রাজধানীর বনশ্রীতে দুই সন্তান হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে অন্য কারো সঙ্গে ‘খারাপ সম্পর্ক’ রয়েছে কিনা, তা স্বীকার করাতে র্যাব চাপ সৃষ্টি করেছিল বলে তিনি আদালতে বিচারকের প্রশ্নোত্তরে জানিয়েছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বিচারকের প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘দুই সন্তানের জন্য তার কষ্ট হয়।’
সব প্রশ্ন শেষে বিচারক জানান, অভিযুক্ত মা মাহফুজা সুস্থ রয়েছেন।
রাজধানী রামপুরার বনশ্রীতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নুসরাত আমান অরনী (১২) ও আলভী আমান (৭) নামে দুই ভাই-বোনের রহস্যজনক মৃত্যুর হয়। এ ঘটনায় নিহতদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন জড়িত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় রামপুরা থানা পুলিশ। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার দুপুর সোয়া ৩টার দিকে মাহফুজা মালেক জেসমিনকে আবারও ঢাকা মহানগর হাকিম আলমগীর কবির রাজের সামনে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ।
এ সময় বিচারক অভিযুক্ত আসামি মাহফুজাকে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আদালতে প্রথমবারের মত নিহত দুই শিশুর মা মাহফুজা সবার সামনে মুখ খোলেন। তিনি এ সময় সঠিকভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দেন। মাহফুজার কাছে বিচারক তার আদালতে আসার কারণ? ছেলে-মেয়ের নাম? ছেলে-মেয়ে কোন ক্লাসে ও স্কুলে পড়ত? তার স্বামী কি করেন? তার গ্রামের বাড়ি কোথায়? কেন ছেলে-মেয়েকে খুন করেছেন? এ রকম বেশ কিছু প্রশ্ন করেন।
ঢাকা মহানগর হাকিম আলমগীর কবির রাজের প্রশ্নের জবাবে মাহফুজা বলেন, ‘সন্তান দুটোকে মেরে ফেলেছি, তাই আদালতে এসেছি। ছেলের নাম আলভী আমান, মেয়ের নাম নুসরাত আমান অরনী। মেয়ে ভিকারুন্নেছা নূন স্কুল এন্ড কলেজে ৫ম শ্রেণিতে এবং ছেলে হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে নার্সারিতে পড়ত। আমার স্বামী গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। আমি ক্রোধের বশে এ হত্যাকাণ্ড করি। এ কাজের সময় আমার মাথা ঠিক ছিল না।’
বিচারক মাহফুজাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তারা কোনো ধরণের জোর বা চাপ দিয়েছিল কিনা?
এ সময় মাহফুজা বলেন, ‘একবার চাপ সৃষ্টি করেছিল।’
কেমন চাপ দেওয়া হয়েছিল-মহানগর হাকিমের এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহফুজা বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্য কারো খারাপ সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তা স্বীকার করতে চাপ সৃষ্টি করেছিল র্যাব।’
তাকে প্রশ্ন করা শেষে বিচারক বলেন, ‘তিনি সুস্থ মানুষ। তার কোনো মানসিক সমস্যা নেই।’
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালমা হাই টুনি বলেন, তিনি রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করেছেন। তার কারণে সন্তানেরা আমাদের বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাই তাকে রিমান্ড দেওয়া হোক। যে পর্যন্ত ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হবে না সে পর্যন্ত তাকে রিমান্ডে নিতে হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. সাফায়েত আলী বলেন, অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায় না। আগে তার মানসিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন। চিকিৎসার পর তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে তদন্তে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার সুচিকিৎসা হোক, তাহলে তার কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
বাদিপক্ষে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, আরও কেউ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা এ ঘটনার পুরো তথ্য জানতে রিমান্ড জরুরি। ন্যায়বিচারের জন্য এ রিমান্ড জরুরি। সুষ্ঠু তদন্ত ও সত্য ঘটনা উৎঘাটনের স্বার্থে আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মো. সাফায়েত আলী বলেন, তিনি (মাহফুজা) যদি সুস্থ হতেন তাহলে ১৬৪ এ জবানবন্দি দিতেন। তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন। অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, তিনি (মাহফুজা ) সুস্থ আছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে অসুস্থ মনে করলে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতেন।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৯:২২ অপরাহ্ন, ০৯ মার্চ ২০১৬, বুধবার
এমআরআর