Home / জাতীয় / আজ বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস
বঙ্গবন্ধুর

আজ বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস

বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৭ মার্চ। এ দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি ঘিরে সরকারিভাবে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সে আলোকে চাঁদপুরেও ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে।

প্রশাসনের বাইরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ, সদর ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং জেলা ছাত্রলীগ পৃথক পৃথক কর্মসূচি পৃথক স্থানে ঘোষণা করেছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মের ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফুর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। জন্মের পর তাঁর আকিকা অনুষ্ঠানে নানা শেখ আবদুল মজিদ নাতির নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। নাম রাখার সময় নানা ওই বাড়ির অন্যদের বলেছিলেন, আমার দেয়া এ নামটি এক সময়ে বিশ্বে আলোচিত এবং খ্যাতি লাভ করবে।

বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটেছিলো টুঙ্গিপাড়ায়। শিশু বয়সে বাড়ির গৃহশিক্ষকদের কাছে তাঁর লেখাপড়া শুরু। এরপর পূর্বপুরুষদের গড়ে তোলা গিমাডাঙ্গা টুঙ্গীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর স্কুলজীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে গোপালগঞ্জের মিশনারী স্কুল ও মাদারীপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন। বঙ্গবন্ধু খেলাধুলায়ও বেশ ভালো ছিলেন। ছাত্রজীবনে তাঁর ফুটবল খেলার প্রতি ছিলো যথেষ্ট আগ্রহ। ওই আগ্রহের সূত্র থেকে গোপালগঞ্জের ফুটবল টিমে তিনি অংশ নেন। গোপালগঞ্জের স্কুল থেকে মেট্রিক পাস শেষে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে তিনি ভর্তি হন। বেকার হোস্টেলে থাকার সুবাদে সে সময় বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। জড়িয়ে যান হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দোলনে। শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী ও রাজনৈতিক জীবন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন।

পাকিস্তান-ভারত বিভক্ত হওয়ার সময়ের দাঙ্গা দমনে বঙ্গবন্ধু সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মানুষের মাঝে মিশে গিয়ে তিনি কাজ করতেন। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সেখানকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি রাজপথে নেমে পড়েন। ওই সময় সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট চলাকালীন তিনি প্রথম গ্রেফতার হন। কিছুদিন জেলে থাকার পর মুক্তি পান। এদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন, ‘উর্দুই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।

সে সময় বাঙালিরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাত্রসমাজের আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৯ সালে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এরপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ৬ দফা আন্দোলন। ৬ দফা আন্দোলনের এক দফা ছিলো বাঙালি জাতির স্বাধীনতা। বলা বাহুল্য, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে গণতন্ত্রকে কখনোই স্থিতিশীল হতে দেয়া হয়নি।

সে থেকে সোচ্চার হয়েছিলো বাঙালি জাতি। ১৯৫৮ সালে সেনাপ্রধান আইয়ুব খান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে শাসন ও শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত করবার জন্যে যে স্বৈরতন্ত্রের পত্তন করেছিলেন, তারই বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ দীর্ঘদিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়েছিলো। ওই সময় আইয়ুববিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন, জেল, জুলুম ও মিথ্যা মামলায় হয়রানি ভোগ করতে হয়েছে।

সে সময় জাতির এই মহান নেতা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অকুতোভয়ে দেশ ও জাতির মুক্তির সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন বলেই তাঁর আজীবনের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আজ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যে অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি দিয়ে দেশকে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও গড়ে তুলতে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

অথচ এ স্বাধীন দেশে তখনও আইয়ুব-ইয়াহিয়ার দোসররা দেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, জনগণের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা, নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও সময়োচিত পদক্ষেপ সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে দেশকে সঠিক গণতন্ত্রের পথে যখন তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ওই ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর উপর চরম আঘাত হানে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ওই ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাযজ্ঞ গোটা জাতিকে স্তব্ধ ও বিস্মিত করে তোলে।

আজ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে।
বিস্তারিত কর্মসূচি

১৬ ও ১৭ মার্চ ২০২০ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, সকল সরকারি-বেসরকারি,সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও জেলা- উপজেলায় জাতীয় পতাকা ঊত্তোলন, চাঁদপুর সরকারি কলেজে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ,বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, স্ব স্ব বিভাগীয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহে সীমিত পরিসরে কেক কাটা ও মিষ্টান্ন বিতরণ,মসজিদ,মন্দির,গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে মিস্টান্ন ও খাবার বিতরণ, হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার ও মিষ্টান্ন বিতরণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর ভিডিও ক্লিপ ও ফুটেজ প্রচার,রচনা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা , বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাখী দের মধ্যে ক্যুইজ প্রতিযিাগিতা ও প্রদর্শনী,বিনামূল্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে বিতরণ, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান , জেলার সব ক্লিনিকে ২০ % হারে ছাড়ে দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা চাঁদপুর ও মতলব সেতু টোল ফ্রি ,সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ,১৭ মার্চের ভোরে প্রথম ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর জন্যে বিশেষ পুরস্কার ও আলোচনা সভা ,সাস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

কর্মসূচি সুন্দরভাবে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যেই একটি জেলা কমিটি ও চারটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ১৩ টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ।

বঙ্গবন্ধুর জম্মশতবার্ষিকীতে জেলা আ’লীগের কর্মসূচি

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জম্মশত বার্ষিকীতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন । কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা । আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দকে ঐ দিন সকাল ৮ ঘটিকার সময় হাসান আলী স্কুল মাঠে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী (দুলাল)।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ১৭ মার্চ ২০২১