আজ সোমবার (২৩ এপ্রিল) থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ শুরু হলো। চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার থেকে পুষ্টি সপ্তাহ উদযাপন শুরু হচ্ছে। ‘খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন’ স্লোগানে শুরু হচ্ছে আজ সোমবার (২৩ এপ্রিল)থেকে। চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকারে মানুষের বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রমের মধ্যেই গত দশ বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ। দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির চিত্র উঠে এসেছে । এতে উদ্বেগ বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায়ই দেশে শুরু হচ্ছে পুষ্টি সপ্তাহ।
এক প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, অন্তত আড়াই কোটি লোক প্রতিদিনের খাদ্যে পরিমাণমতো পুষ্টি পাচ্ছে না। ৬০ শতাংশ নারী এখনো প্রয়োজনের তুলনায় কম পুষ্টিমানের খাবার খান। ৪০ শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে খর্বকায় হয়ে জন্মাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু অনিয়মের কারণে সরকারের চলমান জাতীয় পুষ্টি প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও তদন্ত করে দেশের বেশ ক’টি উপজেলার পুষ্টি কার্যক্রমে দুর্নীতির প্রমাণ পায়। তবে দায়ীদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া পুষ্টি খাত উন্নয়নে সরকারের ২০১১ সাল থেকে শুরু করা পাঁচ বছর মেয়াদি ৫৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার সম্পর্কে অসচেতনতার কারণেও অনেকে অপুষ্টিতে ভুগছে। অথচ দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি পর্যায়ে জাতীয় পুষ্টি সেবা কার্যক্রমে কোনোই গতি নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান এ প্রসঙ্গে গতকাল রোববার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি ও পুষ্টি উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে প্রথমবারের মতো জাতীয় পুষ্টি সেবা সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে খাদ্য অধিকার আন্দোলনের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনে সরকারের অগ্রগতি আছে। সরকার গরিবদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এরপরও অনেক মানুষ খাদ্যে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাচ্ছে না দারিদ্র্যের কারণে।’
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা.আবদুল আজিজ মনে করেন, ‘অপুষ্টিতে ভোগার অন্যতম কারণ হলো অসচেতনতা। কোনো খাদ্যে কী পরিমাণ পুষ্টি আছে, কোন কোন খাবার দরকার, তা অনেকেই জানে না। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি মানুষের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, শিশু সংস্থা , বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
সংস্থাগুলোর সবশেষ যৌথ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, ‘গত দশ বছরে এখানে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ। নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ দরকারি পুষ্টিমানের খাবার পাচ্ছে না। তবে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়লেও জনসংখ্যার অনুপাতে কমেছে।’ ‘বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি ২০১৭’ শিরোনামে সেপ্টেম্বরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের দেশীয় প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগবেদার বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫৫ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার। তারা সব রকমের অধিকার ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় শহরের বস্তিগুলোয় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪০ শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে খর্বকায়। বয়সের তুলনায় তাদের উচ্চতা কম।
গত কয়েক বছরের তুলনায় বস্তির শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১১-২০১২ সালের জরিপ অনুযায়ী, বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোয় খর্বকায় শিশুর হার ছিল ৫১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,সরকার খাদ্য ও পুষ্টিকে গুরত্ব দেয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সরকারের জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫)-এর চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশের ১৮ শতাংশ গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার। অপুষ্টির কারণে ২৩ শতাংশ শিশু জন্ম নিচ্ছে কম ওজনে । সূত্র : বাংলাদেশের খবর
বার্তা
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:৪০ পিএম,২৩ এপ্রিল ২০১৮,সোমবার
এজি