আধুনিক মুসলিম পৃথিবীর নেপথ্যে মুসলমানদের ১০ আবিষ্কার

‎Saturday, ‎25 ‎July, ‎2015  06:07:00 AM

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক:

আজকে যে কফির কাপে চুমুক না দিলে অনেকের দিন শুরু হয় না, সে কফির উৎপত্তিস্থল কিন্তু ইটালি নয়, ইয়েমেন। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে টুথব্রাশ পর্যন্ত, মুসলিমদের আবিস্কারের পরিধী বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। মুসলমানদের এমন অনেক আবিস্কারের ফলেই আজ পৃথিবীবাসী আধুনিক ও উন্নত জীবন ধারন করতে পারছে। মুসলমানদের নিত্যনতুন আবিস্কারের ঐতিহ্যের উপর রচিত “1001 Inventions” বইতে মুসমলমানদের এমন এমন একহাজার ১টি আবিস্কারের বর্ণনা রয়েছে, যেগুলো আধুনিক পৃথিবীর ভিত গড়ে দিয়েছে।

বইটির সম্পাদক এবং ফাউন্ডেশন অব সায়েন্স, টেকনোলজি এন্ড সিভিলাইজেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর সালিম আল হাসানি বলেন, আমরা মনে করি, রেঁনেসা থেকে গ্রীক, এই সময়ে জ্ঞানের উৎকর্ষ ঘটেছে। এটা অামাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। লন্ডনের সায়েনস মিউজিয়ামে এই বইটির প্রদর্শনী চলছে এখন। হাসানি আশা করছেন, একসময় স্পেন থেকে পর্তুগাল, ইটালি থেকে চীন পর্যন্তে যে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিলো, এ প্রদর্শনী থেকে মানুষ তার ধারণা পাবে। আর আধুনিক পৃথিবী স্থাপনে মুসলমানদের অত্যাশ্চর্য সব আবিস্কার দেখেও চমকে যাবে মানুষ। পৃথিবী পাল্টে দেয়ার মত মুসলমানদের সেরা ১০ টি আবিস্কারের কথা বর্ণনা করেছেন হাসানি।

১.সার্জারী আনুমানিক ১০০০ সালের দিকে বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার আল জাহরাওয়ি প্রায় সার্জারীর উপর প্রায় পনের’শ পৃষ্ঠার একটি এনসাইক্লোপেডিয়া প্রকাশ করেন। পরবর্তী পাঁচশ বছর পর্যন্ত এ বইটি ইউরোপে বিভিন্ন মেডিকেল রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তিনিই সর্বপ্রথম সিজার অপারেশন করেছিলেন এবং শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত ফরসেপ’র (শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত চিমটে বা সাঁড়াশি-জাতীয় অস্ত্র) আবিস্কারকও তিনি।

২.কফি নবম শতাব্দীর দিকে ইয়েমেনে প্রথম কফি প্রস্তুত করা হয়। প্রথম প্রথম শুধু সুফিরা কফি ব্যবহার করতো, রাত জেগে ইবাদত করা জন্য। পরে একদল শিক্ষার্থী এ কফি মিসরের রাজধানী কায়রো নিয়ে যায়। এরপরই সমগ্র আরব সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে কফি। ত্রয়োদশ শতকের দিকে কফি তুর্কিকে পৌঁছায়। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীর দিকেই প্রথম কফির দানাকে সিদ্ধ করে কফি বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইটালির একজন ব্যবসায়ী এ উপায়ে প্রথম কফি প্রস্তুত করেন।

৩. ফ্লাইং মেশিন আব্বাস বিন ফিরনাসই প্রথম ব্যাক্তি যিনি সত্যি সত্যি একটি ‍উড়ার যন্ত্র আবিস্কার করতে পেরেছিলেন এবং সেটির সাহায্যে আকাশে উড়তে পেরেছিলেন। নবম শতাব্দীর দিকে তিনি পাখির আকৃতির মত বিশাল একটি কস্টিউম তৈরী করেছিলেন। এরপর স্পেনের কর্ডোবায় এর সাহায্যে কিছু সময় আকাশে উড়তে সক্ষম হন। পরে মাটিতে পড়ে গেলে তার পাঁজরের হাঁড় ভেঙে যায়। ফিরনাসের এ অবিষ্করই একশ বছর পরে বিখ্যাত ইটালিয়ান আবিস্কারক লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে উড়োজাহাজের মডেল তৈরীতে সাহায্য করেছে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় ৮৫৯ সালে প্রিন্সেস ফাতিমা আল ফিরহি মরক্কোর ফেজে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন, যেটি থেকে ডিগ্রী সনদ দেয়া হতো। পরে তার বোন মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি মসজিদ স্থাপন করেন। পরে পুরো কমপ্লেক্সটিনাম হয় অল কারুইয়িন মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ১২০০ বছর পরে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টি তার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ঐতিহ্য শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বে উচ্চতম শিক্ষা প্রচলনে আল ফিরহি বোনদ্বয়ের এ অবদান আজও মুসলিম নারীদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

