মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইএস অপবাদ দিয়ে মুজিবুর রহমান (৪৩) নামের এক নিরীহ বাংলাদেশিকে গণপিটুনি দিয়েছে কিছু বখাটে কিশোর। নিউইয়র্ক সিটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্রংকস উপশহরের পার্কচেস্টারে গত ১৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। খবর সিবিএস নিউইয়র্ক ও ডেইলি নিউজের।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ঘটনার দিন স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওয়াসটন এবং পাগসলে অ্যাভিনিউয়ের একটি পাবলিক স্কুলের ছাত্রী ও নিজের ৯ বছর বয়সী ভাগনিকে ক্লাস শেষে সঙ্গে নেন মুজিব। এরপর তাদের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন।
এমন সময় দুইজন কিশোর পেছন থেকে এসে আইএস আইএস বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপর আরো বেশ কয়েকজনসহ তারা রহমানকে পেটাতে পেটাতে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলেও তাকে নির্মমভাবে পেটায় এবং লথি দিতে থাকে।
সেদিন মুজিবুর রহমানের পরনে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিলো। ঘটনার দিন থেকেই পুলিশ আক্রমণকারীদের হন্যে হয়ে খুঁজছে।
এদিকে ব্রংকস এর প্রেসিডেন্ট রুবেন ডিয়াজ জুনিয়র মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পার্কচেস্টারে যান। তিনি কড়া ভাষায় আক্রমণকারীদের তিরস্কার করেন। তাদের কাপুরুষ এবং মূর্খ বলেও অভিহিত করেন।
ঘটনাস্থলের সন্নিকটে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কাপুরষরাই এমনটা করতে পারে। তারা হয়তো বা নিজেদের শক্তিশালী ভেবেছে। ভেবেছে এমন জঘন্য কাজের মধ্যে কৃতিত্ব আছে! ওরা বড়ই মন্দকাজ করেছে। ওরা কাপুরুষ আর সবকটি মূর্খ-বেকুব।
ডিয়াজ ওইসকল রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন যারা গত ১৫ জানুয়ারি মুজিবুর রহমানের উপর নির্যাতনের ঘটনার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দুর্বৃত্তদের কড়া সমালোচনা করেছেন।
এদিকে সরকারি আইনজীবী অ্যাডভোকেট টিস জেমস বলেন, আমি সবার উদ্দেশে বলতে চাই ব্রংকস তথা নিউইয়র্ক সিটির যেকোনো স্থানে ‘ঘৃণা’ গ্রহণযোগ্য হবে না। আর যে কেউ এ জাতীয় কাজে লিপ্ত হবে তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে নির্যাতনের শিকার মুজিবুর রহমানের পাশে দাঁড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির সদস্যরাও। তারা ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ করেছে। মুসলিম কমিউনিটির নেতা মোহাম্মদ মজুমদার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রয়োজন হলে এফবিআই এর সাহায্য চেয়েছেন।
অপরদিকে ঘটনা সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যদাতাকে আড়াই হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
নির্মমতার শিকার মুজিবুর রহমান এখনো সুস্থ হননি। ইংরেজি জানেন না তিনি। দোভাষীর মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিরীহ এ বাংলাদেশি বলেন, আমি এখনো ভালো করে খেতে পারি না। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সারা শরীর ব্যথা করছে। এমন ঘটনা মুসলিম আর অমুসলিম যার ক্ষেত্রেই হোক না কেন ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
তিনি আরো বলেন, আমি হামলার শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত আইএস সম্পর্কে জানতামই না। তারা কোন কারণে হামলা চালায় তাও বুঝতে পারিনি।