এক মাস পর আজ খোলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কোভিড-১৯ এর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এক মাস বন্ধ থাকার পর আজ খোলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণ হ্রাস এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় আসায় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষামন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সরাসরি পাঠদান শুরু হচ্ছে। তবে আরও কিছুদিন বন্ধ থাকছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০টি নির্দেশনা দিয়েছে।

এ দিকে স্কুল কলেজ খুললেও এখনই সব শিক্ষার্থী সশরীরে ক্লাস করতে পারবেন না। শুধু যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন তারাই শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকতে পারছেন। বাকিরা অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাসে অংশ নেবেন। প্রথম দফায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে। ২ মার্চ থেকে খুলবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

নির্দেশনায় বলা হয়- কোডিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ধুয়ে-মুছে ও পরিষ্কার করা হয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানে এই প্রস্তুতি বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি শহরের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে বলে জানিয়েছেন যুগান্তর প্রতিনিধিরা। মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় বিশেষ করে উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে শতভাগ তদারকি করেনি বলে অভিযোগ এসেছে।

রোববার রাতে মাউশির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার লক্ষ্যে অনুসরণীয় নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সব শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ; পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন বা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে পাঠদান ও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখা; ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশ ও প্রস্থানপথ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা এবং একটি প্রবেশ বা প্রস্থানের পথ থাকলে সে ক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশ ও প্রস্থানের পথের ব্যবস্থা করা; প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করা।

এতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান ও বাসা থেকে আসা-যাওয়া করবে, সে বিষয়ে তাদের অবহিত করা; প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসাবে প্রস্তুত রাখা; সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ ও আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা; প্রতিষ্ঠানের সব ‘ওয়াশ রুম’ নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা; শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কারও প্রবেশ, অবস্থান ও প্রস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করা।

নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে-শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এবং অন্যদের সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করা; প্রতিষ্ঠানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা; শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা। খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা; প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করা; স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করার ব্যবস্থা করা এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রথম বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ক্লাস শুরু হয়। পরে ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে গেলে ২১ জানুয়ারি স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়।

Share