‘আমিও পারি উন্নত দেশগুলোর মতো আধুনিক প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন ড্রোন ও প্লেন বানাতে। আর তা ব্যবহার করা যেতে পারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিকাজে। তবে সে জন্য প্রয়োজন সহযোগিতা।’
গোপালগঞ্জের খুদে উদ্ভাবক আরমানুল ইসলাম বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলল কথাগুলো। কাশিয়ানী উপজেলার পুইশুর ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামের কলেজপড়ুয়া এই কিশোর সম্প্রতি উড়োজাহাজ তৈরি করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
আরমানুল কাশিয়ানীর রামদিয়া এসকে কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। হাফিজুর রহমান সমাদ্দারের একমাত্র সন্তান। তিনি বাগেরহাটের মোংলায় ব্র্যাক এনজিওতে ক্রেডিট প্রগ্রামে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আরমানুলের ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক বৈজ্ঞানিক নানা উদ্ভাবনীর দিকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে নানামুখী উদ্ভাবনী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ। এই খুদে উদ্ভাবক বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল প্লেন বানানোর। তখন থেকেই সোলা দিয়ে ছোট ছোট প্লেন বানিয়ে উড়ানোর চেষ্টা করেছি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই সত্যিকারের একটি প্লেন বানাব বলে মনস্থির করি। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে হয়ে ওঠেনি।’
‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার আগ্রহ দেখে পরিবার আমাকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দেয়। এর বড় অংশই দেন তার দাদু (দাদি) হাফিজা বেগম। বাকি টাকা দেন বাবা এবং আমার উদ্ভাবন-সহযোগী সিতারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাসিয়া আকতারের বাবা এনামুল হক। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে কাজ শুরু করি। অবশেষে জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে ওড়ে আমার তৈরি প্লেন। এটি প্রায় ১৫ মিনিট আকাশে ওড়ে।’
আরমানুল জানায়, তার তৈরি প্লেনটির ওজন ৮০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৩৬ ইঞ্চি এবং পাখা ৫০ ইঞ্চি। প্লেনটিতে ব্র্যাশ লেস ডিসি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইলেকট্রিক স্পিড কন্ট্রোলের সঙ্গে আরো চারটি সার্বো মোটর লাগানো হয়েছে। ইলেকট্রিক স্পিড কন্ট্রোল মূল মোটরকে নিয়ন্ত্রণ করে। সার্বো মোটর এলোরন এলিভেটর ও রাডার কন্ট্রোল করে। প্লেনটিতে সিক্স চ্যানেলের একটি প্রগ্রামেবল রিমোট সংযোজন করা হয়েছে। এটি বর্তমানে দেড় কিলোমিটার রেঞ্জে চলতে পারে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর রেঞ্জ বাড়ানো সম্ভব। আরমানুলের উদ্ভাবন-সহযোগী জাসিয়া আকতার বলে, ‘আরমানুল ভাইয়ার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে আমি তার কাজে সহায়তা করেছি। আর সবশেষে প্লেন আকাশে ওড়ার পর আমার খুব ভালো লাগছে।’
আরমানুলের মা রেহানা পারভীন বলেন, ‘নিত্যনতুন কিছু তৈরি করার ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই ছেলের ঝোঁক রয়েছে। স্কুল জীবনে সে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞানমেলায় প্লেনসহ নানা কিছু উদ্ভাবন করেছে। তাতে পুরস্কারও পেয়েছে। গত নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে প্লেন বানানোর বিভিন্ন জিনিস কিনে আনে। পরে বাড়িতে বসে প্লেনটি বানায়। এখন সরকারের তরফ থেকে এগিয়ে এলে ওর উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নিত্যানন্দ রায় বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারলাম ছেলেটি একটি প্লেন বানাতে চায় তখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে কলেজের পক্ষ থেকে সম্ভব সব সহযোগিতা করা হয়েছে। ওর এই উদ্ভাবনে আমরা গর্বিত।’ (কালের কণ্ঠ)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭ : ০৫ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার
এএস
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur