কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ইস্যু করে বার বার সম্পূর্ণ বিনা উস্কানীতে ছাত্রলীগের দুস্কৃতিকারীরা চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের রাজনৈতিক কার্যালয় ও বাস ভবনে হামলা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। গত ০৪ আগস্ট প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় লুটপাটকারীরা তার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তার বাস ভবনের কোন কিছুই আর অবশিষ্ট রাখেনি বলেন জানান স্থানীয়রা। তারা বলেন, এক এক করে সব কিছু খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। শেষ পর্যন্ত তার টিনশেড বিশাল সভাকক্ষ এবং বাসবনে অগ্নি সংযোগ করে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে।
অপরদিকে শুধুমাত্র বিএনপি নেতা হওয়ার কারণে এবং নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সব সময় সার্বিক সহযোগীতা করার কারণে চাঁদপুর জেলা বিএনপির প্রচার-প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জুয়েলের বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বার বার হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায় ছাত্রলীগও যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুই দফা হামলায় তার বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তরা। অভিযোগে প্রকাশ গত ৪ আগস্ট রোববার আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিপুল পরিমান পুলিশের উপস্থিতিতে তারা সর্বশেষ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তছনছ করে দেয়। এর আগেও আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ইব্রাহীম জুয়েলকে টার্গেট করে বিগত ১৭ বছরের মধ্যে বহুবার হামলা ও লুটপাটের শিকারে পরিনত করে তার বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে।
অপরদিকে কাজী ইব্রাহীম জুয়েল চাঁদপুরের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হওয়ায় তার ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক ও ওয়াইফাই ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে শহরের বিভিন্ন এলাকার তার অধিকাংশ ডিস ক্যাবল এলাকা ও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক জোর করে দখল করে নেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তরা। তিনি ঐ দুর্বৃত্তদের কারণে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সমুক্ষিন হন। বর্তমানে তার সেই ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে বার বার তার বসতবাড়ী ও আবাসিক হোটেল, পত্রিকা কার্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালালে তিনি অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তিনি এব্যাপারে বার বার পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়েও পাননি। তিনি বার বার তার পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা চেয়েও কোন প্রতিকার পাননি। নিরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিলো না বলে তিনি ও তার পরিবার সূত্র জানা যায়।
এরমধ্যে গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চুড়ান্ত হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। প্রায় আধঘন্টা ধরে চলা ঐ সংঘবদ্ধ হামলায় ৩ জন গুরুতর জখমসহ ৫ জনকে আহত করা হয়।
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ঐদিনের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয় মাসুদুর রহমান কাজী, মিজানুর রহমান গাজী ও কাজী মনিরুজ্জামান পিন্টুসহ আরো অনেককে। আহত তিনজনের অবস্থা ছিলো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ঐসময় বাসাবাড়ীতে অবস্থান করা কাজী ইব্রাহীম জুয়েলের স্ত্রী ও সন্তারাও আহত হয় বলে জানা যায়। হামলাকারীরা এসময় বাসাবাড়ী থেকে মোবাইল, স্বর্ণের চেইন, নগত অর্থসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ঐদিন দুস্কৃতিকারীরা দৈনিক চাঁদপুর সময় ও চাঁদপুর টাইমস কার্যালয়, ইন্টারনেট ও ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক সার্ভিস অফিস, সিসিটিভি ক্যামেরা, আবাসিক হোটেল, ইলেক্ট্রনিক্স শোরুম, মেডিসিনের দোকান, হার্ডওয়ার ও স্যানিটারি শোরুমসহ বাসা বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ঐদিনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, কোন কারণ ছাড়া ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় চাঁদপুর পুলিশ সার্কেল কার্যালয়ের নিকটে কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জুয়েলের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে লুটপাট করেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান। এক পর্যায়ে তারা হামলা ও ভাংচুরের আলামত মুছে ফেলতে সেখানে লাগানো প্রায় ১০/১২টি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জুয়েল বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের দোহাই দিয়ে তারা আমার এতোবড়ো ক্ষতি করলো। আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য দেশের জন্য। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি করলেই হামলার শিকার হতে হবে এবং হারাতে হবে ব্যবসা বানিজ্য এটা কেমন বিচার? বিএনপিতো এমন ধ্বংসাত্ম কাজ কখনো করে না। আমরাও ক্ষমতায় ছিলাম কিন্তু আমরা কখনো আওয়ামী লীগের কোন একটি মানুষের ক্ষতি করিনি। তারা আমাকে বার বার টার্গেট করে কেন হামলা চালায়? এমন প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরে আমার যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ক্যালকুলেটরে হিসেব করে বলা যাবে না। এর কারণ একটাই আর তা হলো, আমি বিএনপি করি, আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াই। এছাড়া আমার আর কোন অপরাধ নেই। আমি বলেছি বিএনপি করে যদি আমার জীবন চলে যায় তাতেও আমি প্রস্তুত আছি। আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, আপসহীন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তরুন প্রজন্মের আইকন তারেক রহমানের রাজনীতিতে উদবুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে এসেছি। এজন্য যদি আমার সর্বস্ব চলে যায় তাতেও আমার কোন দুঃখ নেই। এটাই আমার শেষ কথা।’
অপর দিকে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, কোন কারণ ছাড়াই বিনা উস্কানীতে বার বার তাঁর উপর এবং আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হামলা, ভাংচুর করেছে তা আমরা এলাকাবাসী হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত ঘৃণিত ও লজ্জাস্কর।
কাজী ইব্রাহীম সাংবাদিদের আরো বলেন, ‘বার বার হামলায় আমার আত্মীয় স্বজনসহ এখানকার অসংখ্য স্টাফ ও আমার দলের কর্মীদেরকে আহত করেছে। আমি ঐসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আমার উপর ১৭ বছর ধরে চলে আসা জুলুল ও নির্যাতনের বিচার চাই।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক এবং পৌর বিএনপি সভাপতি আক্তার হোসেন মাঝিসহ বিএনপির অনেক নেতা সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন সময়ে সরকার দলীয়রা বিএনপি এই নেতার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঐসব হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটেরর তীব্র নিন্দা জানিয়ে উপযুক্ত বিচার চেয়েছেন। কিন্তু কেউ তাদের কথায় কোন কর্ণপাত করেনি।
এদিকে এলাকার সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের বলেন, ইব্রাহীম জুয়েল বিএনপির নেতা হওয়ার কারণেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষ ছাত্রলীগের টার্গেটে পরিনত হয়েছে। তারা টার্গেট করে ভিন্নমতের ব্যাবসায়ীদের বাসাবাড়ি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এভাবেই ক্ষয়ক্ষতি করেছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ঐ সময় আশপাশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও লুটপাট করে বলেন অনেকে অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষ দাবী করেন অবিলম্বে হামলা ও লুটপাটও অগ্নিসংযোগকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এদিকে উক্ত ঘটনায় সমূহেরর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ৮ আগস্ট ২০২৪