বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যায়ে চাঁদপুরে আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই দীর্ঘ ৫ বছরেও। সবে মাত্র কনসালটেন্ট ফার্ম নকশা তৈরী করেছে। নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নকশা অনুমোদন করলে আগামী মাসের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যেতে পারে।
অথচ ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর চাঁদপুর আধুনিক নদী বন্দর টার্মিনাল ভবন ও আনুসঙ্গিক নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন নৌ পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ৩ বছরেও কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে আলোর মুখ দেখেনি চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণ।
চাঁদপুর নৌবন্দরে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি নিরসনে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘চাঁদপুরে আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প’ নামক একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। শুরুতে প্রকল্পটি শুধু চাঁদপুর নদীবন্দর নির্মাণ নিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে এই প্রকল্পে চাঁদপুরের সঙ্গে ঢাকা (লালকুঠি ঘাট), বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল উন্নয়ন সংযোজন করা হয়। ফলে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ও মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ধার্য করা হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
২০১৬ সালের পর কেটে গেলো আরও ৫টি বছর। এখনও পর্যন্ত চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনাল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। ৬৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ফাইলবন্দি হয়ে আছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক কায়সারুল আলম জানান, চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনালের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও কার্যক্রম একেবারেই যে বন্ধ রয়েছে তা কিন্তু নয়। হয়তো কাজের গতি স্লোথ হয়েছে। কোভিড সিচুয়েশন না থাকলে আরও আগে কাজ শুরু হতো।
বিআইডব্লিউটিএ, চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আমজাদ হোসেন জানান, আমি যতটুকু জানি কনসালটেন্ট ফার্ম টার্মিনালের ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে। প্রকল্প অফিসে ডিজাইনের ড্রাফটিং কাজ চলছে।
প্রকল্পের কনসালটেন্ট টিমের প্রস্তাবিত ডিজাইনের ড্রাফটিং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমরা বলতে পারবো না। প্রকল্প অফিস ভালো বলতে পারবে।
জানা যায় বর্তমানে এ প্রকল্পটির নাম ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-১ (বিআইডব্লিউটি-১)’। উক্ত প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফরহাদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পটি ২০১৬ সালের শেষের দিকে একনেকে অনুমোদন হলেও প্রকল্প অফিস ও জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করতে ২০১৭ সাল হয়ে যায়। প্রকল্পের জিওতে (গভর্নমেন্ট অর্ডার) নির্দেশনা ছিলো কাজ শুরু করার পূর্বে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। তাই কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে দিতে ২০১৭ পার হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ দিলে তারা স্টাডি ও ডিজাইনের জন্য ২ বছর সময় চায়। দুই বছর পর ২০২০ সালের শুরুতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় তা চার বছরে গড়ায়। তবে কনসালটেন্ট ফার্ম তাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করেছে। তারা স্টাডি শেষে ডিজাইনও জমা দিয়েছে। নতুন টার্মিনাল গঠন করতে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছে।
কনসালটেন্ট ফার্মের কাজ যখন সম্পন্ন তবে কেন দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না তার ব্যাপারে প্রজেক্ট ডিরেক্টর ও বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিচালক মাহমুদ হাসান সেলিম জানান, কনসালটেন্ট ফার্ম যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সংশোধনী দিলে তা ফের কনসালটেন্ট ফার্মকে পাঠানো হবে। কনসালটেন্ট ফার্ম সংশোধন করে জমা দিলে তাতে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন নেয়া হবে। সকল অনুমোদন ফাইনাল হলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে।
তবে প্রজেক্ট ডিরেক্টর বলেন, চাঁদপুর টার্মিনালের নকশা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নকশার অনুমোদন দিলে আগামী মাসের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যেতে পারে। সববিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী চার মাসের মধ্যে দৃশ্যমান কাজে হাত দিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর চাঁদপুর আধুনিক নদী বন্দর টার্মিনাল ভবন ও আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন নৌ পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। বর্তমানে তিনি নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। অথচ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ৩ বছরেও চাঁদপুর আধুনিক নৌ বন্দর টার্মিনালের কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চাঁদপুর করেসপন্ডেট