৫.বীজগণিত সপ্তম শতকে পার্সিয়ার বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মূসা আলখোয়ারিজমির রচিত বই ‘আল জাবর ওয়াল মুকাবলা’ বইটি থেকেই মূলত বীজগণিত বা অ্যালজেবরা নামের উপত্তি। তার সময়ে বীজগণিতের ভিত্তি স্থাপন করে আধুনিক গণিতের পথকে অনেকটাই কুসুমাস্তীর্ণ করে তোলেন। গাণিতিক সংখ্যার বাইরে বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে অংক ধারনা তার মাথা থেকেই আসে। আল খোয়রিজমিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি সংখ্যার উপর ’পাওয়ার’ এর প্রচলন করেন।

৬. অপটিকস বা আলোকবিদ্যা আধুনিক আলোকবিদ্যার অনেক শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়েছিলো মুসলমানদের দ্বারা। এক হাজার সালের দিকে ইবনে আল হাইথাম প্রমাণ করেন যে, বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো মানুষের চোখে প্রবেশ করলেই কেবল মানুষ সে বস্তু দেখতে পায়। তার এ ধারণা ইউক্লিড এবং পটোমির ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দেয়। এ দুজন বলেছিলেন, চোখের নির্গত আলো দ্বারাই মানুষ কোন বস্তু দেখতে পায়। মানুষের চোখের সাথে ক্যমেরার সাদৃশ্যও আবিস্কার করেন এ বিখ্যত পদার্থবিদ।

৭.মিউজিক মুসলিম মিউজিশিয়নরা ইউরোপের মিউজিকে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিলো। এমনকি তখনরকার ওয়েষ্টার্ন ইউরোপের শাসকেরা বাগদাদ এবং কর্ডোবার মিউজিকের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চেয়েও্র পারেনি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে যেসব বাদ্যযন্ত্র এসেছে তাদের মধ্যে এমন কিছু যন্ত্র ছিলো, ধারণা করা হয়, পারে এগুলো থেকেই ভায়োলিনের উৎপত্তি। আধুনিক মিউজিকের অনেক স্কেলও আরবী বর্ণ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়।

৮.টুথব্রাশ মহানবী (সা:)ই দাঁত পরিস্কার এবং সতেজ নিশ্বাসের জন্য ব্যবহার করতেন মেসওয়াক। সে মেসওয়াকই পরবর্তীতে বিবর্তিত হয়ে আবিষ্কৃত হয় টুথব্রাশ এবং টুথপেস্ট।

৯. গাড়ির স্টিয়ারিং এখন যেকোন গাড়ি, বা যানবাহনে স্টিয়ারিং দেখা যায়। মুসলমানরাই এ স্টিয়ারিং এর প্রচলন করেন। বলাই বাহুল্য, এ আবিস্কারের ফলে বিপ্লব ঘটেছে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এখন এ স্টিয়ারিং যে শুধু যান চলাচলে ব্যাবহৃত হচ্ছে তা নয়, বরং ভারী জিনিসপত্র উত্তেলনের কাজেও এটি ব্যবহার হচ্ছে। ১২শতাব্দীতে আল জাঝারির আবিষ্কৃত এ প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

১০.হাসপাতাল আধুনিক বিশ্বে একই সাথে ওয়ার্ড এবং টিচিং সেন্টারের যে হাসপাতাল ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তার সূচনা হয়েছিলো নবম শতকে, মিসরে। ১৮৭২ সালে মিসরের কায়রোতে আহমাদ ইবনে তুলুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ হাসপাতালটি সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতো। কায়রো থেকেই পরে সমগ্র বিশ্বে এ ধরনের হাসপাতাল ব্যাবস্থা ছড়িয়ে পড়ে। –

চাঁদপুর টাইমস : ডিএইচ/২০১৫।

চাঁদপুর টাইমস প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Share