Home / চাঁদপুর / আজ শিক্ষক সমাজের গৌরবময় বিশ্ব শিক্ষক দিবস
Teacher-chandpurtimes

আজ শিক্ষক সমাজের গৌরবময় বিশ্ব শিক্ষক দিবস

আজ ৫ অক্টোবর ২০১৭ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। সারা বিশ্বের ন্যায় চাঁদপুরে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর এ দিবসটি পালন হয়ে থাকে।

এবার হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানলো ছুটিতে থাকায় বিশ্ব শিক্ষক দিবসের সেমিনারটি ৫ অক্টোবর তারিখের পরিবর্তে ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হবে।

শিক্ষক দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “স্বাধীন ভাবে পাঠদান, শিক্ষক হবেন ক্ষমতাবান”। সেমিনারে একটি প্রবন্ধ এবং ডিজিটাল শিক্ষার সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম উপস্থাপন করা হবে। আমন্ত্রিত অতিথি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি সহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের পূর্ব নির্ধারিত ৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে সুচিন্তিত মতামত প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পটভূমি ঃ-
১৯৬৬ সালের অক্টোবর মাসে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শিক্ষকের মর্যদা সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং মর্যদা সম্পর্কে একিট যৌথ সুপারিশমালা প্রণয়ন করে যা শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নেয়াসহ শিক্ষকদের মৌলিক ও অব্যাহত প্রশিক্ষন, নিয়োগ ও পদন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষন ও মূল্যায়ন, দায়িত্ব ও অধিকার, শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, দেন দরবারের কৌশল সংক্রান্ত দক্ষতা, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে মাইলফলক হিসেবে পৃথিবী ব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে।

৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর মহাপরিচালক এবং শিক্ষকের মর্যদা সংক্রান্ত বিশেষ আন্তঃসরকার সম্মেলনের সভাপতি যৌথ ভাবে এ সুপারিশ মালায় সাক্ষর করেন।

ওই দিনকে বিশেষ ভাবে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের তৎকালিন মাহাসচিব ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

সেই থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গিকার নিয়ে “বিশ্ব শিক্ষক দিবস” উদযাপিত হয়ে আসছে। এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো “Teaching in freedom, Empowering Teachers” বাংলা অনুবাদ “স্বাধীন ভাবে পাঠদান, শিক্ষক হবেন ক্ষমতাবান”। এতে শিখনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবং শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে জাতিসংঘ ভূক্ত ১৯৩ টি সদস্য দেশ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২০৩০ সালকে সামনে রেখে (Transforming our world the 2030 Agenda for Sustainable development) প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এ প্রস্তাবনায় আগামী ১৫ বছরে অর্জন যোগ্য ১৭টি গোল এবং ১৬৯ টি টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। এটি সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ এবং তৎপরবর্তী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন ও সনদ এর ওপর ভিত্তি করে প্রনিত হয়েছে। ২০৩০ এজেন্ডার ৪র্থ লক্ষ্য হচ্ছে সবার জন্য একীভূত এবং সাম্যভিত্তীক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করণ সহ জীবন ব্যাপী শিক্ষার সুযোগ প্রসার (Ensure inclusive and equitable quality education and promote lifelong learning for all)। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিক্ষকদের স্বাধীন ভাবে পাঠদান করা এবং ক্ষমতায়নের বিষয়টি ওপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং মর্যদা সম্পর্কে একটি যৌথ সুপারিশমালায় বলা হয়েছে শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অবাধ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ভোগ করবে। বিশেষ করে কোন শিক্ষা উপকরণ বা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী তা বিচার করার ব্যাপারে শিক্ষকরাই যেহেতু যোগ্যতা সম্পন্ন কাজেই অনুমোদিত কর্মসূচির কাঠামোর আওতায় এবং শিক্ষা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় শিক্ষা উপকরণ অভিযোজন, পাঠ্য বই নির্বাচন এবং শিক্ষন পদ্ধতির প্রয়োগে তাদের অত্যাবশকীয় ভূমিকা থাকতে হবে। নতুন কোর্সবই, পাঠ্যবই এবং শিখন সহায়ক উপকরন উন্নয়নে শিক্ষক ও তাদের সংঘঠনের অংশগ্রহন থাকতে হবে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস শুধুমাত্র শিক্ষকদের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের কথাই বলেনা, বরং আগামি প্রজন্মের মানসম্মত শিক্ষার কথা চিন্তা করে শিক্ষকতা পেশাকে আরো আকর্ষনীয় এবং শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করনের কথাও বলে। শিক্ষকদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করলে শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটবে।

কর্মসূচি আয়োজনের উদ্দেশ্য:
-আইএলও/ইউনেস্কো সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতার উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত অর্থায়নের বিষয় নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকার্ষন করা।
-জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজির ৪ নম্বর লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষকদের কার্যকর ভূমিকা পালন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

লেখক- মোঃ আবুল বাসার
প্রধান শিক্ষক- হাসানআলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
প্রধান উপদেষ্ঠা ও সাবেক সভাপতি- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি।

করেসপন্ডেন্ট
: : আপডেট, বাংলাদেশ ১২:০৩ এএম, ০৫ অক্টোবর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Leave a Reply