আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা করেছে : মনিারুল হক চৌধুরী

কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের কুমিল্লা মডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে, এ ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করা হয়েছে দুই পক্ষ থেকে। শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির বর্ধিতসভা ও আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল ঘিরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থায়ীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব ঘোষিত বিএনপির প্রতিনিধি সভায় দুর্বৃত্তরা গুলি করে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা উত্তড্ডা গ্রামের মনির হোসেনের মাথায় ও যুবদল নেতা উন্দানিয়া গ্রামের ফিরোজের পায়ে গুলি লাগে। গুরুতর অবস্থায় তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে হামলার সময় উন্দানিয়া গ্রামে বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন। লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা বিকেলে শান্তি মিছিল করছিলাম। বিএনপির নেতাকর্মীরা হঠাৎ আমাদের মিছিলে গুলি করে। এতে আমাদের ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ বিষয় আমরা মামলা করব।’

শনিবার বিকেল তিনটায় উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের বাড়িতে কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল। বেলা দুইটার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াতউল্লাহর নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৪০ থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মী গৈয়ারভাঙা বাজারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গৈয়ারভাঙা বাজারে মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উন্দানিয়া গ্রামে গিয়ে বিএনপির সভাস্থলের মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন এবং বিএনপির নেতা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে লুটপাট চালান। এ সময় আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি করে পালাতে থাকেন। একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা গুলি চালায়। এতে মনির হোসেন নামের বিএনপির এক কর্মীর মাথায় গুলি লাগে। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ খানের পায়ে ও পেটে গুলি লাগে। এ ছাড়া অন্তত: ১৫-২০ জন আহত হন।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিারুল হক চৌধুরী জানান, বেলঘর উত্তরে আমাদের একটি প্রতিনিধি সভা ছিল। বিকেল ৪টার দিকে আমার সেখানে যাবার কথা। এর আগেই শুনি দুপুর ২টা থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন সেখানে মহড়া দিচ্ছে। তারা লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ও সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ারের লোকজন। বাগমারা থেকে তাদের ভাড়া করে আনা হয়। ২টার পর তারা প্রতিনিধি সভায় ভাঙচুর ও গুলি চালায়।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান বলেন, ‘ আমরা কোনো হামলা করিনি । বিএনপির লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে। আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।’

কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘একজনের পায়ে ও হাতে এবং আরেকজনের মাথায় ছররা গুলি লেগেছে। ওরা এখন আশঙ্কামুক্ত।’

লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘একই এলাকায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিবেশ শান্ত করে। পরিবেশ এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’

প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২৬ আগস্ট ২০২৩

Share