রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রবিবার (১২ নভেম্বর) সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আবারও সরকারকে আলোচনার আহ্বান জানাতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিবছর ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে বিএনপি। এ উপলক্ষে এবার আজ এ সমাবেশ করছে দলটি।
দুপুর ২টায় এ সমাবেশ শুরু হবে। তবে বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ রকম মোট ২৩ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আজকের এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই বছর পরে বড় ধরনের রাজনৈতিক কোনো সমাবেশে আসছেন বিএনপি প্রধান। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি—দুই দলেরই নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষাপটে এ সমাবেশকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে।
ঢাকায় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ জনসভা হয়েছিল ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি, নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে।
আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খালেদার সর্বশেষ সমাবেশ হয় ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি।
এদিকে সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ দিয়ে রাজধানীতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং বাসায় বাসায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
একে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করে দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন বিএনপি প্রধান’ : গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনই এই গণসমাবেশের মূল লক্ষ্য নয়। সেই সঙ্গে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য চলমান যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে, জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া যে মেসেজ বা বাণী দেবেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সমগ্র দেশের সচেতন মানুষ মনে করে। এই গণসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে জাতি যে মেসেজ পাবে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ’
দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি মনে করছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। সরকার স্বস্তিতে নেই। হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই এখন জামিনে আছে। তাই মাঠে নামছে তারা। তা ছাড়া সরকার কিংবা প্রশাসনও এখন নমনীয় মনে হচ্ছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন এবং আন্দোলন—দুটি বিষয়কে সামনে রেখে খালেদা জিয়া বক্তব্য দিতে পারেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি যেহেতু সব সমাবেশে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে সেহেতু তাদেরকে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। যেটা আমি বলি, সর্বৈব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। বিএনপির এ ধরনের সমাবেশে কোনো বিশৃঙ্খলা বা এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ’
ফখরুল বলেন, ‘বরং দুঃখজনকভাবে প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে খবর পাচ্ছি, তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল, গোলমাল, মারামারি হচ্ছে; এমনকি একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত করছে। ’
ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ ধরনের ভিত্তিহীন, মিথ্যা তথ্য না দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে পজিটিভ কথা বলুন। ’
অনুমতি দেওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি : সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ডিএমপির সম্মতিপত্র পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এই মাত্র ডিএমপির একটি সম্মতিপত্র আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। ২৩টি শর্ত দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে পুলিশ এ সম্মতি দিয়েছে।
এই সমাবেশ সফল করতে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিপূর্বে আমরা ১২ ঘণ্টার নোটিশেও সমাবেশের সফল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ’ অতীতের চেয়ে এবার ডিএমপি একটু আগে সম্মতি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানান। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামানের স্বাক্ষরে এই সম্মতিপত্র বিএনপির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
যে ২৩ শর্তে অনুমতি :
সমাবেশের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে—বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে; ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসে’ এমন কোনো ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, ব্যক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না; লাঠিসোঁটা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না; মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা যাবে না; উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না; ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী বা জননিরাপত্তাবিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগে উদ্যান বা তার আশপাশের রাস্তা-ফুটপাতে সমবেত হওয়া যাবে না; যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়—এমন কিছু করা যাবে না; নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে রেজল্যুশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে; নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা রাখতে হবে; অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না।
গ্রেপ্তার-তল্লাশি-মামলার অভিযোগ : মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘এই পর্যন্ত যে তথ্য আমরা পেয়েছি, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারসহ পুলিশি তাণ্ডব চলছে। ’
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি আতিক উল্লাহ আতিক, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা, ছাত্রদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিন্টু, আশরাফুর রহমান বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. শুক্কুর আলীসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ছাড়া শুক্রবার রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিনকে বাসায় না পেয়ে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।
এদিকে নতুন করে যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, মোস্তফা জামাল রিয়াদ, মনিরুল ইসলাম রাহিমী, ভিপি হানিফ, সাবেক কমিশনার আব্দুল মজিদ, রমনা থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হক মাসুম, যুবদল নেতা শাহীন, টুটুল, কাকনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার রাতে শাহজাহানপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় প্রস্তুতি বৈঠকের পর বাসায় ফেরার পথে ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার, নিঃশর্ত মুক্তি এবং বাসায় বাসায় পুলিশি তল্লাশি বন্ধের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতা মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল্লাহ আল নোমান, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, রুহুল কবীর রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর শরাফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জনসভাস্থল পরিদর্শন : জনসভাস্থলের নিরাপত্তার পাশাপাশি মঞ্চ নির্মাণসহ সার্বিক বিষয়ের তদারকি করতে গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। আবদুল্লাহ আল নোমান, রুহুল কবীর রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেলকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান মির্জা আব্বাস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘অনুমতিপত্র হাতে আসার পর পরই মাইক, মঞ্চ তৈরির সরঞ্জামসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র উদ্যানে নেওয়া হচ্ছে। আশা করি রাতের মধ্যে এসবের কাজ শেষ হবে। ’
শান্তিপূর্ণ হলে সহযোগিতা, বিশৃঙ্খল হলে ব্যবস্থা—কাদের : এদিকে বিএনপির আজকের সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে সরকার সহযোগিতা করবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ’
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে শিখ ধর্মগুরু নানকের ৫৪৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। গুরুদুয়ারার অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশে অবস্থানরত শিখ সমপ্রদায়ের মানুষকে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাসে সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে ‘গুরুপূরব ও নগর কীর্তন-২০১৭’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ২০ এএম, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ রোববার
এইউ