আজ ১ অগ্রহায়ণ কৃষি দিবস । বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। গ্রাম বাংলার মাঠে মাঠে এ সময় ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। ধানকাটা,ঝাড়াই-মাড়াই এবং সংরক্ষণের কাজে কেটে যায় কৃষাণ-কৃষাণীরা সারা বেলা। শীতের আগমনী বার্তা ভেসে বেড়ায় সন্ধ্যার বাতাসে। শীতকালীন আগাম সবজি উঠতে থাকে গ্রাম ও শহরের হাট-বাজারে। তবে এবার বন্যায় ও অতিবৃষ্ঠিতে জমিতে এখনও পানি জমে রয়েছে ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো হিংস্র ছোবল না পড়লে এ মাসটা হয়ে ওঠে গ্রামীণ মানুষের কাছে অত্যন্ত আনন্দ মুখর। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে বয়ে চলে আনন্দের বন্যা ও নবান্নের উৎসব। নবান্নের মাঝেও কৃষকের দৃষ্টি থাকে আগামী ফসলের দিকে। রবি মৌসুমের ফসলের প্রতি পরিকল্পনা করে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের চাষাবাদের। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অপরিসীম।
গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন তথা স্বনির্ভরতা অর্জনে আবহমানকাল ধরে কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার জাতীয়ভাবে ‘কৃষিদিবস‘ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে অনেক আগে থেকে জাতীয়ভাবে কৃষি দিবস পালিত হলেও বাংলাদেশে এর প্রচলন বেশি দিনের নয়।
জানা যায় – যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন প্রদেশে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে কৃষি দিবস পালনের রেওয়াজ আছে। আইওয়াতে ২০০৫ সাল থেকে কৃষি দিবস পালন শুরু হয়েছে। সেখানে তারা ১০ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপি কৃষি দিবস পালন করে, উত্তর ক্যারোলিনাতে ৩১ জুলাই এবং ১ ও ২ আগস্ট এ ৩ দিন ১১ পর্বে উদযাপিত হয় কৃষি দিবস। যুক্তরাষ্ট্রেও কিমব্যালে গেল ২৭ সেপ্টেম্বর ১৩ পর্বে পালিত হয়েছে ৮৫তম কৃষকদিবস। আফগানিস্তানেও ২০ মার্চ নওরোজ উদযাপনের দিন পালিত হয় কৃষি উৎসব। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ‘যাসনিদেহকান’ বা কৃষকের উৎসব।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে ‘কৃষিদিবস পালিত হয় ২০০৮ সালের ১ অগ্রহায়ণ, ১৫ নভেম্বর। প্রতিবছর ১ অগ্রহায়ণ এ জাতীয় কৃষি দিবস পালন হবে। জাতীয়ভাবে প্রতি জেলা-উপজেলায় এ দিবস উপলক্ষে কৃষি মেলার আয়োজন করা হয়। কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রেষ্ঠ কৃষককে জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষি যন্ত্রপাতি উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করে কৃষি কাজে আরও আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করে।
দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞদেও মতে, অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজ তলা তৈরির সময় রোদ পড়ে এমন উর্বর সেচ সুবিধা যুক্ত জমি বীজতলা ও জন নির্বাচন করতে হবে। করোনার কারণে চাঁদপুরে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি ।
প্রসঙ্গত , চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। মেঘনা, ডাকাতিয়া ,মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনগ্রস্থ ,নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি।
এ ছাড়াও মেঘনার পশ্চিমতীরে রয়েছে ১১টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ও বেশ কটি এলাকা। এ এলাকার প্রায় ৩ লাখ অধিবাসী সরাসরি কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। ধান, গম, আলু,পাট, আখ, ভ’ট্টা, পেঁয়াজ,রসুন, তিল, মুগ-মুসারি, মিষ্টি আলু, সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা- চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ২৩ হাজার ৩ শ’৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দুটোতে। জেলার মোট খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন।
প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ ২২ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩ শ ২২ মে.টন।
চাঁদপুরে ১২টি হিমাগার ও ১টি বীজভান্ডার রয়েছ্। যাতে ৬০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ। চাঁদপুরের সব উপজেলাতে কম-বেশি হারে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। নৌ-পথ,সড়কপথ ও রেলপথ থাকায় যে কোনো কৃষিপণ্য চাঁদপুর থেকে যে কোনো জেলায় আমদানি-রফতানি করা সহজ।
মতলব ব্রিজ ,চাঁদপুর-রায়পুর ব্রিজ, চাঁদপুর পুরাণবাজার ব্রিজ ও হাজীগঞ্জ–রামগঞ্জ ব্রিজ ,ফরিদগঞ্জ ,এমএ ওয়াদুদ ব্রিজ ইত্যাদি ব্রিজগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছ্। সড়ক পথের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সকল উপজেলায় রয়েছে আধুনিক খাদ্যগুদাম।
দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার,সেচ সুবিধা, সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি,উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহ্ী । জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে ।
আবদুল গনি , ১৬ নভেম্বর ২০২০ (১ অগ্রহায়ণ ,১৪ ২৭ বঙ্গাব্দ ) /strong>
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur