বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো আজ ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য।’
নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারা দেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করছে।
নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ (৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সহযাত্রী হিসেবে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর আশা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ার কাজে পুরুষের মতো সমান অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, নারী তাঁর মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে। সারা বিশ্বে তাই আজ বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি। তিনি বলেন, এ দেশের নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেমন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তেমনিভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উদ্যাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সকাল ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইউএন উইমেন এর অফিস প্রধান গীতাঞ্জলি সিং।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাব আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নারী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকেরা অংশ নেবেন।
৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি দিবসটি উপলক্ষে বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ বছর সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘নারী-পুরুষের সমতা, টেকসই আগামীর মূলকথা’। এতে সারা দেশের নারী অধিকার সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়কে রুখে দিতে তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী কার্যক্রম ও প্রচারণা অভিযান পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে ‘সহিংসতার ভয় আর নয়’ শীর্ষক এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। শোভাযাত্রার পরে ডিআরইউ নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী দিবসের বিশেষ সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
এছাড়াও ক্রিশ্চিয়ান উইমেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার বেলা দুইটায় রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘উইমেন্স ক্যাফে: টেকসই ভবিষ্যতে নারীর অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন মেহের আফরোজ চুমকি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।
এদিকে ৮ মার্চ প্রথম প্রহরে অনলাইনে হ্যাশট্যাগ (#) ‘আঁধার ভাঙার শপথ’ ক্যাম্পেইন পালন করেছে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। প্রতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই আয়োজন করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘রাতের আঁধার ভাঙার’ প্রতীকী আয়োজন। অনুষ্ঠানে আমরাই পারি জোটসহ সকলে অনলাইনে যুক্ত হয়ে রাতের আঁধার ভাঙার শপথ নেন এবং মোমবাতি প্রজ্বলনের ছবি হ্যাশট্যাগ #আঁধারভাঙারশপথ পোস্ট করেন।
এই ক্যাম্পেইনে সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নারীর জন্য প্রতিটি সময়, স্থান ও মুহূর্তকে নিরাপদ করার জোরালো দাবি জানানো হয়।
আমরাই পারি জোটের ৪৮টি জেলার জেলা জোট সদস্যবৃন্দ, নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও আমরাই পারি জোটের চেঞ্জমেকারবৃন্দ এ আয়োজনে অংশ নেন। এতে শপথ বাক্য পাঠ করান আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের উপদেষ্টা ও এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম। এতে সভাপতিত্ব করেন আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের কো-চেয়ারপারসন শাহীন আনাম।