আজ উদ্বোধন হচ্ছে ১৬৪ সেতু ও ওভারপাস

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের আওতায় নির্মিত ১৫০টি সেতু ও বিভিন্ন মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাস আজ উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কেওয়াটখালি সেতু ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ডিটিসিএ ভবন, বিআরটিএর স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র, বিআরটিসির বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন তিনি। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন।

চালু হতে যাওয়া ১৫০টি সেতু ও বিভিন্ন মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাস বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা তৈরি করবে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সেতুগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর বলছে, সেতুগুলো ও ওভারপাস প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও সময় সাশ্রয়ী করবে।

১৫০টি সেতু ও বিভিন্ন মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যোগাযোগের যে মেগা প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলোর সুযোগ সুবিধা কিন্তু আমরা এরই মধ্যে পাওয়া শুরু করেছি। ১৫০টি সেতুর মধ্যে কিছু সেতু নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে এবং কিছু সেতু নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুগুলো আমাদের সীমান্তবর্তী এবং প্রান্তিক যে জনগোষ্ঠী আছে, তাদের যাতায়াতের বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এটাকে আমি অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখি। এতে করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবে। আমাদের জিডিপি যদি বাড়াতে হয়, তবে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে একটা ভালো যাতায়াতের সুবিধা দেওয়ার জরুরি। কারণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যদি একটি দ্রুতগতির যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে আনতে পারি তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ হবে। এর ফলে জিডিপিতে বড় একটা কন্ট্রিবিউশনের সুযোগ হবে।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কের পাশে থাকা হাট বাজার ও রেলওয়ে ক্রসিংগুলোর জন্য সরাসরি চলাচল করা যানবাহনগুলোকে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। নতুন ১৪টি ওভারপাসগুলো তৈরি করার ফলে একটা নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। এই ওভারপাসগুলো করিডোর ভিত্তিক যে উন্নয়ন এবং করিডোরের যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সেই সুবিধা তৈরি হবে।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্রিজ ছিল না অথবা কোথাও ছোট ব্রিজ ছিল, সেখানে এবং সেগুলো বড় আকারে তৈরি হয়েছে। এগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও সময় সাশ্রয়ী করবে।

এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান সূচি থেকে জানা গেছে, সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হবেন। এরপর তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধন ও বৃক্ষরোপণ করবেন।

এরপর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। তারপর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যাবলী সম্পর্কে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হবে। পরে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো ও আর্থিক সহায়তা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপনা করবেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী।

এরপর বক্তব্য রাখবেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

পরে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সহায়তা প্রদান করা হবে। ১২টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করবেন এবং দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ ও উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করবেন এবং মোনাজাতে অংশ নেবেন।

উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে— ১৫০টি সেতু ও বিভিন্ন মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাস; ময়মনসিংহ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কেওয়াটখালি সেতু ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন; ডিটিসিএ ভবন; বিআরটিএ’র স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র, বিআরটিসি’র ময়মনসিংহ বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আজ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১৫০টি নতুন সেতু ও ১৪টি ওভারপাস। দেশের ৮টি বিভাগে মোট ৩৯টি জেলায় এ সকল সেতু ও ওভারপাসের অবস্থান। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছে ৪০টি সেতু, ঢাকা বিভাগে ৩২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭টি ও রাজশাহী বিভাগে ২২টি সেতু। এছাড়াও খুলনা বিভাগে রয়েছে ১২টি সেতু, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে রয়েছে ৮টি করে সেতু এবং সিলেট বিভাগে উদ্বোধন হচ্ছে একটি সেতু। এ ১৫০টি সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৪৫ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের যানজট নিরসনে ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কসহ (এন-৫) বেশ কয়েকটি মহাসড়কে নির্মিত ১৪টি ওভারপাসের মধ্যে ৮টি অবস্থিত রাজশাহী বিভাগে আর ৬টির অবস্থান রংপুর বিভাগে। এ ১৪টি ওভারপাসের মোট দৈর্ঘ্য ৬৮৯ মিটার।

টাইমস ডেস্ক/১৯ অক্টোবর ২০২৩

Share