহমদ সহ সংগঠনের শতাধিক সদস্য।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিজনেন্স ফোরাম বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ বৃটেনে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সৃষ্টি ও দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে আসছে এবং প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে গুণীজনদের স্বীকৃতি প্রদান করে আসছে। কিংফিসার কোম্পেনী বছরে ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও রেষ্টুরেন্টগুলোর মাধ্যমে মাল্টি মিলিয়ন পাউন্ডের ব্যবসা করে থাকে।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০২:১৬ পিএম,১২ অক্টোবর ২০১৫, মঙ্গলবার
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