সারাদেশ

অস্ত্র পাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর

মাদক প্রতিরোধে শিগগরিই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের অস্ত্র দেয়া হবে। বর্তমানে অস্ত্রের ধরন,সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো কমিটির মাধ্যমে যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামি একমাসের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলেই এ সংস্থাকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়ে আর কোনও বাধা থাকবে না।

জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে সুরক্ষা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আবদুর রউফ মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এর পরই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এ বিষয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ সংক্রান্ত একটি রেজ্যুলেশনে স্বাক্ষর করেন। তার আগে বছরের ২৭ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভা হয়। ওই সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন,স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম,পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নান,শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি,মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, মানসের সভাপতি ডা. অরুপ রতন চৌধুরী,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন ছাড়া সবাই এই অধিদফতরের সদস্যদের অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সরাসরি মত দেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অস্ত্রধারী অনেক বাহিনী রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে এ রকম অস্ত্রে সজ্জিত আরেকটি বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা ভাবতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর এমন বাহিনী/সংস্থার কাছে অস্ত্র রয়েছে কিনা তাও ভাবতে হবে।’

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই সভার অনুমোদিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সুরক্ষা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আবদুর রউফ মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপরই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এ বিষয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র চেয়ে আসছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিরস্ত্র এই বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রধারী মাদক কারবারিদের কাছ থেকে রিভলবার ১৩টি, পিস্তল ৫৭টি, শর্টগান একটি, পাইপগান একটি, এয়ারগ্যান চারটি, ম্যাগজিন ২৩টি এবং ৬৪৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করতে হচ্ছে। তাই এই বাহিনী অস্ত্র চায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী একমাসের মধ্যেই অস্ত্রের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন কমিটি প্রদান করবে। ইতোমধ্যে কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী চার মাসের মধ্যেই জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকেই অস্ত্রের বিষয়ে দেওয়া কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর সিদ্ধান্ত হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সাংগঠনির কাঠামো অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে সরাসরি ইনফোর্সমেন্ট কাজের জন্য এক হাজার ৮০০ জনবলের মঞ্জুরি রয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার এ সংস্থার মাঠপর্যায়ের কর্মীদের অস্ত্রের প্রয়োজানীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন,‘মাঠপর্যায়ে কর্মরত নিরস্ত্র কর্মীবাহিনী মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি অনেক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক কর্মীকে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকে। তাই এ প্রস্তাবটি সরকারের ভেবে দেখা উচিত।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মূলত সিপাহী,এসআই ও ইন্সপেক্টরদের অস্ত্র দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করেছে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ , ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১,

Share