রাজনীতি

আওয়ামী লীগে কৌশলে ঢুকছে ‘কাউয়া’

আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া মিলছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই কোটি সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে এ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষক-আইনজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিপুল উত্সাহের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সদস্য হচ্ছেন। তবে জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক জেলায় তা মানা হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাত্তরে পাক বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির কর্মকর্তা ও তাদের সন্তান-স্বজনরাসহ জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধীরা নতুন সদস্য সংগ্রহের এই অভিযানে নানা কৌশলে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছেন। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ‘কাউয়া’ অনুপ্রবেশ।

নির্বাচনের বছরে দলে আসা সুযোগ সন্ধানী চিহ্নিত এসব স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সোচ্চার হওয়া শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই নানাভাবে দলের অন্তপ্রাণ কর্মীরা তাদের মনোভাব প্রকাশ করছেন। তবে ক্ষোভ প্রকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে আপাতত নিজেদের পরিচয় গোপন করছেন তারা।

জানা গেছে, অতীতেও ক্ষমতাসীন দলে নতুন নেতা-কর্মীর অভাব ছিল না। রাজনৈতিক ময়দানে ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অবস্থান দৃশ্যত শক্তিশালী। তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এই পরিস্থিতিতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সতর্কতার পরেও স্বাধীনতাবিরোধীদের আওয়ামী লীগে নিয়ে আসার প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দল ভারী করতে তাদের নিয়ে আসছে এক শ্রেণির নেতা। আবার অনেক ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেনও হচ্ছে। নাশকতা, গাড়িতে পেট্রল বোমা নিক্ষেপসহ একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও কোনো কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগের সদস্য হচ্ছেন। বিষয়টি তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না।

আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান কর্মসূচি গত ২০ মে উদ্বোধন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের সদস্যপদ নবায়নের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন শাখায় প্রায় দুই কোটি সদস্য ফরম বিতরণ করা হয়েছে। তবে নতুন সদস্য সংগ্রহের তথ্য কেন্দ্রে জমা হয়নি। নতুন সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবার তরুণ এবং নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে, প্রতিদিন দলীয় কার্যালয় থেকে ফরম নিয়ে যাচ্ছেন মহানগর-জেলা-উপজেলার নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ১৫টি টিম বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে এ কার্যক্রমে গতি বাড়াচ্ছেন। দুই কোটির মধ্যে রাজধানীতেই ২৫ লাখ সদস্য সংগ্রহের টার্গেট রয়েছে। ১/১১ সরকারের সময় কারাবন্দি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ গণস্বাক্ষরকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজধানীতেই ২৫ লাখ নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার টার্গেট রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি এ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। এখন থেকে প্রতিবছর নতুন সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত তা কেউ বলতে পারছেন না। দলের দফতর এবং প্রচার সেলের নেতাদের পাশাপাশি শীর্ষ নেতারাও এর সঠিক সংখ্যা জানেন না। তারা বলছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটা সেন্টার না থাকায় নির্দিষ্ট করে সদস্য সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। তবে দফতর বিভাগের সূত্র মতে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড-ইউনিট কমিটি ও দলের সব শাখার প্রাথমিক সদস্য মিলিয়ে এ সংখ্যা তিন কোটি হতে পারে। আর এবার নতুন দুই কোটি সদস্য হলে মোট ৫ কোটি হবে আওয়ামী লীগের সদস্য।

নতুন সদস্য পদ অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী এবং জামায়াত পরিবারের সন্তানরা যেন ঢুকে না পড়ে সেজন্য জেলা-মহানগর, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন নেতাদের সতর্ক থাকতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা হবে, নির্বাচনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করা সম্ভব হবে। তবে স্বাধীনতাবিরোধীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে কেন্দ্রের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।(ইত্তেফাক)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০: ১০ এ.এম ৯মার্চ,২০১৮শুক্রবার
কে এইচ

Share