আত্মহত্যা থেকে বাঁচাবে ফেসবুক!

‘এই অসহ্য পরিস্থিতি আর সহ্য করতে পারছি না। কী হবে এই বৃথা জীবন রেখে। ভাবছি, চলে যাব বহু দূরে, অজানায়। বিদায় বন্ধুরা’…

ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎই আপনার চোখে পড়তে পারে এই ধরনের স্ট্যাটাস। হয়তো আপনারই কোনো বন্ধুর প্রোফাইলে! হয়তো চরম কোনো অবসাদের মুহূর্তের হাহাকার উঠে এসেছে ওই লেখায়। হয়তো সেই মুহূর্তে নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারেন সেই বন্ধু। এমনকি বেছে নিতে পারেন আত্মহননের পথও। এমন পোস্ট দেখলে কী করবেন আপনি? কীভাবে বাঁচাবেন প্রিয়জনকে?

সমাধান খোঁজার পথে এবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ফেসবুক। ওই ধরনের কোনো লেখা ফেসবুকের দেয়ালে পোস্ট করা হলেই যাতে সম্ভাব্য আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষটিকে সেই চরম পদক্ষেপ নেওয়া থেকে আটকানো যায়, সেই লক্ষ্যে একগুচ্ছ নতুন সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন বা ‘টুল’ নিয়ে এলো ফেসবুক সংস্থা।

সমগ্র প্রক্রিয়াটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির বন্ধুরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল আগেই। এবার অস্ট্রেলিয়াও ঢুকে পড়ল ফেসবুকের নতুন এই উদ্যোগের সীমানায়। বাংলাদেশে কবে হবে, জানা যাচ্ছে না এখনই।

অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের এই উদ্যোগে ফেসবুক সামিল করেছে ‘বিয়ন্ড ব্লু’ এবং ‘ন্যাশনাল ইউথ মেন্টাল হেল্থ ফাউন্ডেশন’-এর মতো সংস্থাকে, যারা সে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক জায়গায় রাখতে কাজ করে চলেছে৷

কী ভাবে কাজ করবে নতুন টুলগুলি?

সবথেকে জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মধ্যে অন্যতম হওয়ায় ফেসবুকের এ ক্ষেত্রে একটা সুবিধা রয়েছে। সেটা হলো, বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ এর সদস্য এবং তারা প্রায়ই নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা কথা ছবি, লেখায় বা বিভিন্ন ‘শেয়ারড’ পোস্টের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রকাশ করে থাকেন। যদি কোনো অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তা হলে ফেসবুকে মন্তব্য করে বা অন্য কোনোভাবে সেই সম্ভাব্য পদক্ষেপের ইঙ্গিত তিনি দিতেই পারেন।

সেটা দেখে যদি ফেসবুকে কোনো বন্ধুর সন্দেহ হয়, তা হলে নতুন টুলগুলি ব্যবহার করে সরাসরি ফেসবুককে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে পারবেন। অথবা খবর পাঠাতে পারবেন সংশ্লিষ্ট আপত্কালীন পরিসেবামূলক সংস্থাগুলির কাছে। সঙ্গে-সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে ফেসবুক।

যাকে ঘিরে সম্ভাব্য আত্মহত্যার সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাকে একগুচ্ছ মেসেজ তথা প্রশ্ন পাঠাবে তারা। যেমন, তিনি ওই সঙ্কটের মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চান কি না? তিনি একা রয়েছেন কি? মানসিক অবসাদ কাটাতে কোনো মনোবিদের সাহায্য চান কি না ইত্যাদি।

সেইসঙ্গে থাকবে ‘সুইসাইড প্রিভেনশন ফ্লো’। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পর-পর এমন সব লেখা ও ছবি দেখিয়ে যাবে ফেসবুক, যাতে তার মধ্যে ধীরে ধীরে ‘জীবনমুখী’ মানসিকতা ফিরে আসে, মৃত্যুচিন্তার নেতিবাচকতা কেটে যায়। সূত্র : এই সময়

বন্ধুদের মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি বা ফেসবুকের মেসেজ লিঙ্কও পাঠানো হবে ওই ব্যক্তিকে। অবস্থা বিশেষভাবে সঙ্কটজনক বুঝলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তথা স্থানীয় প্রশাসনকেও সতর্ক করতে পারে ফেসবুক। তাকে সেই মুহূর্তে কীভাবে সাহায্য করা যাবে, সে ব্যাপারে তার ‘ফেসবুক বন্ধু’দের কাছেও ধারাবাহিক বার্তা যেতে থাকবে।

ফেসবুকের মুখপাত্র গতকাল সোমবার জানান, এ ব্যাপারে নজরদারি রাখার জন্য কোম্পানির একটি টিম চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করবে। সঙ্কটের গুরুত্ব বিচার করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এক-একটি ঘটনার সমাধানের চেষ্টা করা হবে। কী ধরনের পাল্টা বার্তা যাবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বয়সকেও বিবেচনার মধ্যে রাখা হবে।

‘ফেসবুকে আমাদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো মানুষকে নিরাপদে রাখা’, বলেন ওই মুখপাত্র।

নিউজ ডেস্ক  ।। আপডেট : ০৩:২০ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

ডিএইচ

Share