চাঁদপুর জেলা করোনা বিষয়ক প্রতিরোধ কমিটির মুলতবি সভা গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরাবরের ন্যায় জুম অ্যাপস্-এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডঃ নূরুল আমিন রুহুল অংশ নেন। জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠিত সভায় চাঁদপুর জেলায় বর্তমানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাসহ জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এসব সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। সিভিল সার্জনের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের পরই সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত হচ্ছে : যেসব বাসা-বাড়িতে করোনা আক্রান্ত রোগী থাকবে, সেসব বাসা শতভাগ লকডাউন অবস্থায় থাকবে। শহরের ক্ষেত্রে শুধু আক্রান্ত বাড়ি আর গ্রামের ক্ষেত্রে আক্রান্ত বাড়িসহ এর আশপাশের চারটি বাড়ি লকডাউন করা হবে। আর এটি নিশ্চিত করার জন্যে পূর্বের সকল ব্যবস্থা তো বহাল থাকবেই। এর সাথে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে পৌরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। এ কমিটি নিজ নিজ এলাকার আক্রান্ত বাসা-বাড়ির লকডাউন নিশ্চিত করবে। ওইসব বাসা থেকে যদি কেউ বের হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ কঠোর অবস্থানেও যাতে না যেতে হয় সে জন্যে আগ থেকেই ওইসব কমিটি তৎপর থেকে সকলকে সতর্ক করবে।
সভায় সিভিল সার্জন জানান, চাঁদপুর জেলায় বর্তমানে ৩০১ জন রোগী রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৮ জন। এই ৯৮ জনের মধ্যে ৯৪ জন হচ্ছেন চাঁদপুর পৌর এলাকায়। পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের ৪৩টি স্পটে এই ৯৪ জন রোগীর অবস্থান। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে যদি ১০ জন করোনা রোগী থাকে, তাও সেটি ১৪ দিনের মধ্যে হতে হবে, তখন সে এলাকা রেড জোনের আওতায় পড়বে।
অথবা আগে যা ছিলো তার দ্বিগুণ বেড়ে গেলে সে এলাকা রেড জোনের আওতায় আসবে, অন্যথায় নয়। সে আলোকে আমরা রোগীদের অবস্থান ধরে ধরে যেভাবে এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছি, তাতে দেখা যাচ্ছে যে চাঁদপুরের কোনো এলাকাই রেড জোনের আওতায় পড়ে না। সিভিল সার্জনের এসব তথ্য এবং ব্যাখ্যার আলোকেই ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার পৌর এলাকায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয় এবং এসব এলাকায় ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিরা সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে সভায় বলা হয়।
এদিকে
সিভিল সার্জন শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চাঁদপুর থেকে ঢাকায় যে সব স্যাম্পল পাঠানো হয় তার অর্ধেক চলে যায় আগারগাঁও। সেখানে যে স্যাম্পলগুলো যায়, সেগুলোর রিপোর্ট আসতে সপ্তাহখানেকের বেশি সময়ও লেগে যায়। যার কারণে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। এ বিষয়ে মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেন সিভিল সার্জন।
সভায় আলোচনায় আরো অংশ নেন পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক মোঃ আজিজুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ওচমান গণি পাটওয়ারী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল,
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়–য়াসহ অন্যান্য ইউএনও, মতলব পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন লিটন ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ১৪ জুন ২০২০