Home / জাতীয় / আদালতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে কাঠগড়ায় দুই মন্ত্রী
আদালতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে কাঠগড়ায় দুই মন্ত্রী

আদালতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে কাঠগড়ায় দুই মন্ত্রী

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথবারের মতো আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে যাচ্ছেন সরকারের দুই জন মন্ত্রী। আদালতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে এর আগে কোনো মন্ত্রিপরিষদ সদস্যকে আদালতের সম্মুখীন হতে হয়নি বলে জানিয়েছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।

সাবেক মন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানিয়েছেন এর আগে এভাবে বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীকে আদালতে তলব করা হয়েছে বলে তারা মনে করতে পারছেন না। আদালত এবং প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে মন্ত্রীরাও এভাবে কখনো মন্তব্য করেছেন বলেও জানেন না তারা। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটির (বিচার বিভাগের) প্রধান। বিচার বিভাগ সংবিধানের ব্যাখ্যাকারী, রক্ষক এবং বিচারপ্রার্থীর শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রেরগুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ এবং এর প্রধানকে নিয়ে মন্ত্রীদের করা মন্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। –

তিনি বলেন, ‘এর আগে কোনো সরকারের মন্ত্রীকে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হয়নি। একইভাবে বিচার বিভাগ এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এমন মন্তব্য কোনো মন্ত্রী করেছেন বলে আমার জানা নেই’।

মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আগামী ১৫ মার্চ সশরীরে তলব করেছেন। এর আগে ১৪ মার্চ আদালত অবমাননার কারণে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দুই মন্ত্রীর মন্তব্যে ‘স্থম্ভিত’ হয়েছেন জানিয়ে এটা বিচার বিভাগের উপর ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন রায়ে।

গত ৫ মার্চ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাশেম আলীর মামলা শুনানি করার দাবি তুলেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী এবং সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিএনপি-জামায়াতের সুরে কথা বলছেন’।

একই অনুষ্ঠানে মীর কাশেমের মামলায় আপিল আদালতে প্রসিকিউটরদের সমালোচনা করায় প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে ‘অতিকথন’ হিসেবে অভিহিত করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এসকে সিন্‌হা বিচার বিভাগ নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য অনুচিত হয়েছে মন্তব্য করে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, একজন বিচারপতি মামলার শুনানিতে কি বলছেন তা মিডিয়াতে আসা উচিত না। বিচারপতি মামলার শুনানির সময় তদন্ত বা যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতেই পারেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের অসন্তুষ্টির কথা গণমাধ্যমে না বলাই উত্তম’।

মন্তব্য জানতে চাইলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমার জানামতে কোনো মন্ত্রীকে এভাবে আদালতে তলব করা হয়নি’। এর আগে দুই জন মন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি আদালত ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মত দিয়েছেন।

প্রধান বিচারপতি এবং উচ্চ আদালত নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল দুই মন্ত্রীর ‘নজিরবিহীন’ মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা উঠে।

৬ মার্চ দলীয় একটি অনুষ্ঠানেও খাদ্যমন্ত্রী আগের দিনের ভাষায় প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করে কথা বলেন। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে দুই মন্ত্রিকেসুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই মন্ত্রীর মন্তব্যের সময় প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। তিনি দেশে ফেরার পর আপিল বিভাগের সকল বিচারপতির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে গত সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুই মন্ত্রীকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। পূর্ব নির্ধারিত বিদেশ সফর থাকায় ১৫ মার্চের পরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার আবেদন করবেন জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যা বলব আদালতের সামনেই বলব।

অন্যদিকে রাজধানীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তলব হওয়া অপর মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমাদের বিচার বিভাগ যে স্বাধীন এটা (মন্ত্রিদের তলব) তারই প্রমাণ। অবশ্যই আদালতে যাব এবং নিজের কথা তুলে ধরব। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিচার বিভাগের প্রতি পূর্ণ আস্থা জানিয়ে বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, সরকারের সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফকে হজ্ব বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু, এক পর্যায়ে সরকার দল ও সরকার তার উভয় জায়গার পদ কেড়ে নিলে আত্মসমর্পণ করে জেলবাসী হয়েছিলেন বর্তমানে জামিনে থাকা লতিফ।

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১২:০৫ অপরাহ্ন, ০৯ মার্চ ২০১৬, বুধবার

এমআরআর