শাহরাস্তি

শাহরাস্তিতে বোনকে আগুন পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা : এমপির তত্ত্ববধানে চিকিৎসা

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে আপন বোন মিরোজা বেগম (৫৫) কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শাহরাস্তি থানায় মামলা দায়ের করেছে ভূক্ত ভোগীর একমাত্র মেয়ে খাদিজা আক্তার।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শনিবার ৪ জুলাই বিকেলে শাহরাস্তি থানার সামনে পড়ে আছে দূর্বল দেহ সামর্থহীন আগুনে ঝলসে যাওয়া ভিখারীনি মীরুজা বেগম (৫৫)। চিকিৎসার সামর্থ নেই বলে পাশে বসে কাঁদছে একমাত্র কন্যা খাদিজা। অফিসার ইনচার্জ খবর নিয়ে জানতে পারেন ২০ দিন আগে সম্পত্তিগত বিরোধে নিজের ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা আগুনে ঝলসে দিয়েছে ভিকটিমের শরীর। ঘটনা অবগত হয়ে তাৎক্ষনিক ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে নগদ ২০ হাজার টাকা পাঠান চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।

সন্ধ্যায় এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উঘারিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ আবদুর রশিদ চৌকিদার (৫৬) নামে ১ জনকে আটক করে।

জানা যায়, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের চান্দল গ্রামের মৃত ইউনুছ চৌকিদারের মেয়ে মীরুজা বেগমের ৩০ বছর আগে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাতপুকুরিয়া গ্রামের মোস্তফার সাথে বিবাহ হয়। স্বামী অন্যত্র বিবাহ করে মীরুজাকে তাড়িয়ে দিলে পিত্রালয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে থেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতেন তিনি। একমাত্র পুত্র শারিরীক প্রতিবন্ধী, অনেক কষ্টে বিবাহ দেয়া মেয়েটিও আজ বিধবা। এমতাবস্থায় পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করায় ২০ দিন আগে ভিখারীনি মীরুজা বেগমের দেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে ভাই আঃ রশিদ চৌকিদার, অপর ভাই আইয়ুব আলী, ভাইয়ের ছেলে আঃ মজিদ ও রুবেল এমন অভিযোগ তার কন্যা খাদিজা বেগমের।

শরীরের বিভিন্ন স্থান মারাত্মক ভাবে দগ্ধ হওয়ায় তাকে রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বেরনাইয়া বাজারস্থ শাহ্ শরীফ হাসপাতালের সামনে রেখে চলে যায় ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা। পরদিন খবর পেয়ে সেখান থেকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন খাদিজা। সেখানে ভিকটিমের অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। চিকিৎসার অর্থের সংস্থান করতে না পেরে খাদিজা মাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে ভাড়ার টাকা ফুরিয়ে গেলে থানার সামনে সিএনজি হতে ভিকটিমকে নিয়ে নেমে পড়েন।

সেখানে শনিবার দুপুরে মুমুর্ষু মীরুজাকে শাহরাস্তি থানা ফটকের অদূরে একটি দোকানের সামনে শুইয়ে দেন তিনি। ঘটনা অবগত হয়েই থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ্ আলম ভিকটিমকে শাহরাস্তি হাসপাতালে পাঠান। আগুনে তার শরীরের অনেকাংশ পুড়ে দীর্ঘদিনের চিকিৎসাহীনতায় জীবনের শংকা থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে পাঠানোর পরামর্শ দেন। এ ঘটনা অবগত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার, চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তারের মাধ্যমে ভিকটিমের চিকিৎসার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা পাঠান। বিকেলের মধ্যেই সংসদ সদস্যের পক্ষ হতে একজন প্রতিনিধির এম্বুল্যান্স যোগে ঢামেক বার্ণ ইউনিটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় ভিকটিমকে।

শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ্ আলম জানান, থানার সামনে দোকানের পাশে আগুনে পোড়া রোগীর খোঁজ নিতে গেলে তার মেয়ে খাদিজা জানায়, ভিকটম স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ায় বাবার বাড়িতে থাকতেন। সেখানে তার ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা গ্যাস লাইট বা দিয়াশলাই দিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় যাতে সে তার বাবার সম্পত্তি দাবি করতে না পারে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয় অবগত হলে তিনি এম্বুল্যান্স ও নগদ ২০ হাজার পাঠিয়ে ভিকটিমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ভিকটিমকে বিকেলেই ঢামেক বার্ণ ইউনিটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যপারে ভিকটিমের মেয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একজনকে আটক করা হয়েছে।

প্রতিবেদক : জামাল হোসেন, ৫ জুন ২০২০

Share