অস্তিত্ব সংকটে ডাকাতিয়া নদী

নদীর নাম ডাকাতিয়া। তবে কেন এ নাম, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের যেন শেষ নেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একটা সময় ডাকাতিয়া নদী ছিলো তীব্র খরস্রোতা। দক্ষিণ কুমিল্লা-লাকসাম-চাঁদপুর হয়ে যে নদী মিলেছে রাক্ষসী মেঘনায়। আর মেঘনার মতোই উত্তাল ছিল তার স্বভাব-চলন। ফলে ওই সময়ে ডাকাতিয়ার করাল গ্রাসে নদীর দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। জীবন বাঁচাতে ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিলসমাধিও হয়েছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলে এর নামকরণ হয় ‘ডাকাতিয়া’ নদী।

তবে ১৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটির প্রস্থ এখন আর আগের মতো নেই। দখলদার আর বালু ব্যবসায়ীদের রমরমা বাণিজ্যে হারিয়ে যাচ্ছে নদীর অস্তিত্ব। অবৈধ দখল, অভ্যন্তরীণ বর্জ্য ও বর্ষায় ভেসে আসা পলিতে নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠেছে। কয়েক স্থানে ড্রেজিং করা হলেও বালু ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ বা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো পদক্ষেপ।

গত দুই দশক আগেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় নৌপথে পণ্য ও কৃষি মালামাল পরিবহনে এ নদীটির ভূমিকা ছিল অনেক। কিন্তু এখন ইঞ্জিনচালিত নৌযান দিয়ে পণ্য পরিবহন হলেও বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে সমস্যা বেশি সৃষ্টি হয়। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ইচুলী নৌ-রুটের লঞ্চ চলাচল

তবে নদীর চাঁদপুর অংশে অবৈধ দখল উচ্ছেদে তালিকা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের তিন নদীর মোহনা থেকে শুরু করে ইচলী, সদরের বাগাদী, মৈশাদী, শাহমাহমুদপুর, রামপুর; ফরিদগঞ্জের বালিথুবা, সুবিদপুর; হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার বাজারকেন্দ্রিক ডাকাতিয়া নদীতে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে এখন বালু ব্যবসায়ীরা নদীর অংশ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

শহরের ঢালীঘাট এলাকায় নদী দখল করে স্থাপিত হয়েছে অবৈধ জাহাজ মেরামতের ডকইয়ার্ড এবং বেশ কয়েকটি বালুমহাল। সদরের বাগাদী নিজগাছতলা ব্রিজসংলগ্ন, রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর বাজার এবং হাজীগঞ্জ বাজারের ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় বালুমহাল তৈরি করে নদী দখল করেছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। ফলে নদী সরু হয়ে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বালু আনলোড করার সময় বালু থেকে আরেকটা বালুর পানিতে নামে। এতে নদীর নাব্য হ্রাস পায়। 

ডাকাতিয়া পাড়ের বাসীন্দা মো. নুরুজ্জামান ও সোলাইমান গাজী জানান, ‘একসময় ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন হয়েছে নৌকায়। পরিবহন খরচও ছিল কম। এখন সড়কপথে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। ডাকাতিয়া নদী নাব্যতা হরিয়েছে, ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসতেও সমস্যা হয়। নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

বালু ব্যবসায়ী শামছুজ্জামান বলেন, ‘নদী আগের চেয়ে প্রস্থ বেশি। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে একটি সার্ভের মাধ্যমে নিশানা দেওয়া দরকার। তাহলে বালু ব্যবসায়ীদের আর বেকায়দায় পড়তে হয় না।’

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘নদীতে দূষণ হলে আমরা সে বিষয় নিয়ে কাজ করি। তবে আমাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারের তথ্য হচ্ছে, ডাকাতিয়া নদীর পানি ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। তবে অভ্যন্তরীণ বর্জ্য এ নদীতে গিয়েই পড়ে। কারণ জেলা সদর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় অধিকাংশ খাল এ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত।’

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় তিন নদীর মোহনা থেকে শুরু করে শাহরাস্তি পর্যন্ত দুই পাড়ে যেসব অবৈধ দখলদার রয়েছে, তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। পরে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। আর যারা বিআইডব্লিউটিএ’র স্থানে ব্যবসা করবেন, তাদের সরকারকে রাজস্ব দিয়েই ব্যবসা করতে হবে।’ 

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম,২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Share